জিতলেও ব্রাজিলের খেলা আমাকে সন্তুষ্ট করেনি

কনক্যাকাফ অঞ্চলের এমন দলগুলোই এবার চোখ টানছে, যাদের ফুটবল ইতিহাস-ঐতিহ্য অতটা সমৃদ্ধ নয়। রাশিয়া বিশ্বকাপে জার্মানিকে হারিয়ে বড় ঘটনার জন্ম দিয়েছে মেক্সিকো। ৯০ মিনিট ধরে ম্যাচ গোলশূন্য রেখে কোস্টারিকা ব্রাজিলের কঠিন পরীক্ষা নিয়ে ছেড়েছে। যোগ হওয়া সময়ের দুই গোলে তবু যা রক্ষে!

অনেকটা সময় প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে ঘোরাঘুরি করেও গোলের জন্য ব্রাজিলকে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে। তারকাসমৃদ্ধ দলটির আক্রমণগুলো আন্ডারডগদের গোলরক্ষক আর বাকি দশজন মিলে লম্বা সময় ধরে আটকে রেখেছে। এ ধরনের দলের বিপক্ষে গোল করতে গেলে দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে কখনো কখনো খানিকটা ভাগ্যেরও দরকার হয়। ব্রাজিল এ জন্য খুশি হতে পারে যে শেষমেশ ৩ পয়েন্ট তারা পেয়েছে, গোল ব্যবধান ‘প্লাস ২’-এ নিয়ে যেতে পেরেছে। গ্রুপের লড়াইয়ে এটা হয়তো কাজে লাগতে পারে।

ভালো লাগছে যে ব্রাজিল জিতেছে। যদিও তাদের খেলা আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। আরও আগেই গোল করা উচিত ছিল। গোলের জন্য এত দেরি হওয়ার মাশুল কিন্তু প্রায়ই গুনতে হয়। এ জন্য কী করা উচিত সেটা নিয়ে কোচ তিতের ভাবা উচিত। নেইমার, কুতিনহো, জেসুসদের নিয়ে গড়া এমন একটা প্রতিভাসম্পন্ন আক্রমণভাগকে ছোট দলগুলোর বিপক্ষে এভাবে সংগ্রাম করতে দেখলে সেটা অন্য দলগুলোকে সাহস দেয়। তবে আমি এটাও বলব যে কষ্ট করে পাওয়া জয় আত্মবিশ্বাসের জন্য ভালো। আমি আশা করব, সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই তৃতীয় ম্যাচ আরও ভালোভাবে জিতে গ্রুপপর্বের শেষটা উজ্জ্বল করবে ব্রাজিল।

কনক্যাকাফের তৃতীয় দলটা বাজে অবস্থায় আছে। নিজেদের বিশ্বকাপ অভিষেকে তিন গোলে হারের আগে, মাঝবিরতি পর্যন্ত পানামা কিন্তু বেলজিয়ামকে আটকেই রেখেছিল। এখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একই রকম প্রতিরোধ তারা ধরে রাখতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। যখন সাফল্যের নিশ্চয়তা খুবই কম, সবকিছু দিয়ে শুধুই আক্রমণ ঠেকিয়ে যাওয়াটা কঠিন। নবাগত দলটি কোস্টারিকা হয়ে উঠবে বলে আমার মনে হয় না। এই ম্যাচে ইংল্যান্ডের বড় ব্যবধানে জেতা এবং গোল ব্যবধানে বেলজিয়ামকে টপকানোর চেষ্টা করা উচিত।

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে যোগ করা সময়ের গোলে জয়টা ইংল্যান্ডের জন্য ভালোই হয়েছে। ম্যাচটা কঠিন ছিল। সেখান থেকে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট পাওয়ার পর পানামার বিপক্ষে মানসিক দিক দিয়ে ফুরফুরে থাকার কথা তাদের। ইতিহাস বলছে, বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচেই মাত্র দুবার জিততে পেরেছে ইংল্যান্ড। এবার সংখ্যাটা তিনে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তাদের সামনে। যদি সেটা তারা না পারে, সেটা হবে অঘটন। সম্ভবত জার্মানি-মেক্সিকো ম্যাচের চেয়েও।

গত ম্যাচে যোগ করা সময়ে জোড়া গোলে জিতেছে ব্রাজিল। তবে তাতে মুগ্ধ নন ব্রাজিলের ১৯৯৪ বিশ্বকাপ নায়ক। ছবি: এএফপি
গত ম্যাচে যোগ করা সময়ে জোড়া গোলে জিতেছে ব্রাজিল। তবে তাতে মুগ্ধ নন ব্রাজিলের ১৯৯৪ বিশ্বকাপ নায়ক। ছবি: এএফপি

অল্প যে কয়েকটা দেশ দুজন স্ট্রাইকার নিয়ে খেলছে, ইংল্যান্ড তাদের অন্যতম। ইংলিশ লিগে দারুণ মৌসুম কাটিয়ে এসেছে হ্যারি কেন ও রহিম স্টার্লিং। তা ছাড়া ভার্ডি ও রাশফোর্ডের মতো ভালো বিকল্পও আছে। কেন তার জীবনের সেরা ফর্মে আছে। ভালো স্ট্রাইকাররা জানে, কখনো কখনো নিশ্চুপ থাকতে হলেও, ঠিক সময়ে নিজের প্রয়োজনীয়তা কীভাবে বুঝিয়ে দিতে হয়। ইংল্যান্ডের অধিনায়কও ঠিক সেটাই করেছে, যখন তার দল বিপদে ছিল। পানামা ম্যাচটাকে নিজের বিশ্বকাপ গোল বাড়িয়ে নেওয়ার একটা সুযোগ হিসেবে নেওয়া উচিত কেনের। ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট ৩-৫-২ ফরমেশন থেকে সরবেন বলে মনে হয় না। বড় লড়াইয়ের আগে এই ম্যাচটা নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য পরখ করে নেওয়ার একটা সুযোগ। এটা মাথায় রাখা দরকার।

রোমারিও: ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের স্ট্রাইকার