ফ্রান্সের আছে এক এমবাপ্পে

>এখনো ঠিক সেভাবে আলো ছড়াতে না পারা এমবাপ্পে আজ আর্জেন্টিনার রক্ষণে ত্রাস ছড়াতে পারেন
প্যারিসের কেন্দ্র থেকে সাইকেল দূরত্বে তাঁর নিজের এলাকা—বন্ডি। এই কদিন আগেও সেখানে নদীর পাড়ে কিলিয়ান এমবাপ্পের একটা মূর্তি ছিল। পিএসজির জার্সি গায়ে, দুই হাত আড়াআড়ি করে রাখা বুকের ওপর। একটা স্লোগান লেখা, যার বাংলা, ‘বন্ডি, সম্ভাবনার শহর’।
সেই মূর্তি এখন আর নেই। এমবাপ্পের এখন ঠাঁই কয়েক কিলোমিটার দূরে স্তাদ দো ফ্রান্সে। ফ্রান্সের জাতীয় স্টেডিয়ামের বাইরে এমবাপ্পেকে নিয়ে একটা বিজ্ঞাপনী বার্তা লিখে রেখেছে নাইকি। নব্বইয়ের দশকে ফ্রেঞ্চ কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনার একটা উক্তিকে একটু বদলে সেই বিজ্ঞাপনী বার্তায় লেখা, ‘১৯৯৮ ফ্রেঞ্চ ফুটবলের জন্য অসাধারণ একটা বছর। কিলিয়ান সেই বছর জন্ম নিয়েছিল।’
মজা করে লেখা বুঝতেই পারছেন। দুই দশক আগে নিজ দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপে ফ্রান্স বিশ্বকাপ ফাইনালে হারিয়েছিল ব্রাজিলকে। আজ আরেক বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে যখন প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা, ফ্রান্সের অনেক বড় ভরসা এখনো ২০ না পেরোনো এমবাপ্পেই।
তিনি যে ফুটবলে বড় নাম হতে চলেছেন, সেটি তো দুই মৌসুম ধরেই বহুল চর্চিত বিষয়। মোনাকোতে শুরু, গত মৌসুমে পিএসজিতে এমবাপ্পে আলো ছড়িয়েছেন। এই বিশ্বকাপে যে তরুণেরা সবচেয়ে বেশি আলো ছড়াবেন ভাবা হচ্ছিল, সে তালিকায়ও এমবাপ্পে ছিলেন ওপরের দিকেই। এমনকি সাবেক ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার ডেভিড ত্রেজেগে তো এমনও বলেছেন, ‘এমবাপ্পে আর গ্রিজমানের ক্ষমতা আছে থিয়েরি অঁরিকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার!’ কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁর পারফরম্যান্স পুরো ফ্রান্স দলের পারফরম্যান্সেরই ছায়া যেন। তিন ম্যাচের দুটিতে শুরু থেকে খেলেছেন এমবাপ্পে, একটিতে নেমেছেন বদলি হয়ে। গোল শুধু একটিই, পেরুর বিপক্ষে। তা-ও স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরুর শট গোলকিপার ঠেকিয়ে দেওয়ার পর ফিরতি বল জালে জড়িয়ে।
সমস্যাটা কোথায়? আঙুলটা অনেক আগে থেকেই তো ফ্রেঞ্চ কোচ দিদিয়ের দেশমের কৌশলের দিকে। দলের গঠন, রক্ষণ আগে ঠিক রাখা...এসব চিন্তা করতে গিয়ে তিনি নাকি এমবাপ্পে-গ্রিজমান-পগবা-ডেম্বেলের মতো সৃষ্টিশীল খেলোয়াড়দের পুরো স্বাধীনতা দিচ্ছেন না। কাল কাজানে বলতে গেলে পুরো মেসি আর গ্রিজমানময় সংবাদ সম্মেলনেও তাই একটু করে থাকলেন এমবাপ্পে। দেশমের দিকে ছুড়ে যাওয়া প্রশ্নটার বিষয় এই, এমবাপ্পের ওপর রক্ষণের দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে তাঁর সহজাত খেলাটা নষ্ট করা হচ্ছে কি না।
পিএসজিতে নেইমার-কাভানির পাশে যে এমবাপ্পেকে দেখা যায়, ফ্রান্সের ৪-৩-৩ ছকে তা যায় না। ওই রক্ষণের দায়িত্ব নিতে হয় বলেই। তবু দল তো আগে! কাল সংবাদ সম্মেলনে দেশমও বললেন, ‘এটা আসলে ত্যাগের ব্যাপার নয়। বাস্তবতাটা বুঝতে হবে। বল দখলে রাখতে হবে, দলের গঠন ধরে রাখতে হবে। যখন আপনি বল দখলে রাখবেন, সৃষ্টিশীলতার সুযোগ এমনিতেই আসবে। সেটা নিজে নিজে তৈরি করে নিতে হয়।’ এরপর এমবাপ্পেকে নিয়ে বললেন, ‘ও প্রথম ম্যাচে অনেক স্বাধীনতা পেয়েছিল, কিন্তু সেদিন ও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেনি। এসব ওর জন্য কোনো ব্যাপারও নয় আসলে। কারণ, ও সেদিন অনেক বেশি খেটে খেললেও একটা গোল করেছে, আরেকটা গোলের সুযোগ পেয়েছে।’
এমবাপ্পের ২০ বছর বয়সী কাঁধে আজও হয়তো দায়িত্ব তা-ই থাকবে। তবু একটা চোখ থাকবে তাঁর পায়ের জাদুর খোঁজে, গোলের খোঁজে। সেটা করতে পারলে উৎসব হবে ফ্রান্সে, তাঁর শহর বন্ডিতেও।