শুধু বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতেই এক মাসের বেতন খরচ হবে মিসরীয়দের

বিশ্বকাপ ও সালাহকে ঘিরে মিসরীয়দের উন্মাদনা এখন আকাশ ছুঁয়েছে। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বকাপ ও সালাহকে ঘিরে মিসরীয়দের উন্মাদনা এখন আকাশ ছুঁয়েছে। ছবি: রয়টার্স

মোহাম্মদ সালাহর চোট মিসরবাসীর আশায় লাগাম পরিয়েছে, কিন্তু বিশ্বকাপ উন্মাদনায় দাগ ফেলতে পারেনি এক ফোঁটা। ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে খেলার স্বাদ পাচ্ছে দেশটি। এমন মুহূর্ত সবাই যুগ যুগ ধরে মনে রাখতে চাইবে। তবে সে জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে দেশটির মানুষদের। শুধু বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতেই নাকি মিসরীয়দের খসবে এক মাসের আয়ের চেয়েও বেশি অর্থ!

বিশ্বকাপের ম্যাচ রাষ্ট্রীয় চ্যানেলে দেখার সুযোগ নেই মিসরীয়দের। এ জন্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিইন স্পোর্টসের ওপর ভরসা রাখতে হবে। আর এরই পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে চ্যানেলটি। মিসরে বিইনের গ্রাহকদের শুধু ডিকোডার কিনতেই খরচ করতে হয় ১ হাজার ৬৩ মিসরীয় পাউন্ড (৭৮ ইউরো)। সঙ্গে বার্ষিক ভাড়া ২ হাজার ২৮০ পাউন্ড তো আছেই।
আর বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে বিশেষ এক প্যাকেজের গ্রাহক হতে হলে দিতে হবে বাড়তি ২০৫২ পাউন্ড (৯৮ ইউরো)। বাংলাদেশি মূল্যমানে প্রায় ৯ হাজার ৮০০ টাকা! অথচ ৯ কোটি ৭০ লাখ মানুষের দেশ মিসরের মাসিক গড় আয় ২০০ ইউরোর কাছাকাছি। অর্থাৎ বিশ্বকাপের খেলা দেখার জন্য নতুন গ্রাহকদের খরচ করতে হবে এক মাসের উপার্জনের চেয়েও বেশি অর্থ।

ক্যাফেগুলো হয়ে উঠেছে মিসরীয়দের খেলা দেখার আশ্রয়। ছবি: রয়টার্স
ক্যাফেগুলো হয়ে উঠেছে মিসরীয়দের খেলা দেখার আশ্রয়। ছবি: রয়টার্স

শুধু নতুন গ্রাহক নয়, বর্তমান গ্রাহকদেরও বিশ্বকাপ ম্যাচের জন্য বিশেষ প্যাকেজটি নিতে হবে। পুরোনো গ্রাহক হিসেবে কিছুটা ছাড় পেলেও এটা খেপিয়েছে তাদের। মাহমুদ ইব্রাহিম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এটা (ম্যাচ দেখার খরচ) মিসরের অনেক মানুষেরই বেতনের সমান।’
এ ব্যাপারে বিইন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এএফপির সঙ্গে কথা বলেনি তারা। তবে কায়রোর এক বিইন স্টোরের স্বত্বাধিকারী মাহমুদ মোস্তফার দাবি, মিসরীয় পাউন্ডের অবমূল্যায়নই এর জন্য দায়ী। তারা নাকি ২০১৪ সালেও এই অর্থই নিয়েছিল, ‘পার্থক্য হলো ডলারের সঙ্গে পাউন্ডের (মিসরীয়) দরটা এখন কম, এটাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।’

এ অবস্থায় ফুটবলপ্রেমী মিসরীয়দের ভরসা হয়ে উঠেছে ক্যাফেগুলো। অধিকাংশ ক্যাফেতেই বড় স্ক্রিন ঝোলানো হচ্ছে। ১৯ বছর বয়সী মাগদি আরাফা বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে ক্যাফেকে আশ্রয় মানছেন, ‘কী করতে পারি? আমাকে খেলা দেখতেই হবে। জাতীয় দলের খেলা না দেখলে চলবে না আমার।’ আহমেদ ইব্রাহিম নামের এক ক্যাফে মালিকও জানাচ্ছেন, বিশ্বকাপের এ সময় বিইন স্পোর্টসের গ্রাহক হওয়া তার জন্য ‘অবশ্য কর্তব্য’।
সরকার অন্তত মিসরের খেলাগুলো সরকারি চ্যানেলে দেখানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে বিইন স্পোর্টসকে এক আদালত ১৮ মিলিয়ন ইউরোর দুটি জরিমানা দিয়েছেন। তবু বিইনকে রাজি করানো যায়নি। সরকার তাই পুরো দেশে তরুণদের ৫০০০টি ক্লাবে খেলা দেখার ব্যবস্থা করছে।