ঢাকায় খেলেছিলেন বিশ্বকাপের যে ফুটবলাররা

ঢাকার মাঠে খেলে যাওয়া তিন বিশ্বকাপ ফুটবলার
ঢাকার মাঠে খেলে যাওয়া তিন বিশ্বকাপ ফুটবলার
>একসময় বিশ্বকাপের ফুটবলাররা খেলেছেন ঢাকার ফুটবলে। সেই ফুটবলাররা সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয় করেছিলেন দেশের ঘরোয়া ফুটবল

বিশ্বকাপের মাঠে বাংলাদেশের কোনো স্থান নেই। ফুটবলের যে হাল হকিকত, সেখানে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের জায়গা করে নেওয়ার ব্যাপারটি এ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের দূরতম কল্পনাতেও স্থান পায় না। তবে একসময় বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের মান এমন একটা উচ্চতায় পৌঁছেছিল, যেখানে বিশ্বকাপে খেলা বেশ কয়েকজন ফুটবলার বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলে গিয়েছিলেন। স্মৃতির পাতা থেকে সেই ফুটবলারদের পরিচিতি তুলে ধরা হলো এ প্রজন্মের পাঠকদের কাছে...

নাসের হেজাজি (ইরান)
সত্তরের দশকে এশিয়ার অন্যতম সেরা তারকা এই গোলরক্ষক। ইরানের হয়ে খেলেছিলেন ১৯৭৮ সালের আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ। এক নম্বর গোলরক্ষক হয়েই। গ্রুপের পর্বে হল্যান্ড, পেরু ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচই খেলেছেন। ১৯৮০ সালে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় ইরান সরকারের এক অদ্ভুত নিয়মের চক্করে পড়ে। সে সময় নিয়ম করা হয়, কোনো ক্রীড়াবিদের বয়স ২৭ বছরের বেশি হলে তিনি দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলতে পারবেন না। হেজাজির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয় কুয়েতে ১৯৮০ সালের এশিয়ান কাপে, মাত্র ২৯ বছর বয়সে। ১৯৮৭ সালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ কাম গোলরক্ষক হিসেবে ঢাকায় আসেন। সে মৌসুমে মোহামেডান খেলেছিল চোখধাঁধানো ফুটবল। লিগের একটি ম্যাচেই গোলরক্ষক হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন—সেটি আবাহনীর বিপক্ষে। মাত্র ২১ মিনিট মাঠে থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কোন মানের খেলোয়াড় তিনি। কোচ হিসেবে মোহামেডানের দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। মাঝে ১৯৮৯ সালে ইসলামাবাদ সাফ গেমসে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বাংলাদেশ ফাইনালে উঠলেও হেরে যায় পাকিস্তানের বিপক্ষে। হেজাজিকেও আর কোচ হিসেবে রাখা হয়নি।

সামির শাকির (ইরাক)
সামির শাকিরকে বলা হয় ইরাকি ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার। ১৯৮৭ মৌসুমে আবাহনী তাঁকে নিয়ে আসে। এর আগে অবশ্য ইরাকি ক্লাব আল রশিদের হয়ে খেলতে এসেছিলেন এশিয়ান ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপে। সামির শাকিরকে বলা হয় এখন পর্যন্ত ঢাকা মাঠে খেলে যাওয়া অন্যতম সেরা ফুটবলার। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইরাকের হয়ে খেলেছেন তিনিও। তবে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচে রেফারির গায়ে থুতু ছিটানোর কারণে নিষিদ্ধ হন। এরপর আর তিনি কখনোই ইরাকি জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারেননি। খেলোয়াড় হিসেবে তিনি বাংলাদেশে এক মৌসুমই ছিলেন। পরে আবাহনী ও মোহামেডান দুই ক্লাবেরই কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯৮ সালে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব। সামির শাকিরের ট্যাকটিক্যাল ফুটবলেই ১৯৯৯ সালে সাফ গেমসে ফুটবলে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ।

করিম মোহাম্মদ আলভি (ইরাক)
১৯৮১ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ইরাকের হয়ে ৯০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন করিম মোহাম্মদ আলভি। সামির শাকিরের সঙ্গে তাঁকেও ১৯৮৭ সালে আবাহনী নিয়ে আসে। শাকিরের মতোই তিনিও আল রশিদ ক্লাবের হয়ে খেলতে এসেছিলেন এশিয়ান ক্লাব কাপে। ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে ইরাকের অন্যতম ফুটবলার করিম মোহাম্মদ সাতাশির লিগে তাঁর দুর্দান্ত গোল-স্কোরিং ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছিলেন।

এমেকা ইজিউগো
নাইজেরিয়ার ফুটবলার এমেকা ইজিউগো ১৯৮৭ সালের প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে কলকাতা মোহামেডানের হয়ে খেলতে এসেছিলেন। সেই মৌসুমেই ঢাকা মোহামেডান তাঁকে দলভুক্ত করে। এমেকা একটা জায়গায় অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা হয়েই আছেন। হেজাজি, সামির শাকির কিংবা করিম মোহাম্মদরা বিশ্বকাপ ঘুরে এসে বাংলাদেশে পা রাখলেও এমেকা নাইজেরিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পর। মোহামেডানের হয়ে তিনি খেলেন দুই মৌসুম—১৯৮৭ ও ১৯৮৮-৮৯। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে এমেকা বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন। দেশের হয়ে ১৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি।