ব্রাজিলকে রুখে দিল সুইজারল্যান্ড

ব্রাজিলকে রুখে দিল সুইজারল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স
ব্রাজিলকে রুখে দিল সুইজারল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স

‘তুমি ফেবারিট।’ ‘না, না, তুমি!’

কাল থেকে হয়তো বিশ্বকাপে কে ফেবারিট—প্রশ্নে সবার উত্তর এমন আতঙ্কমাখাই হবে। ফেবারিটের তকমা লাগানো সব দলের শুরুটা যে একদম ভালো হচ্ছে না। স্পেন, আর্জেন্টিনার শুরুটা হয়েছে ড্র দিয়ে। জার্মানি তো ১৯৮২ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম হার দিয়েই বিশ্বকাপ শুরু করল। ফেবারিটের তকমা লাগার কুফলটা টের পেল ব্রাজিলও। সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে বিশ্বকাপ শুরু হলো নেইমারদের।

বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোলের পর কুতিনহো। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোলের পর কুতিনহো। ছবি: রয়টার্স

২০ মিনিটে ফিলিপে কুতিনহোর গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ব্রাজিল। প্রথমার্ধ সেই গোলে এগিয়ে থেকে মাঠ ছেড়েছিল পাঁচবারের বিশ্বজয়ীরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সে স্বস্তি চলে গেছে। ৫০ মিনিটে শাকিরির কর্নার থেকে ম্যাচে সমতা ফেরান স্টিভেন জুবের। সে গোল দেখে ব্রাজিল রক্ষণের ম্যান মার্কিং নিয়ে প্রশ্ন ওঠা উচিত। এরপরও ম্যাচে ৪০ মিনিট সময় পেয়েছে ব্রাজিল। কিন্তু আক্রমণের চতুষ্টয় (নেইমার-জেসুস-কুতিনহো-উইলিয়ান) কিছুই করতে পারেননি। নেইমারকে কড়া পাহারা ও ট্যাকলের মাধ্যমে শিকলবন্দী করে রেখেছে সুইজারল্যান্ড।

ম্যাচের প্রথম আক্রমণটা সুইজারল্যান্ডের ছিল। জেরদান শাকিরির ক্রস থেকে ব্রেলিম জেমাইলির শটটা অবশ্য বারের অনেক ওপর দিয়ে গেছে। এরপরই আক্রমণে মনোযোগ দিতে পেরেছে ব্রাজিল। কিন্তু বারবার আক্রমণগুলো ডি-বক্সের বাইরেই ঘুরপাক খাচ্ছিল। এর পেছনে নেইমারের অযথা বল নিয়ে সময় নষ্ট করাও ভূমিকা রাখছিল। ১১ মিনিটে প্রথম গোলের ভালো সুযোগ পেয়েছে ব্রাজিল। কিন্তু পাওলিনহোর শট একটুর জন্য পোস্টের বাইরে গেছে। অবশ্য গোলরক্ষক সমারের হাতের ছোঁয়াই বলটার জালে যাওয়া থামিয়েছে। 

এরপরও ব্রাজিলের সব আক্রমণ বক্সের ভেতরে এসে নষ্ট হচ্ছিল। ২০ মিনিটে তাই কুতিনহো অত ঝামেলায় গেলেন না। ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়েই নিলেন আচমকা এক শট। লিভারপুল ও বার্সেলোনার সমর্থকেরা বহুবার দেখেছেন এ দৃশ্য। বাঁ দিক থেকে ছুটে আসা গোলার মতো এক শট হালকা বাঁক নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে ডান পোস্টের কোনায়।

পরের ১০ মিনিটে ব্রাজিল ম্যাচে ছড়ি ঘুরিয়েছে। কিন্তু সেই আগের দশা। বক্সের চারপাশে ঘোরাঘুরি কিন্তু কোনো কাজের কাজ হচ্ছিল না। ৩৩ মিনিটে ছয় গজ দূর থেকে হেড করার সুযোগ পেয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। কিন্তু সেটা পোস্টে রাখতে পারেননি জেসুস। প্রথমার্ধের শেষ ভাগে দুই দলই একটি করে সুযোগ পেয়েছিল গোল করার। কিন্তু স্টিভেন জুবেরের শট কিংবা থিয়াগো সিলভার হেড লক্ষ্যে ছিল না।

সুইজারল্যান্ডকে সমতায় ফেরালেন জুবের। ছবি: রয়টার্স
সুইজারল্যান্ডকে সমতায় ফেরালেন জুবের। ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোলের সুযোগ পেয়েছিল সুইজারল্যান্ড। কিন্তু জেমাইলি এবারও গোলে বল রাখতে পারেননি। ৫০ মিনিটে সুইজারল্যান্ডকে স্বস্তি এনে দিয়েছেন জুবের। শাকিরির কর্নার থেকে একদম ছোট বক্সের মধ্যে বল পেয়ে গেলেন এই মিডফিল্ডার। সামনে থাকা মিরান্দাকে হালকা ধাক্কা দিয়েছিলেন। তাতে যে বাড়তি জায়গা পেলেন সেটা কাজে লাগিয়ে হেড করে গোল। গোলে নিজেদের প্রথম শটেই সমতায় ফিরল সুইজারল্যান্ড।

এরপর ম্যাচে ধার বেড়েছে সুইসদের। গোছানো আক্রমণ করেছে দলটি। সে তুলনায় একটু ম্লান দেখিয়েছে ব্রাজিলকে। আক্রমণ–পাল্টা আক্রমণ দেখা গেছে কিন্তু গোলের ভালো সুযোগ পায়নি কেউ। ৮৮ মিনিটে অবশেষে গোলের ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু নেইমারের হেড ঠেকিয়ে দিয়েছেন সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সমার। ৯০ মিনিটে নেইমারের ফ্রিকিক থেকে দারুণ এক হেড করেছিলেন ফিরমিনো। কিন্তু আবারও বাধা হয়ে দাঁড়ালেন সমার। এর মাঝেই পাল্টা আক্রমণে দলকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন শাকিরি। কিন্তু খুব বাজে এক শটে সেটা হাতছাড়া করেছেন এই প্লেমেকার।

যোগ করা সময়ে একের পর এক আক্রমণেও গোল পায়নি ব্রাজিল। ড্র মেনে নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে তিতের দলকে। ফেবারিট তকমাটাই কি তবে ঝামেলা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সবার জন্য?