হেরে গিয়েও উৎসবে মেতেছেন রুশরা

উরুগুয়ের বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরে গেলেও ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ দল হিসেবে রাশিয়া উঠেছে শেষ ষোলোয়। সৌদি আরব ও মিসরের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে জয়লাভ করেছিল রাশিয়া। গতকাল সোমবার সামারায় কোনো গোলের দেখা পায়নি তারা। এতে কি আর রুশদের ঘরে বেঁধে রাখা যায়!

গতকাল মস্কোর রেড স্কয়ার ও আশপাশের এলাকায় মধ্যরাত পর্যন্ত আনন্দ–উৎসবে মেতে ছিলেন রুশরা। রাশিয়ার ফুটবল দলকে সমর্থন জানাতেই নাকি ঘরের বাইরে নেমে পড়েন তাঁরা। নেচে-গেয়ে ফুটবল উৎসবে মেতে ছিলেন ছেলে-বুড়ো সব বয়সের মানুষ।

মস্কোর রেড স্কয়ারে কথা হয় রুশ লেখক লেভের সঙ্গে। হেরে গিয়েও রুশদের এমন উল্লাস কেন, জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার কাছেও বিষয়টি অবাক করার মতোই। ৩-০ গোলে হার, আমাদের তো তিন দিনের শোক ঘোষণা করা উচিত ছিল। কিন্তু অবাক করার মতোই কাণ্ড, সবাই কেন যেন এক উৎসবে মেতেছেন। গতকালও রেড স্কয়ারে এত লোকজন ছিল না। মস্কোবাসী আনন্দে ফেটে পড়ছেন। আসলে আমাদের দেশে অনুষ্ঠিত হওয়া এ বিশ্বকাপ এখন কার্নিভ্যালে রূপ নিয়েছে।’

রেড স্কয়ার লাগোয়া নিকোলস্কায়া সড়ক সেজেছে উৎসবের রঙে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে সড়কটিকে বাহারি আলোকসজ্জা দিয়ে সাজানো হয়েছে। চোখধাঁধানো রংবেরঙের আলোকবাতি। রেড স্কয়ারে বেড়াতে এলে সবাই একবার হলেও এখানে ঘুরতে আসেন। সবার হাতে থাকা মোবাইল ক্যামেরায় নজরকাড়া এই সৌন্দর্যের ছবি-ভিডিও তুলে নেন। রেড স্কয়ারকে পেছনে ফেলে নিকোলস্কায়া সড়ক ধরে এগিয়ে চললাম। চারদিক থেকে ‘রাশিয়া-রাশিয়া’ চিৎকারে ফেটে পড়ছেন তরুণ-তরুণীরা।

গাল রুশ পতাকার রঙে রাঙিয়েছেন এই রুশ তরুণী। ঢং করে একটা সেলফি তো তুলতেই হয়। ছবি: জামিল খান
গাল রুশ পতাকার রঙে রাঙিয়েছেন এই রুশ তরুণী। ঢং করে একটা সেলফি তো তুলতেই হয়। ছবি: জামিল খান

মস্কোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সেরগেইর কাছে জানতে চাইলাম, খেলায় হেরে গিয়েও কি এর আগে কখনো এমন আনন্দ-উল্লাস করেছেন রুশ-সমর্থকেরা?

হাতে রুশ পতাকা নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন এই রুশ নারী। ছবি: জামিল খান
হাতে রুশ পতাকা নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন এই রুশ নারী। ছবি: জামিল খান

সেরগেই প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদিও আজ (গতকাল) রাশিয়া খেলায় হেরে গেছে, কিন্তু তারপরও আমরা রাস্তায় বের হয়েছি। এই টুর্নামেন্ট অসাধারণ একটি ফুটবল আসর। আমরা অনেক খুশি আর প্রথম দুটি ম্যাচে রাশিয়া দারুণ খেলেছে। আমরা সৌদি আরব ও মিসরের সঙ্গে জয়ী হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছে গেছি।’

নিকোলস্কায়া সড়কে ফুটবল-ভক্তরা নেচে-গেয়ে মেতে ওঠেন ফুটবল কার্নিভ্যালে। ছবি: জামিল খান
নিকোলস্কায়া সড়কে ফুটবল-ভক্তরা নেচে-গেয়ে মেতে ওঠেন ফুটবল কার্নিভ্যালে। ছবি: জামিল খান

সেরগেইয়ের সঙ্গে কথা বলে এবার আরও একটু সামনে যেতেই শুনতে পেলাম গানের সুর। কাছে যেতেই বুঝতে পারলাম, সেখানে লাইভ কনসার্ট চলছে। রুশদের পাশাপাশি ব্রাজিল, মেক্সিকো, কলম্বিয়া, পেরুসহ বিভিন্ন দেশের ফুটবল-ভক্তরা এখানে নেচে-গেয়ে মেতে ওঠেন ফুটবল কার্নিভ্যালে। বিশ্বকাপের উল্লাসটা তো এমনই হওয়া উচিত।