রোমাঞ্চ ছড়ানো বিশ্বকাপে এবার জাপানের শিকার কলম্বিয়া

দলকে প্রথমে এগিয়ে দিয়েছিলেন কাগাওয়া। ছবি: রয়টার্স
দলকে প্রথমে এগিয়ে দিয়েছিলেন কাগাওয়া। ছবি: রয়টার্স

এবার নাকি ‘গ্রুপ অব ডেথ’ বলে কিছু নেই। ফেবারিটরা সব ‘এলাম, দেখলাম, উঠে পড়লাম’ বলে ঢ্যাং ঢ্যাং করে শেষ ষোলোতে চলে যাবে। গ্রুপপর্বে সব দলের এখনো একটি করে ম্যাচ শেষ হয়নি। এর মাঝেই মনে হচ্ছে, এবার বোধ হয় সব গ্রুপই মৃত্যুকূপ। একের পর এক চমক জাগাচ্ছে তথাকথিত ছোট দলগুলো। সেই চমকে সর্বশেষ সংযুক্তি, কলম্বিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে জাপান।

গ্রুপ এইচে সবচেয়ে পিছিয়ে রাখা হয়েছিল জাপানকে। আর পরিষ্কার ফেবারিট কলম্বিয়া। সে দানটা উল্টে গেল তৃতীয় মিনিটেই। গোলরক্ষককে অসহায় পেয়ে শিনজি কাগাওয়া শট নিয়েছিলেন গোলে। পরিষ্কার গোল হতে দেখে নিজেকে আটকাতে পারলেন না কার্লোস সানচেজ, হাত বাড়িয়ে ঠেকিয়ে দিলেন বল। সরাসরি লাল কার্ড। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম লাল কার্ডের রেকর্ডের সঙ্গে একটি পেনাল্টিও জুটল কলম্বিয়ার ভাগ্যে।

পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হয়নি কাগাওয়ার। ৩৯ মিনিটে অবশ্য সেই গোল ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হুয়ান কিন্তেরো। কিন্তু ১০ জন মিলে ১১ সামুরাইকে কি আর আটকে রাখা যায়? ৭৩ মিনিটে দারুণ এক হেডে ইয়ুয়া ওসাকো জাপানকে এগিয়ে দিলেন আরেকবার। সেই অগ্রগামিতা ধরে রেখেই ম্যাচ শেষ করেছে এশিয়ার দলটি।

শুরুতেই খানিকটা ধাক্কা খেয়েছে কলম্বিয়া। চোটের কারণে দলের সেরা প্লেমেকার হামেস রদ্রিগেজ প্রথম একাদশে ছিলেন না। সেই ধাক্কা সামলে নেওয়ার সুযোগও পায়নি দক্ষিণ আমেরিকান দলটি। ম্যাচে জাপানের প্রথম ভালো আক্রমণে তছনছ কলম্বিয়ার রক্ষণ। শুধু গোল খেলেও মেনে নিতে পারত হোসে পেকারম্যানের দল। কিন্তু মাত্র তিন মিনিটেই একজন খেলোয়াড় হারিয়ে ফেলাটা পুরো ম্যাচেই ভুগিয়েছে কলম্বিয়াকে। ম্যাচে সময় যত গড়িয়েছে, ততই দাপট বেড়েছে জাপানের। বল দখলে এগিয়ে ছিল তারা, আক্রমণ সৃষ্টিতেও। ৯০ মিনিট একজন খেলোয়াড় বাড়তি পাওয়ার সুবিধা ভালোভাবেই নিয়েছে জাপান।

কিন্তেরোর ফ্রিকিক আটকাতে পারেননি জাপান গোলরক্ষক কাওয়াশিমা। ছবি: রয়টার্স
কিন্তেরোর ফ্রিকিক আটকাতে পারেননি জাপান গোলরক্ষক কাওয়াশিমা। ছবি: রয়টার্স

ম্যাচের শুরুতেই তাই কৌশল বদলাতে হয়েছে। উইঙ্গার হুয়ান কুয়াদ্রাদোকে তাই নেমে যেতে হলো ৩১ মিনিটেই। মধ্যমাঠে বাড়তি একটু স্থিতি আনার সেই চেষ্টা একটু পরেই কাজে এসেছে। ৩৯ মিনিটে রাদামেল ফ্যালকাওর বুদ্ধিমত্তায় ডি-বক্সের একটু বাইরে ফ্রিকিক পায় কলম্বিয়া। সে সময়ে হয়তো সবার মনেই হামেসের জন্য আফসোস হয়েছিল। আহা, এমন জায়গা থেকে ফ্রিকিকে গোল করার সেরা লোক তো হামেসই! সেই অতৃপ্তি মুছে দিয়েছেন কিন্তেরো। হামেস চোট না পেলে মাঠে নামাই হতো না যাঁর!

হামেস মানব দেয়ালের ওপর দিয়ে গোল করাতে সিদ্ধহস্ত। কিন্তেরো করলেন উল্টো কাজ, দেয়ালের নিচ দিয়ে পাঠালেন বল। কদিন আগে লা লিগায় মেসিও নিয়েছিলেন এমন এক ফ্রিকিক। ফলটাও অভিন্ন হলো। গোলরক্ষকের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও বল গোল লাইন পেরোল। ম্যাচে ফিরল কলম্বিয়া।

দলকে আবারও এগিয়ে দিলেন ওসাকো, যেটা পরে ম্যাচ জেতানো গোলেই রূপ নিয়েছে। ছবি: রয়টার্স
দলকে আবারও এগিয়ে দিলেন ওসাকো, যেটা পরে ম্যাচ জেতানো গোলেই রূপ নিয়েছে। ছবি: রয়টার্স

কলম্বিয়ার স্বস্তিটা অবশ্য টিকল মাত্র ৩৪ মিনিট। ৭৩ মিনিটে কর্নার থেকে পাওয়া বলে ক্রস করেছেন কেইসুকে হোন্ডা। কলম্বিয়ার রক্ষণের ওপর চড়াও হয়ে ঠিকই জায়গা বের করে নিলেন ওসাকো। দারুণ এক হেডে দূরের পোস্টে পাঠালেন বল। ডেভিড ওসপিনার বাড়ানো হাত শুধু নিজের জন্যই সান্ত্বনা হয়ে থাকল।

এর আগেই অবশ্য মাঠে নেমেছেন হামেস। গোলদাতা কিন্তেরোর বদলি হয়েই। কিন্তু ৩০ মিনিটের বেশি হাতে পেয়েও দলকে কোনো গোল এনে দিতে পারেননি। ৭৮ মিনিটে নিশ্চিত গোলের একটা সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর নেওয়া শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন পাঁচ মিনিট আগেই স্কোরবোর্ড নাম লেখানো ওসাকো। বাকি সময়ে নামের পাশে শুধু একটা হলুদ কার্ডই লেখাতে পেরেছেন হামেস।