ফ্লপ একাদশে আর্জেন্টিনার মাত্র এক!

রাশিয়া বিশ্বকাপে হতাশ করেছেন হাভিয়ের মাচেরানো। ছবি:রয়টার্স
রাশিয়া বিশ্বকাপে হতাশ করেছেন হাভিয়ের মাচেরানো। ছবি:রয়টার্স

কত স্বপ্ন নিয়েই না রাশিয়া বিশ্বকাপে গেছেন ৩২টি দেশের ৭৩৬ জন ফুটবলার। নিজেদের যোগ্যতার মাপকাঠিতে স্বপ্নের রকমফের থাকতে পারে। কিন্তু কারও অর্জন স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে গেছে, কারও বা পূরণ হয়েছে কিছুটা। আর কারও জন্য রাশিয়া বিশ্বকাপ হয়ে থাকছে দুঃস্বপ্ন। এমন ১১ জনকে নিয়ে দল গড়ে ফেললে কেমন হয়?


ডেভিড ডি গেয়া (স্পেন)
টাইমমেশিন থাকলে নিশ্চিত বিশ্বকাপটা আবার খেলতে চাইতেন ডি গেয়া। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে কী অসাধারণ একটা মৌসুম কাটিয়েই না বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন! কিন্তু পর্তুগালের বিপক্ষে ৩-৩ গোলে ড্র প্রথম ম্যাচেই দুঃস্বপ্ন! হ্যাটট্রিকের পথে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দ্বিতীয় গোলের সময় শটটা তাঁর গায়ের দিকেই ছিল, কিন্তু ঠেকাতে গিয়ে উল্টো হাত গলে বল জালে। টুর্নামেন্টে মুখোমুখি সাত শটের মাত্র একটিই ঠেকাতে পেরেছেন ডি গেয়া!

জশুয়া কিমিখ (জার্মানি)
তাঁকে এই একাদশে রাখাটা একটু কঠোর সিদ্ধান্ত মনে হতে পারে। তবে কিমিখের কাছে প্রত্যাশা বেশি ছিল বলেই হতাশাটাও বেশি। মেক্সিকোর বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের ম্যাচে বারবারই আক্রমণে উঠে আর ঠিক সময়ে নিচে নামতে পারেননি, তাঁর প্রান্ত দিয়েই বারবার পাল্টা আক্রমণে গেছে মেক্সিকো, গোলটাও সেভাবেই পেয়েছে। সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে তেমন ভুল না করলেও আক্রমণ-রক্ষণে তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশার কিছুই পূরণ করতে পারেননি কিমিখ।

জেরার্ড পিকে (স্পেন)
পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচটার পর সব আলো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর হ্যাটট্রিকই কেড়ে নিয়েছে, তবে আলোচনায় এসেছে রক্ষণে পিকের দুর্বলতাগুলোও। ইরানের বিপক্ষে পরের ম্যাচটা ভালোই খেলেছেন। তবে মরক্কোর বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে তাঁর ভাগ্য আর রেফারির উদারতায় লাল কার্ড দেখা থেকে বেঁচেছেন। শেষ ষোলোয় রাশিয়া পেনাল্টি পাওয়ার কারণও পিকের ব্যাখ্যাতীত হ্যান্ডবল।


জেরোম বোয়াটেং (জার্মানি)
সাদায় আর কালোয়, আলো আর আঁধারে যেমন তফাত, ২০১৪ বিশ্বকাপের বোয়াটেং আর রাশিয়ার বোয়াটেংয়ে তফাতটাও তেমনই। মেক্সিকোর বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের ম্যাচে কড়া সমালোচিত হয়েছিল বোয়াটেংয়ের দুর্বল পজিশনিং। কিন্তু সেটি আর শোধরালেন কই? সুইডেনের বিপক্ষে পরের ম্যাচেও একই গল্প। সুইডেনের স্ট্রাইকার মার্কাস বার্গকে ফাউল করে ৮২ মিনিটে লাল কার্ড দেখেছেন। এর আগেও তাঁর ভুলের কারণে একটা পেনাল্টি প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল সুইডেন।

রাফায়েল গেরেরো (পর্তুগাল)
ছিলেন ২০১৬ ইউরোজয়ী পর্তুগালের আলো ছড়ানো খেলোয়াড়দের একজন, রাশিয়া বিশ্বকাপে সেই গেরেরোই অচেনা। সময়ের অন্যতম সেরা তরুণ এই লেফট ব্যাক অনুজ্জ্বল ছিলেন স্পেনের বিপক্ষে ৩-৩ গোলে ড্র ম্যাচে। এমনকি মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচেও নরদিন আমরাবাত বারবার ঘোল খাইয়ে ছেড়েছেন গেরেরোকে। উরুগুয়ের বিপক্ষে শেষ ষোলোয় তাঁকে ফাঁকি দিয়েই উরুগুয়ের প্রথম গোলটা করেছিলেন এডিনসন কাভানি।

স্যামি খেদিরা (জার্মানি)
গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়া জার্মানি যে দুই ম্যাচে হেরেছে, দুটিতেই দলে ছিলেন। সুইডেনের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচটিতে তাঁকে দলে রাখেননি কোচ জোয়াকিম লো। সময়ের ফুটবলে দলে ভারসাম্য আনতে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের জায়গাটা কত গুরুত্বপূর্ণ, তা তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। ৩১ বছর বয়সী খেদিরাকে বিশ্বকাপে মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দুটিতে দেখে মনে হয়েছে, সেই কাজটা করার গতি বা পায়ের শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন!

হাভিয়ের মাচেরানো (আর্জেন্টিনা)
আজীবনের লড়াকু তিনি। বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনার যে কজন জানপ্রাণ দিয়ে লড়েছেন, মাচেরানো তাঁদের একজন। কিন্তু ৩৪ বছর বয়সটা বোধ হয় এ বেলা প্রতারণা করল! গতি, রিফ্লেক্স যে অনেকটাই কমে গেছে, বিশ্বকাপ সেটি দেখিয়ে দিয়েছে বারবার। গতিময় ফ্রান্স মিডফিল্ড, আর বল পায়ে দক্ষ ক্রোয়েশিয়ানদের বিপক্ষে খাবি খেয়েছেন যেন। ২০ বার বল হারানো, ১৬ ট্যাকল করে শুধু আটবার বল দখলে নিতে পারা, ১৫টি ফাউল বলে, মাচেরানো চেষ্টা কম করেননি, কিন্তু পারেননি।


মেসুত ওজিল (জার্মানি)
খেদিরার মতোই অবস্থা তাঁর। মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে হারের ম্যাচ দুটিতে মাঠে ছিলেন, সুইডেনের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচটাতে তাঁকে বসিয়ে রেখেছেন কোচ। যে দুই ম্যাচে খেলেছেন ওজিল, সেই দুই ম্যাচে জার্মানি কোনো গোলও পায়নি। রক্ষণে সাহায্য না করায় তাঁর অপবাদ পুরোনো, আক্রমণেও জার্মানি দলের নাম্বার টেনের কাছ থেকে পায়নি কিছুই!

টমাস মুলার (জার্মানি)
আগের দুই বিশ্বকাপে পাঁচ পাঁচ করে দশটি গোল। মুলার রাশিয়া গিয়েছিলেন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ক্লোসা-রোনালদোদের সম্ভাব্য হুমকি হয়ে। ৩ ম্যাচে ২০৭ মিনিটে একটা গোল তো পানইনি, জার্মানির কোনো গোলে তাঁর সহায়তা নেই। সাকল্যে পাসই খেলেছেন ১০০টি, যার মধ্যে সফল মাত্র ৭৮টি। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই যেন বিশ্বকাপটা পার করে দিয়েছেন মুলার!

গ্যাব্রিয়েল জেসুস (ব্রাজিল)
২০১৬ রিও অলিম্পিকে ব্রাজিলকে অধরা সোনা এনে দেওয়ার পথে আলো ছড়িয়েছিলেন। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও ৭টি গোল করেছিলেন। কিন্তু রাশিয়ায় অচেনা হয়ে থাকলেন ২১ বছর বয়সী ব্রাজিল ফরোয়ার্ড। গোল পাননি। পরিসংখ্যান তাঁর নামের পাশে একটা ‘অ্যাসিস্ট’ দেখাবে বটে, তবে কোস্টারিকার বিপক্ষে কুতিনহোর সেই গোলে সহায়তার দাবি সম্ভবত জেসুস নিজেও করবেন না।

রবার্ট লেভানডফস্কি (পোল্যান্ড)
রাশিয়া গিয়েছিলেন ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১৬ গোলের রেকর্ড নিয়ে, জার্মান লিগে সর্বশেষ মৌসুমেও করেছিলেন ২৯ গোল। কিন্তু লেভানডফস্কি রাশিয়া থেকে ফিরছেন শূন্য হাতে, নিজ দর্শকদের দুয়োর স্মৃতি নিয়ে। পোল্যান্ড বাড়ি ফিরেছে শূন্য হাতে। আর বিশ্বকাপের আগে গোল্ডেন বুটের সম্ভাব্য দাবিদারদের একজন ‘লেভা’র গোল শূন্য। সতীর্থদের দিয়ে কোনো গোল করাতেও পারেননি! ৩ ম্যাচ মিলিয়ে পাসই দিতে পেরেছেন মাত্র ৬৭টি, বল হারিয়েছেন ২৪ বার!