ভিএআর ব্যাপারটা বুঝে নেওয়া জরুরি

>ব্রিটিশ বিজ্ঞানী পল হকিন্সের আবিষ্কার হক আই ক্রিকেটে এসেছিল সেই ২০০১ সালে। এরপর টেনিস, রাগবি, ভলিবলসহ আরও কত কত খেলায় প্রবেশ ঘটেছে হক আইয়ের। মানে, ওই প্রযুক্তি আরকি। গোঁ ধরে বসে ছিল শুধু ফুটবল! ভাগ্যিস, ২০১০ বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের ওই ‘গোল’ নিয়ে গোল বেধেছিল! আর তাতেই তো পরের বিশ্বকাপে গোল লাইন প্রযুক্তির দেখা মিলেছিল। আর এবার তো বিশ্বকাপে অভিষেক হলো ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর)। কাল তো ভিএআরের সহায়তায় পেনাল্টি পেয়ে গেল ফ্রান্স। যদিও এ নিয়ে হচ্ছে বিতর্ক...

ভিএআর প্যানেল

প্রধান ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি ও তাঁর তিনজন সহকারীকে নিয়ে হবে এই ভিএআর প্যানেল। তাঁদের সবাই ফিফার প্রথম শ্রেণির রেফারি। ফিফার রেফারি কমিটি ১৩ জন রেফারির নাম প্রকাশ করেছে, যাঁরা রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রধান ভিএআর হিসেবে কাজ করবেন।
কার কী কাজ
প্রধান ভিএআর একটি মনিটরে মূল ক্যামেরা দিয়ে খেলার ওপর নজর রাখবেন। আরেকটি মনিটরে সুযোগ থাকবে আলাদা চারটি ক্যামেরা থেকে একই ঘটনার ভিডিও দেখার। তিনি ভিএআর দলের নেতৃত্ব দেবেন এবং মাঠের রেফারির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবেন। তাঁর সঙ্গী সহকারী তিনজনের একজন দেখবেন মূল ক্যামেরা, একজনের দায়িত্বে থাকবে অফসাইড ক্যামেরা এবং বাকিজন টেলিভিশন সম্প্রচারকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখবেন।

ভিডিও অপারেশন কক্ষ (ভিওআর)
মস্কোতে ইন্টারন্যাশনাল ব্রডকাস্ট সেন্টারে একটি ভিডিও অপারেশন কক্ষ (ভিওআর) থাকবে। ১২টি স্টেডিয়াম থেকে সব ক্যামেরা থেকে ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে ফুটেজ যাবে ভিওআর কক্ষে। এখান থেকেই ফাইবার লিংকড রেডিও ব্যবস্থার মাধ্যমে রেফারির সঙ্গে কথা বলবে ভিএআর।

ক্যামেরা
ভিএআর দলের কাছে সম্প্রচারকারীদের মোট ৩৩-৩৭টি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ আসবে। এর মধ্যে আটটি সুপার স্লো মোশন ক্যামেরা ও চারটি আলট্রা সুপার স্লো মোশন ক্যামেরা থাকবে। সঙ্গে থাকবে দুটি বিশেষ অফসাইড নির্ধারণী ক্যামেরা। নকআউট পর্ব থেকে মাঠে দুই গোলবারের পেছনে আরও দুটি আলট্রা সুপার স্লো মোশন ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
কোন কোন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ

গোল হয়েছে কি না বা গোলের আগে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে কি না; সরাসরি লাল কার্ড দেওয়ার মতো ঘটনা; পেনাল্টির সিদ্ধান্ত এবং কোনো ফাউল রেফারির চোখ এড়িয়ে গেলে সেটা দেখিয়ে দেওয়া—ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে যেতে পারে এ রকম চারটি ক্ষেত্রে রেফারিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করবে ভিএআর।

প্রক্রিয়া
ম্যাচজুড়ে ভিএআর দল প্রতিনিয়ত ওপরের চারটি ক্ষেত্রে মাঠের রেফারির কোনো ভুল হলো কি না দেখতে থাকবে। রেফারির চোখ এড়িয়ে যাওয়া পরিষ্কার ভুল চোখে পড়লেই কেবল ভিএআর রেফারির সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এর বাইরে প্রয়োজন অনুসারে রেফারি ভিএআরের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। এ ছাড়া টাচলাইনের কাছে রেফারি রিভিউ এরিয়া থাকবে, যেখানে রেফারি ভিএআরের কাছে কোনো ঘটনা রিভিউ করলে সেটার ভিডিও দেখতে পারবেন। একটা কথা মনে রাখা দরকার, যেকোনো ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন শুধুই মাঠের রেফারি। ভিএআর দল শুধু তাঁকে সাহায্য করবে। আর শুধু সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পরই তা স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় দেখানো হবে।

যেকোনো নতুনের প্রতি সংশয় সহজাত। কীভাবে কাজ করবে, কতটা কাজ করবে—এমন অনেক প্রশ্ন তাই ভিএআরকে নিয়েও আছে। সব সামলে যে উদ্দেশ্যে ভিএআরের প্রচলন, রেফারির ভুলের মাত্রা কমানো আরকি— কতটা পূরণ হয় সেটাই এখন দেখার। কে না জানে, ফুটবল ম্যাচে রেফারির ছোট্ট একটি ভুল হতে পারে লাখো সমর্থকের কান্নার কারণ!