৯০ মিনিটের গোলে হৃদয় ভাঙল মিসরের

দুই দলের দুই মূল তারকাই ছিলেন না মাঠে। মিসর দলের প্রাণভোমরা যদি মোহাম্মদ সালাহ হন, তবে উরুগুয়ের মূল ভরসাও তো লুইজ সুয়ারেজ। আজ মাঠে অনুপস্থিত ছিলেন দুজনই। দুই তারকার অনুপস্থিতিতে সমতা থাকলেও খেলায় সমতা থাকেনি। শেষ মুহূর্তের গোলে মিসরকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে উরুগুয়ে।

এটুকু পড়ে ভ্রু কুঁচকে উঠছে? সালাহ যে একাদশে নেই, সেটা সবাই জেনে গেছেন ম্যাচের আগেই। কিন্তু সুয়ারেজকে তো মাঠে নামতে দেখেছেন অনেকেই। দুই দলের মধ্যে প্রীতিসূচক হাত মেলানোর সময়ও ছিলেন বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড। কিন্তু এরপর মাঠে যা করেছেন, তাতে না থাকলেই হয়তো ভালো করতেন। তিনটি সহজতম সুযোগ নষ্ট করেছেন বলেই নয়, সতীর্থরা আক্রমণে ওঠার সময় যখনই তাঁর কাছে বল দিয়েছেন, সেটা নষ্ট হয়েছে সুয়ারেজের কারণেই।

তবু উরুগুয়ে জয় পেল কেন? কারণ, হার না মানা মানসিকতা। মাঠের খেলায় দুই দল ছিল সমতায়, শুধু খেলার সৌন্দর্য চিন্তা করলে সালাহবিহীন মিসরই এগিয়ে ছিল। কিন্তু গোলের সুযোগে এগিয়ে ছিল উরুগুয়ে। আর বারবার আক্রমণ করার মানসিকতা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখার ফলেই এল গোল। ৮৮ মিনিটে এডিনসন কাভানির দুর্দান্ত এক ফ্রিকিক ক্রসবারে লেগে ফিরে এলেও মনোবল হারায়নি তাঁর দল। পরের মিনিটেই বাঁ প্রান্তে ফ্রিকিক আদায় করলেন হোসে হিমেনেজ। কার্লোস সানচেজের ক্রস থেকে হেডটা হিমেনেজই নিলেন। এতক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে ম্যাচ সমতায় রাখা মিসর পিছিয়ে পড়ল ম্যাচের ৯০ মিনিটে!

মিসরের হৃদয় তখন ভাঙলেও সমর্থকদের মনটা মেঘে ঢাকা পড়েছে এর আগেই। ম্যাচের মূল একাদশে জায়গা হয়নি সালাহর। ৮২ মিনিটে আমর ওয়ারদার বদলে মাঠে নেমেছে রামাদান সোবহি। সেটা ছিল মিসরের তৃতীয় বদলি। ওতেই নিশ্চিত ছিল, ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে ফেরা মিসরের সেরা তারকাকে আজ আর দেখা যাবে না। অথচ একজন সত্যিকারের গোলদাতার অভাবে ম্যাচে বারবার সুযোগ সৃষ্টি করেও ম্যাচে এগিয়ে যেতে পারেনি মিসর। পূর্ণ সুস্থ সালাহ মাঠে থাকলেই হয়তো আজ ম্যাচের স্কোরলাইনটা অন্য রকম হতো।

দলকে জয় এনে দেওয়া গোল হিমেনেজের। ছবি: রয়টার্স
দলকে জয় এনে দেওয়া গোল হিমেনেজের। ছবি: রয়টার্স

স্কোরলাইন অবশ্য ম্যাচের ৮০ মিনিটেই উরুগুয়ের পক্ষে যেতে পারত। বক্সের বাইরে থেকে গোলার মতো এক শট নিয়েছেন কাভানি। কিন্তু মোহামেদ এল-শেনাউবি টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচেই সেরার তালিকায় থাকার মতো এক সেভ করলেন। হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল আফ্রিকান দেশটি। পুরো ম্যাচেই মিসরের রক্ষণভাগকে তটস্থ রেখেছেন এই দীর্ঘদেহী স্ট্রাইকার। কাভানি ও রদ্রিগো বেনতাঙ্কুরই প্রতিটি আক্রমণের কেন্দ্রে ছিলেন।

আক্রমণের কেন্দ্রে ছিলেন আরও একজন, সুয়ারেজ। বার্সেলোনার জার্সিতে এ মৌসুমে ৩১ গোল করেছেন। এ ম্যাচ দেখার পর যে কেউই প্রশ্ন করবেন, কীভাবে? ২৪ মিনিটে ৬ গজ দূর থেকে প্রায় ফাঁকায় বল পেয়েও অবিশ্বাস্যভাবে বাইরে পাঠিয়েছেন। এতটাই যে অনেকেই ভাবছিলেন, বল জালে গিয়েছে ঠিক, তবে অফসাইড বলে বাতিল হয়েছে!

৪৬ মিনিটে এর চেয়েও সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন। সেটা গোলরক্ষক শেনাউবির কাছে তুলে দিয়েছেন সুয়ারেজ। ম্যাচের ১৪ মিনিটেও একটা সুযোগ নষ্ট করেছেন, তবে সেটা একটু কঠিন ছিল। অন্তত অন্য দুটির তুলনায়। সুয়ারেজের এমন ম্লান দিনে স্বাভাবিকভাবেই প্রাধান্য বিস্তার করেছে মিসর। কিন্তু একজন সালাহ যে ছিলেন না আজ!