কেমন করে কাটে রোনালদোর প্রতিদিন

পর্তুগালের অনুশীলনে রোনালদো। ছবি: এএফপি
পর্তুগালের অনুশীলনে রোনালদো। ছবি: এএফপি
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার। তাঁর দৈনন্দিন জীবনটা কেমন? নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করে ফুটবলপ্রেমীদের। রোনালদোর সঙ্গে খেলার অনুভূতিটাই-বা কেমন? পর্তুগাল দলে রোনালদোর সতীর্থরাই জানিয়েছেন সে কথা


তারকাদের নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। যে ভুবনের তারকাই হোন না কেন। তাঁদের জীবনটা কেমন? প্রতিদিন তাঁরা কীভাবে কাটান? তাঁরা কী খান, পরিবার-পরিজনের সঙ্গেই–বা তাঁদের কেমন সময় কাটে! তারকাদের সফল জীবন অনুসরণ করারও একটা ব্যাপার থাকে। ফুটবলের ক্ষেত্রেই ধরুন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিংবা লিওনেল মেসি অনেক তরুণেরই আদর্শ। নিজেদের এই ‘আদর্শ’ ফুটবলারকে অনুসরণ কিংবা অনুকরণ করতে চান অনেক উঠতি ফুটবলার। রোনালদোর ক্ষেত্রে সেটি কেমন?

রোনালদো একেবারেই ঘুমকাতুরে নন। দেরি করে বিছানা ছাড়ার অভ্যাস একদম নেই। বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিনের সেই কথাটা, ‘আরলি টু বেড আরলি টু রাইজ, মেকস অা ম্যান হেলদি, ওয়েলদি অ্যান্ড ওয়াইজ’—রোনালদো এই উক্তির একনিষ্ঠ অনুসারী। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে বিছানায়ও যান দ্রুত। দেরি করে ঘুমোনোর অভ্যাস নেই পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলারটির। কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেতে পছন্দ করেন। তাঁর প্রতিদিনের খাবারে ফাইবারযুক্ত সিরিয়েলের পরিমাণ যথেষ্টই।
রোনালদো ৮ ঘণ্টা ঘুমোতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ফুটবল সাময়িকী ‘ফোর ফোর টু’-কে একবার বলেছিলেন, ‘ঘুম আমার পেশির পুনর্গঠনে সাহায্য করে।’ খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শয়নকক্ষের মধ্যেই রোনালদো হালকা শারীরিক ব্যায়াম সেরে নেন। গোল ডট কমকে একবার বলেছিলেন, খুব সকালে ব্যায়াম করাটা তাঁর ‘অভ্যাসে’ পরিণত হয়েছে।’ এই ব্যায়াম সেরে রোনালদো বসে পড়েন নাশতার টেবিলে।

সারা দিনে শরীরে যেন পানির ঘাটতি না হয়, সে জন্য সকালেই প্রচুর পানিজাতীয় খাবার খেয়ে নেন রোনালদো। প্রচুর মাছ খান। তবে বড় ম্যাচের দিন প্রচুর প্রোটিন সমৃদ্ধ হালকা খাবার খেয়ে তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেন। স্টেডিয়ামে আসার পর ম্যাচের আগে গা-গরম, স্ট্রেচিং আর গান শুনে থাকেন রোনালদো। ওয়েন রুনি একবার বলেছিলেন, ম্যাচ শুরুর আগে ‘জার্সি আর বুট পরার পর রোনি (রোনালদো) আয়নায় নিজেকে একবার দেখেও নেন।’

ম্যাচ শেষেও কিন্তু রোনালদোর ‘গেম ডে’ সূচি থাকে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’কে একবার বলেছিলেন, ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামে তিনি পিৎজা ও ফল খেয়ে থাকেন। এরপর নিজেকে সতেজ করেন গরম ও ঠান্ডা পানিতে নিজেকে গোসল করে। এখানেই শেষ নয়। গোসলের পর পর্তুগিজ এই তারকা ন্যূনতম ২০ মিনিট সাঁতার কেটে নিজের মনটাও চাঙা করে ফেলেন। তখন রোনালদোর শরীর ও মনে ম্যাচের প্রভাব আর থাকে না।

রোনালদোর সতীর্থ হিসেবে খেলার অনুভূতিটা কেমন? তাঁর সঙ্গে অনুশীলন, কিংবা এক দলে থাকার অভিজ্ঞতাটাই–বা কেমন লাগে? সমর্থকদের কিন্তু এসব জানতে ইচ্ছে করে। রোনালদোর জাতীয় দল-সতীর্থ আদ্রিয়েন সিলভার মুখ থেকেই শুনুন, ‘তাঁর ভেতরে অবশ্যই বিশেষ কিছু আছে। টানেলে থাকতে অন্য দলের খেলোয়াড়দের দিকে তাকালেই ব্যাপারটা বোঝা যায়। ওঁদের চোখে তাকালেই বোঝা যায় রোনালদোকে নিয়ে ওঁরা একই সঙ্গে ভীত ও প্রভাবিত। এই ব্যাপারটা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। মাঠে নামার আগেই মনে হয় আমরা এগিয়ে আছি।’

রোনালদোর আরেক জাতীয় দল–সতীর্থ বের্নাদো সিলভার কথা শুনলে মনে হবে, পর্তুগাল দলের সবাই চোখ বুজে রোনালদোর অনুসারী। সিলভার ভাষায়, ‘সে আমাদের আত্মবিশ্বাস। সে যা বলে তা কোনো কিছু না ভেবেই মেনে চলা যায়। তাঁর প্রতিটি পরামর্শই সঠিক। তাঁর ওপর আমাদের অনেক বিশ্বাস। কারণ, চাপটা সে আমাদের ওপর থেকে নিজেদের ওপর নিয়ে নেয়।’ রোনালদোর পাশে খেলার অনুভূতিকে সিলভা বুঝিয়েছেন এককথায়, ‘ব্যর্থতার কোনো জায়গা নেই।’