এক বিশ্বকাপে 'মহাতারকা' হয়ে আছেন যাঁরা

>খেলতে নেমেই বাজিমাত। অভাবনীয় কিছু ঘটিয়ে ফেলা। কিন্তু এরপর দ্রুতই দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যাওয়া। তারকাখ্যাতি পেয়েও তার সদ্ব্যবহার না করা—বিশ্বকাপে এমন উদাহরণ আছে বেশ কয়েকটি। দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ না পাওয়া এই ফুটবলারদের অবশ্য সবাই মনে রাখবে তাঁদের কীর্তির কল্যাণেই। ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া কীর্তির অধিকারী সেসব ‘এক বিশ্বকাপের বিস্ময়’দের চিনে নিন...
১৯৮২ বিশ্বকাপের নায়ক পাওলো রসি। ফাইল ছবি
১৯৮২ বিশ্বকাপের নায়ক পাওলো রসি। ফাইল ছবি

পাওলো রসি, ইতালি
১৯৮২ সালের স্পেন বিশ্বকাপে ইতালিকে বলতে গেলে একাই শিরোপা জিতিয়েছিলেন পাওলো রসি। ৬ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতার পাশাপাশি বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি গোল্ডেন বলও জিতেছিলেন তিনি। ২৬ বছর বয়সে এই কীর্তি গড়ে আরও বড় কিছুর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সবাইকে। ফুটবলের ‘কিংবদন্তি’ হয়ে উঠতে পারতেন অবলীলাই। কিন্তু রসি সেটা পারেননি। বিশ্বকাপের পরপরই পথ হারায় তাঁর ক্যারিয়ার—মাত্র ৩১ বছর বয়সেই খেলা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বিরাশির বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনা হলে নিশ্চিতভাবেই চলে আসে রসি-প্রসঙ্গ। বিরাশির বিশ্বকাপের সঙ্গে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন এই ইতালীয় তারকা।

১৯৯০ বিশ্বকাপের বিস্ময় সালভাতর শিলাচ্চি। ফাইল ছবি
১৯৯০ বিশ্বকাপের বিস্ময় সালভাতর শিলাচ্চি। ফাইল ছবি

সালভাতর শিলাচ্চি, ইতালি
রসির মতোই আরও এক ইতালীয়। যিনি এক বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়েই দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেছেন। ১৯৯০ সালে ঘরের মাঠে অন্যতম ফেবারিট ছিল ইতালি। বিশ্বকাপ দলেই প্রথম সুযোগ পান সালভাতর শিলাচ্চি। বিশ্বকাপে ইতালির প্রথম ম্যাচ ছিল অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে। সে ম্যাচে কিছুতেই প্রতিপক্ষের গোলমুখ খুলতে পারছিল না জিয়ানলুকা ভিয়াল্লি, রবার্তো ডোনাডুনি, রবার্তো ব্যাজ্জিও, রবার্তো মানচিনি আর আলদো সেরেনা ও আন্দ্রেয়া কার্নেভালদের নিয়ে গঠিত ইতালির আক্রমণভাগ। ম্যাচের শেষ দিকে কোচ অ্যাজেগ্লিও ভিসিনি কার্নেভালের বদলে মাঠে নামান এই শিলাচ্চিকে। কী আশ্চর্য ৭৮ মিনিটেই গোল করে ইতালিকে এগিয়ে দিলেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল পেয়েছেন। ৬ গোল করে সেবার গোল্ডেন বুটটা জিতে নেন তিনিই।
বিশ্বকাপের পর আর মাত্র ৬ বছরই খেলেছেন পেশাদার ফুটবলে। ইতালি দলে আর এক বছর। কিন্তু ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় অর্জন।

ধূমকেতুর মতোই ১৯৯৪ বিশ্বকাপে অবির্ভাব ওলেগ সালেঙ্কোর। ফাইল ছবি
ধূমকেতুর মতোই ১৯৯৪ বিশ্বকাপে অবির্ভাব ওলেগ সালেঙ্কোর। ফাইল ছবি

ওলেগ সালেঙ্কো, রাশিয়া
এই রাশিয়ান ফুটবলারের আবির্ভাবটা হয়েছিল ধূমকেতুর মতোই। রাশিয়ার হয়ে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ক্যামেরুনের বিপক্ষে একাই করেছিলেন ৫ গোল। বিশ্বকাপের এক ম্যাচে ৫ গোল করার একমাত্র কীর্তিটি ওলেগ সালেঙ্কোরই। রিস্টো স্টইচকভের সঙ্গে যৌথভাবে গোল্ডেন বুট জিতলেও রাশিয়ার হয়ে ওই বছরের পর আর খেলতেই পারেননি সালেঙ্কো। ক্যারিয়ারও স্থায়ী হয়নি বেশি দিন। ২০০১ সালে ৩১ বছর বয়সে ফুটবলকে বিদায় বলে দেন সালেঙ্কো।

ব্যক্তিজীবনে অস্থিরতা গ্রাস করেছিল পল গ্যাসকোয়েনকে। ফাইল ছবি
ব্যক্তিজীবনে অস্থিরতা গ্রাস করেছিল পল গ্যাসকোয়েনকে। ফাইল ছবি

পল গ্যাসকোয়েন, ইংল্যান্ড
নিজের নামের থেকেও তিনি বেশি পরিচিত ‘গাজ্জা’। দারুণ প্রতিভাধর পল গ্যাসকোয়েন ১৯৯০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড দলের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। সেমিফাইনালে পশ্চিম জার্মানির কাছে হারার আগ পর্যন্ত খেলেছিলেন দুর্দান্ত। ইংলিশ ফুটবলের সেই প্রজন্মের সেরা ফুটবলারই বলা হয়েছিল তাঁকে। বিশ্বকাপের পর পথ হারিয়ে ফেলেন তিনি। ছন্নছাড়া ব্যক্তিজীবনই কাল হয় তাঁর। কিংবদন্তি হওয়ার সুযোগ থাকলেও সেটা হতে পারেননি ‘গাজ্জা’।

২০০৬ বিশ্বকাপে ইতালিকে ফাইনালে তোলা ফ্যাবিও গ্রোসে এরপর হারিয়েই যান দৃশ্যপট থেকে। ফাইল ছবি
২০০৬ বিশ্বকাপে ইতালিকে ফাইনালে তোলা ফ্যাবিও গ্রোসে এরপর হারিয়েই যান দৃশ্যপট থেকে। ফাইল ছবি

ফ্যাবিও গ্রোসো, ইতালি
২০০৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তাঁর ১১৭ মিনিটের গোল হৃদয় ভেঙে দিয়েছিল স্বাগতিক জার্মানির। ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয়সূচক শটটিও তাঁর। বিশ্বকাপের পর ইন্টার মিলান, জুভেন্টাসের হয়ে খেললেও বলার মতো অর্জন নেই গ্রোসোর। ২০০৯ সালের পর আর ইতালি দলে সুযোগই পাননি।