ফাইনাল জিততে কী করতে হয় বলে দিচ্ছেন ম্যারাডোনা

১৯৮৬ বিশ্বকাপে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ম্যারাডোনা। ফাইল ছবি
১৯৮৬ বিশ্বকাপে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ম্যারাডোনা। ফাইল ছবি
>দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা আছে ডিয়েগো ম্যারাডোনার। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন আজকের কলাম

ফুটবলের সবচেয়ে বড় রাতটা চলে এসেছে। ফুটবল-ভক্তরা যে মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করে, ৩০ দিন আর ৬৩টি ম্যাচ শেষে সেটি এসে গেছে। ইতিহাস, নাটকীয়তা, আবেগ...ফুটবল-রোমান্টিকরা এই ম্যাচকে অনেকভাবেই দেখতে পারেন। তবে আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলব, শুধু একটা ব্যাপারই এখানে সবচেয়ে বড়। বিশ্বকাপ ফাইনালে ইচ্ছাশক্তিই সবকিছু।

এমন মাপের একটা ম্যাচে জটিল টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল অনেক উপাদান থাকবে। বিশ্বের সেরা দুটি দল মুখোমুখি হলে ভিন্ন কিছু হওয়ার কথাও নয়। একই সঙ্গে এই উপলক্ষটা তীব্র ইচ্ছাশক্তিও দাবি করে। ম্যাচে পিছিয়ে পড়লেও সুযোগ তৈরি করার আর সুযোগ পেলে সেটি কাজে লাগানোর প্রস্তুতি থাকতে হবে। ১৯৮৬-তে চোখের কোণ দিয়ে আমি দেখেছিলাম, জার্মানির অর্ধে হোর্হে বুরুচাগার আশপাশে ডিফেন্ডার নেই। বাকিটা ইতিহাস!

ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপে কেমন করেছে সেদিকে একপলক তাকালেই একটা ছক চোখে পড়বে। ফ্রান্স নকআউট পর্বে তিনটি ম্যাচই ৯০ মিনিটের মধ্যে জিতেছে। ক্রোয়েশিয়া তিনটিতেই খেলেছে ১২০ মিনিট। দেশমের ছেলেরা যেখানে প্রতি ম্যাচে দাপট দেখিয়েছে, দালিচের দলকে লড়তে হয়েছে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। এটাই বোঝায়, ক্রোয়েশিয়া পুরো দাপট দেখাতে পারছে না।

ফাইনালটা দুই ভিন্ন ঘরানার ফুটবলের লড়াইও হবে। দাপট ফ্রান্সের থাকবে, যদিও দেখে সেটা সেভাবে বোঝা না-ও যেতে পারে। দেশমের অধীনে দেখনদারি ব্যাপারগুলো ছেড়ে ওরা কার্যকর একটা কৌশল বেছে নিয়েছে। রক্ষণ আর মাঝমাঠে শক্তিশালী ওরা, আক্রমণের তোড়ে প্রতিপক্ষকে ভাসানোর চেষ্টা না করে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায়। সেটা দেখতে কেমন লাগে, তা নিয়ে এত কথা কেন হয়েছে, বুঝতে পারছি না। বাস্তববাদী একটা কৌশল এটা, যা ওদের ২০১৬-তে ইউরোপিয়ান শিরোপারও খুব কাছে নিয়ে গিয়েছিল। নিজেদের মাঠে সেই ফাইনালে হারের হতাশাটা রাশিয়ায় মুছে ফেলতে ফ্রান্স দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ফ্রান্সকে নিয়ে বেশির ভাগ কথাই হয়তো কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ঘিরে হবে। তবে এই দল মানে শুধু ও (এমবাপ্পে) বা অন্য কোনো খেলোয়াড় নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। বিশ্বকাপের আগেই চোটের কারণে একজন ডিফেন্ডার আর মিডফিল্ডারকে হারিয়ে ফেললেও (কসিয়েলনি ও পায়েত), ভালো বিকল্প ফ্রান্সের ছিল। দুটি হলুদ কার্ড দেখে এক ম্যাচে ব্লেইস মাতুইদি বাইরে বসে থাকলেও ওর অভাব খুব বেশি একটা বোধ করেনি। মাঠের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পগবা ও কান্তের উপস্থিতি অনেক বড় ব্যাপার, প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের আক্রমণও শুরু করছে ওরা দুজন। এরপরের সবকিছুও কিন্তু শুধু এমবাপ্পে বা আঁতোয়ান গ্রিজমান নয়। এমনকি ওদের ডিফেন্ডাররাও গোল করছে।

এত কিছু বলার মানে এই নয় যে, ক্রোয়েশিয়া প্রস্তুত নয়। অতিরিক্ত সময় বা টাইব্রেকারে যেসব ম্যাচ ওরা জিতেছে, সেগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, প্রতিটি ম্যাচেই ওরা আগে পিছিয়ে পড়েও ফিরে এসেছে। নকআউট পর্বে এটা একবার করতেও সাহস লাগে।

আমার ১৯৯০-এর অভিজ্ঞতা বলে, ভেতরে তেজ থাকলে যেকোনো বাধাই পেরোনো সম্ভব। শুধু লুকা মদরিচ বা ইভান রাকিতিচ নয়, ক্রোয়েশিয়ার অনেক খেলোয়াড়ের মধ্যে এই ব্যাপারটা অনেক বেশি দেখা গেছে। (নকআউট পর্বের ৩ ম্যাচে) ৩৬০ মিনিট খেলার পর হয়তো শারীরিকভাবে ক্লান্ত থাকবে ওরা, তবে এই উদ্দীপনার কমতি হবে না, সেটা ধরে রাখতে পারেন। লড়াকু দলগুলোকে আমার খুব পছন্দ। যদি ক্রোয়েশিয়া সেটা করতে পারে, লুঝনিকি স্টেডিয়াম ম্যাচটা মনে রাখবে।