'রোডস হাথুরুর মতোই স্বাধীনতা পাবেন'

বিসিবি সভাপতির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে দুপুর দেড়টার দিকে শুরু, শেষ হতে প্রায় বিকেল ৫টা। স্টিভ রোডসের লম্বা সাক্ষাৎকার-উপস্থাপনা শেষে বিসিবি কর্তাদের মুখে স্বস্তির হাসি। প্রায় আট মাস ধরে ঝুলে থাকা সমস্যাটার সমাধান অবশেষে হলো। অবশেষে মাশরাফি-সাকিবদের প্রধান কোচ পেল বিসিবি।

ইংলিশ কোচ রোডসকে কোচ হিসেবে চূড়ান্ত করতে কোন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটি আজ সংবাদমাধ্যমকে পরিষ্কার করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, ‘এটা নিয়ে আগেই কাজ করেছি আমরা। আমাদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় তিনজন ছিলেন। তিনি সেখানে ১ নম্বরে ছিলেন। গ্যারি কারস্টেন যে তালিকা দিয়েছেন, সেখানেও তাঁর নাম ছিল। যেহেতু দুই তালিকাতেই তাঁর নাম ছিল, এ কারণে তাঁকেই আমরা চূড়ান্ত করেছি। তাঁকে এখন থেকেই পাওয়া যাবে। সব দিক বিবেচনা করে মনে হয়েছে, তাঁকে নেওয়াটাই সঠিক। তিনি বাংলাদেশ দলকে অনুসরণ করেন এবং বিশ্বাস করেন যে এই দলটাকে অনেক দূর নিয়ে যাওয়া যাবে।’ রোডসকে কতটা স্বাধীনতা দেওয়া হবে, এ প্রশ্নে বিসিবি সভাপতি টানলেন সাবেক কোচ হাথুরুসিংহের কথা, ‘তিনি হাথুরুসিংহের মতোই স্বাধীনতা পাবেন। কোচ হলেন শিক্ষকের মতো। তাঁর ওপরে কথা বলার দরকার নেই। তাঁর যে সহায়তা লাগবে, তাঁকে সব দেওয়া হবে।’

আজ বিসিবি কর্তাদের সামনে নিজের প্রেজেন্টেশন দেওয়ার আগে স্টিভ রোডস। ছবি: শামসুল হক
আজ বিসিবি কর্তাদের সামনে নিজের প্রেজেন্টেশন দেওয়ার আগে স্টিভ রোডস। ছবি: শামসুল হক

প্রথমবারের মতো একটি জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে পেরে রোডস যে ভীষণ খুশি, সেটি তাঁর কথাতেই বোঝা গেল, ‘শুধু বলতে চাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমি কতটা গর্বিত। অসাধারণ এক ক্রিকেট জাতি, বাংলাদেশ দল যে সমর্থনটা পায় দুর্দান্ত। বোর্ড আমাকে যে দায়িত্বটা দিল ব্যক্তিগতভাবে অনেক বড় কাজে যুক্ত হয়েছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হওয়াটা আমার জন্য ভীষণ সম্মানের।’

ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে ১১ টেস্ট ও ৯ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। তবে ক্রিকেট-জীবনের বড় অংশই কেটেছে উস্টারশায়ারের সঙ্গে। ১৯৮৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ২০ বছর কাউন্টি দলটির হয়ে খেলা রোডস ২০০৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত উস্টারশায়ারের কোচ ও ডিরেক্টর ছিলেন। কোচিংয়ের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকলেও একটি জাতীয় দলের কোচ কখনোই ছিলেন না। রোডস অবশ্য মনে করিয়ে দিলেন, ইংল্যান্ড জাতীয় দলের সঙ্গে টুকটাক কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড যে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল, তখন ইংলিশ দলের কোচিং স্টাফের সদস্য ছিলেন তিনি।

রোডস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোচিংয়ের স্বাদ পেয়েছি। খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজটা অনেক জটিল। খেলোয়াড়দের তৈরি করা সহজ কাজ নয়। তবে মনে করি এটার জন্য আমি যোগ্য। এই দেখুন আমার চুল পেকে গেছে, যেটার অর্থ আমাকে অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আশা করি, আমার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দলে কাজে দেবে।’

বিসিবি জানিয়েছিল, ইংলিশ কন্ডিশন খুবই চেনাজানা বলেই রোডসের প্রতি তাদের বেশি আগ্রহ। বিশ্বকাপ নিয়ে রোডসের স্বপ্নটা কিন্তু অনেক বড়, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভালো করেছে বাংলাদেশ। তারা প্রমাণ করেছে ইংলিশ কন্ডিশনেও ভালো করার সামর্থ্য আছে তাদের। বিশ্বকাপেও সেমিফাইনাল অথবা আরও দূরে যেতে পারি আমরা। আমি তো ভাবছি, স্বপ্নটা ফাইনাল পর্যন্ত দেখলে কেমন হয়! সত্যিই অসাধারণ হবে।’

রোডসের সঙ্গে আপাতত চুক্তি ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। দলের সঙ্গে যোগ দেবেন ২০ জুন। জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর হবে রোডসের প্রথম মিশন।