খবরদার, রোনালদোর বাসায় দাওয়াতে যেয়ো না!

মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে অনুশীলনে রোনালদো। ছবি: এএফপি
মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে অনুশীলনে রোনালদো। ছবি: এএফপি
>

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সতীর্থ থাকতে একদিন তাঁর বাসায় নিমন্ত্রণ রক্ষার অভিজ্ঞতা জানালেন প্যাট্রিস এভরা।

মনে করুন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে আপনার কোথাও দেখা হলো। তিনি আপনাকে তাঁর বাসায় এক বেলা খাওয়ার নিমন্ত্রণ করলেন। আপনি কী করবেন? অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব রাজি হবেন, তাই তো? এমন সুযোগ তো সবাই পায় না! রোনালদোর বাসায় দাওয়াত পাওয়া আর হাতে চাঁদ পাওয়া তাঁর সমর্থকদের জন্য সমান কথাই। কিন্তু প্যাট্রিস এভরা বলছেন, ‘খবরদার, যেয়ো না! রোনালদো ওঁর বাসায় দাওয়াত দিলে স্রেফ “না” করে দাও।’

বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠেছে? আগে আসল ঘটনা তো শুনুন। রোনালদো আজ মরক্কোর মুখোমুখি হওয়ার আগে এভরা নিজেই তা ফাঁস করেছেন। বিশ্বকাপ নিয়ে আইটিভির এক অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের এই লেফট ব্যাক মজার এক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে। রোনালদো ও এভরা তখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সতীর্থ। একদিন অনুশীলন শেষে এভরাকে দাওয়াত করলেন রোনালদো, ‘চলে এসো আমার বাসায়। দুজন একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করব।’

পরের ঘটনাটুকু এভরার মুখেই শুনুন, ‘সে বলল, প্যাট্রিস, অনুশীলন শেষে চলে এসো। আমি গেলাম এবং সেদিন খুব ক্লান্ত ছিলাম। কিন্তু খাবার টেবিলে গিয়ে দেখলাম শুধু সালাদ, মুরগি আর পানি। কোনো জুস নেই। তারপরও মেনে নিলাম। খাওয়া শুরুর পর ভাবলাম, হয়তো মাংসজাতীয় আরও কিছু দেওয়া হবে। কিন্তু কিছুই এল না। সে খাওয়াদাওয়া শেষ করেই আবার খেলা শুরু করে দিল। দক্ষতা বাড়ানোর অনুশীলন আরকি। আমাকে বলল, চলো, “টু-টাচ” (বলে দুটি টাচের বেশি করা যাবে না) অনুশীলন করি।’

এভরার অবস্থা যেন তখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’। খাওয়া তখনো শেষ না হওয়ায় এভরা অনেকটা অনুরোধের সুরেই বলেছিলেন, ‘খাবারটা শেষ করতে পারি?’ রোনালদোর সাফ জবাব, ‘না না, চলে এসো আগে “টু-টাচ” অনুশীলন করি।’ অগত্যা এভরা কী আর করবেন—‘পড়েছ মোগলের হাতে খানা খেতে হবে সাথে’—খাবার রেখে ইউনাইটেড সতীর্থদের সঙ্গে টু-টাচ অনুশীলন শুরু করে দিলেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়।

রোনালদো ও এভরা। যখন ইউনাইটেডে খেলতেন। ছবি: রয়টার্স
রোনালদো ও এভরা। যখন ইউনাইটেডে খেলতেন। ছবি: রয়টার্স

এভরার ভাষায়, ‘টু-টাচ অনুশীলন শেষে সে আমাকে নিয়ে পুলে সাঁতার কাটতে নেমে পড়ল। তারপর “জাকুজ্জি” (গরম পানির পুল) থেকে “সাউনা”য় (বাষ্পস্নান) কাটল কিছু সময়। আমি ততক্ষণে শেষ (ক্লান্ত)। শুধু এতটুকু জিজ্ঞেস করলাম, ক্রিস্টিয়ানো, আমরা এখানে কেন এসেছি। কাল খেলা আছে সে জন্য, নাকি মধ্যাহ্নভোজ করতে?’

রিয়াল মাদ্রিদ তারকার বাসায় ওয়েস্টহাম তারকার এই অভিজ্ঞতা তাঁকে বলতে বাধ্য করেছে, ‘এ কারণেই আমি যে কাউকে বলব রোনালদো বাসায় দাওয়াত দিলে যেয়ো না। স্রেফ না বলে দাও। কারণ, এই লোকটা একটা যন্ত্র—কখনো অনুশীলন বন্ধ করতে রাজি নয়।’

কোনো কিছুতে হার–না–মানা এবং হাল–না–ছাড়া মনোভাবই রোনালদোকে আজ এতটা উঁচুতে তুলে এনেছে। পর্তুগাল অধিনায়ক যেকোনো কিছুতেই হারতে পছন্দ করেন না, তার একটা উদাহরণও দিয়েছেন এভরা। সেটাও তাঁর ইউনাইটেড ক্যারিয়ারের ঘটনা, ‘একবার রিও ফার্দিনান্দের সঙ্গে টেবিল টেনিস খেলায় সে হেরে গেল। আমরা তো উল্লাস করছি, কিন্তু রোনালদোর মুখ ভার। এরপর সে তাঁর এক ভাইকে দিয়ে বাসায় টেবিল টেনিসের সেট কিনে এনে অনুশীলন করল দুই সপ্তাহ। তারপর ফিরে এসে (ক্লাবে) সবার সামনে ফার্দিনান্দকে হারিয়ে দিল।’

শক্তিতে মরক্কো হয়তো পর্তুগালের ধারেকাছেও নেই, কিন্তু এই বিশ্বকাপে শ্রেয়তর দলগুলো যেভাবে নাকানি–চুবানি খাচ্ছে, তাতে পর্তুগালের সাবধান না হয়ে উপায় নেই। আর এভরা যে হার–না–মানা অনুশীলন-পাগল রোনালদোর উদাহরণ দিলেন, এই ম্যাচে পর্তুগাল কিন্তু এমন রোনালদোকেই চায়। যেমনটা ছিলেন স্পেনের বিপক্ষেও!

মস্কোয় আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টায় মরক্কোর মুখোমুখি হবে পর্তুগাল।