লিওর একার ওপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই

‘আমি জানতাম, আঙুলটা লিওর দিকে উঠবে’। ফাইল ছবি
‘আমি জানতাম, আঙুলটা লিওর দিকে উঠবে’। ফাইল ছবি

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ বড় চাঁছাছোলাভাবে বোধোদয় ঘটিয়ে দিল গতবারের দুই ফাইনালিস্টকে। জার্মানি তো শুরুই করল বড়সড় ধাক্কা দিয়ে, এখন সেখান থেকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো দরকার। ক্রোয়েশিয়ার কাছে লজ্জার হারের পর আর্জেন্টিনা এখন পড়েছে আরও বড় খাদে। শেষ ম্যাচটা জিতলেও, তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যদের অনুকম্পার দিকে।

আগেই বলেছিলাম, প্রথম দুটি ম্যাচ, বিশেষ করে দ্বিতীয়টি কঠিন হবে আর্জেন্টিনার জন্য। কারণ অনেক। ইউরোপীয় প্রতিপক্ষ, দলের অবস্থা, প্রশ্নবিদ্ধ কৌশল আর লিও মেসির ওপর অতিনির্ভরতা। তবু কেন জানি আমার হৃদয় বলছিল, কিছু একটা হওয়া সম্ভব। মাঠে বসে স্বপ্নকে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে দেখাটা বড় কষ্টের। সমস্যার একটা তালিকা তো ছিলই, এবার তাতে যোগ হয়েছে ‘লড়াইয়ের বিন্দুমাত্র উদ্দীপনা না থাকা’। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে তাতে। ২০০২ বিশ্বকাপেও আমরা গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়েছিলাম। কিন্তু ০-৩ গোলে হারের মতো আত্মসমর্পণ করিনি।

আমি জানতাম, আঙুলটা লিওর দিকে উঠবে দলকে উজ্জীবিত করতে ওর অক্ষমতায়। ম্যাচজুড়েই ওকে স্তিমিত আর অনুজ্জ্বল লাগছিল, ঠিক এর উল্টোটা আমরা সব সময়ই চাই। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করে ভুগতে হয়েছে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তো ও কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি ম্যাচে। চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ওর সময়টা আর আসেনি। এটা হতাশাজনক! কিন্তু ফুটবল তো একার খেলা নয়। কখনোই ছিল না, ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ে আমি যখন নেতৃত্ব দিয়েছিলাম, তখনো না। লিওর নিষ্ক্রিয়তার একটাই কারণ, ওর আশপাশে মানসম্মত খেলোয়াড়ের বড় অভাব।

ক্রোয়েশিয়ার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আমাদের দলকে প্রশ্ন করা উচিত আমরা কী করেছি? বিশ্বকাপের দুই ম্যাচেও আমরা দলে সঠিক সমন্বয় করে উঠতে পারিনি কেন? মাঝমাঠে কোনো প্রতিরোধের চিহ্ন ছিল না কেন? পেনাল্টি বক্সের কাছে বল এলেই কেন রক্ষণ নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছিল? বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে গোলরক্ষক কী ভেবে চিপ করছিল? কোনো সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে পাবেন না।

যখন কাজের কাজ কিছু হয় না, তখন দলের বড় তারকার ওপর দায় চাপানো সহজ। কিন্তু তার আগে দৃষ্টিভঙ্গিটা প্রসারিত করা দরকার। আর্জেন্টিনার এখন একটা বড় জয় আর সৌভাগ্য দরকার। কারণ, দল হিসেবে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ। এটা দলগত ব্যর্থতা। লিওর একার ওপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। তাহলে আসল সমস্যা থেকে শুধু মুখ ফিরিয়েই রাখা হবে। গ্রুপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচের পর সেসব নিয়ে কথা বলা যাবে।

জার্মানির জন্যও কাজটা কিন্তু সহজ হবে না। দক্ষিণ কোরিয়াকে হারানো সুইডেনের চোখ কিন্তু পূর্ণ পয়েন্টের দিকেই থাকবে। আর সেটা যদি তারা পেয়ে যায়, চ্যাম্পিয়নদের কাজটা আরও কঠিন হয়ে যাবে। ধরেই নিচ্ছি যে কোরিয়াকে হারিয়ে ছয় পয়েন্ট পেয়ে যাবে মেক্সিকো। এ কারণেই সুইডেনের সঙ্গে ম্যাচটাই ‘ডু অর ডাই’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে জার্মানির জন্য। ফিলিপ লাম ও বাস্তিয়ান শোয়েইনস্টাইগারের অবসরের পর রক্ষণ আর মাঝমাঠে রক্ষণাত্মক কাজটা দুর্বল হয়ে পড়েছে দলটার। গোলরক্ষক ও রক্ষণভাগের মাঝের জায়গাটা মেক্সিকো কাজে লাগিয়েছিল।

সুইডেন কিন্তু রক্ষণ জমিয়ে বসে থাকবে। তাদের শক্তিশালী কিছু ডিফেন্ডার, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার রয়েছে। আর তারা ৪-৪-২ ফরমেশনেই খেলবে। মেসুত ওজিল ও টমাস মুলারকে এর মধ্যেই জায়গা খুঁজে নিতে হবে। যদি তাতে গোল হয়ে যায়, তাহলে সুইডেনকে পরিকল্পনায় বদল এনে জার্মানির জন্য চমক আনতে হবে। বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতা অবশ্য জার্মানিকে এগিয়ে রাখবে। আশা করি, জার্মানি আর্জেন্টিনার চেয়ে ভালো কিছু করবে।

ডিয়েগো ম্যারাডোনা: ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনার অধিনায়ক