যেখানে ঘাঁটি গেড়েছে ব্রাজিল দল

স্তালিন ভিলা, কমরেড স্তালিনের বানানো এই প্রাসাদেই থাকছেন নেইমাররা। ছবি: এএফপি
স্তালিন ভিলা, কমরেড স্তালিনের বানানো এই প্রাসাদেই থাকছেন নেইমাররা। ছবি: এএফপি
>প্রস্তুতির অনেকগুলো পর্ব সেরে রাশিয়ায় পৌঁছে গেছে ব্রাজিল দল। সোচিতে উষ্ণ অভ্যর্থনাই পেয়েছেন নেইমাররা

প্রিয় তারকাকে একনজর দেখা অথবা একটি অটোগ্রাফের আশায় ভক্তরা ঘিরে ধরবেন। ছোঁকছোঁক করবে খবরসন্ধানী সাংবাদিকের দল। একটি ছবির আশায় ক্যামেরা নিয়ে ওত পেতে বসে থাকবেন ফটোসাংবাদিক। কখনো কখনো হয়তো ড্রোন ছেড়ে দিয়ে ভিডিও ফুটেজ নেওয়ার চেষ্টা করবেন টেলিভিশনের কোনো ক্যামেরা ক্রু। ম্যাচের দিন বা অনুশীলনের বাইরে এসব থেকে খেলোয়াড়দের যতটা সম্ভব লুকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করবে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন
ব্রাজিল দলের দুর্ভেদ্য সেই ‘গুহা’ রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরের শহর সোচিতে। এই শহরে কৃষ্ণসাগরের পাড়ের একটি অবকাশযাপন কেন্দ্রই বিশ্বকাপের সময়ে তিতের দলের বসতবাড়ি। নেইমাররা তাঁদের এক মাসের বসতবাড়িতে উঠেছেন গতকাল। অবকাশযাপন কেন্দ্রটির এখনকার নাম সুইসহোটেল সোচি কামেলিয়া। ১৯৩৭ সালে এখানেই গড়ে উঠেছিল স্তালিন ভিলা। নাম শুনেই বুঝে যাওয়ার কথা এটি তৈরি করেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক নেতা স্তালিন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে যাওয়ার পর এখানেই গড়ে ওঠে হোটেল।
নামধাম বদলে গেছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যোগ হয়েছে। তবে অবকাশযাপন কেন্দ্রটির আদলে বিশেষ পরিবর্তন আনা হয়নি। একদিকে কৃষ্ণসাগর, অন্যদিকে ফার ও পামগাছের সারির কারণে বাইরে থেকে ভেতরের কিছুই দেখার উপায় নেই। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক অস্ত্রসজ্জিত নিরাপত্তাপ্রহরী তো আছেই। নিরাপত্তা নিয়ে হোটেলের ম্যানেজার গ্রেগরি গ্রেগরিয়েভ মাস কয়েক আগে একবার বলেছিলেন, ‘আমাদের হোটেলে রাস্তা থেকে সরাসরি ভেতরে ঢোকা যায় না। পুরো এলাকাটাই সুরক্ষিত আর বিশ্বকাপের সময় তো বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবেই। এখানের নিরাপত্তা সরকারি পর্যায়ের।’

অনুশীলনের আগে আড়মোড়া ভাঙছেন নেইমার। ছবি: এএফপি
অনুশীলনের আগে আড়মোড়া ভাঙছেন নেইমার। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ছুটি কাটাতে সোচির এই অবকাশযাপন কেন্দ্রে ওঠেন। এমনকি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের নিয়ে নানা ধরনের সম্মেলনও এখানে মাঝেমধ্যেই হয়ে থাকে। সুইসহোটেল কামেলিয়ার নিরাপত্তারক্ষীরা তাই ভালোভাবেই জানেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা কীভাবে দিতে হয়। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার সঙ্গে সমুদ্রের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগের সুবিধা থাকছে ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের জন্য। এই অবকাশযাপন কেন্দ্রটি রাশিয়ার মধ্যে উষ্ণতম। ব্রাজিল দলের এটিকে আবহাওয়ার কারণেও ভালো লাগবে। গ্রেগরিয়েভ যেমন বলেছেন, ‘সোচির আবহাওয়া ব্রাজিলের সঙ্গে খুবই মানানসই।’
সোচিতে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর ইউরোপিয়ান খাবার তো আছেই, ব্রাজিল দলের পাচকের তত্ত্বাবধানে ব্যবস্থা করা হবে নেইমারদের দেশীয় খাবারও। সব মিলিয়ে ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের স্বস্তি আর শান্তিতে রাখার জন্য সব আয়োজনই সেরে রাখছে পাঁচ তারকা হোটেলটি। গ্রেগরিয়েভ আগেই নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন, ‘তাদের আনন্দে আর নিশ্চিন্তে রাখতে সবকিছুই করব আমরা। আমরা তাদের বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করব।’
ব্রাজিল দলকে ‘সুখে-শান্তিতে’ রাখতে যে হোটেল কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য সবকিছুই করবে, সেটা প্রথম দিনেই টের পেয়েছেন নেইমাররা। হোটেলে পা রাখতেই কেক নিয়ে হাজির লাস্যময়ী তরুণীরা, ছিল রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পিঠাজাতীয় খাবার। এগুলো চাখতে চাখতেই ফিরমিনো-জেসুসদের কানে রুশ সংগীতের সুর। রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে এসেছিলেন সেই সংগীতশিল্পীরা।
এত সবের মধ্যে ব্রাজিলের কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তা হতে পারে একটি বিষয় নিয়ে। গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের ম্যাচের ভেন্যুগুলো সোচি থেকে দূরে দূরে। ১৭ জুন রোস্তভে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি খেলতে যেতে হবে ৪০০ কিলোমিটার দূরে। কোস্টারিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে যাবে তারা ২ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গে। আর সার্বিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচের ভেন্যু মস্কোর দূরত্ব ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার।
সুইসহোটেল কামেলিয়ার সুযোগ-সুবিধা আর নিরাপত্তার কথা ভেবে ভ্রমণের কষ্টের কথা হয়তো ভুলেই যাবেন ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা। সোচিতে দলের অনুশীলন মাঠটা আবার খুব কাছেই, হাঁটাপথে হোটেল থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্ব।