রোনালদো ছাড়াও রিয়াল জিতবে, কিন্তু...

>রোনালদো যাওয়ার পর রিয়ালের আক্রমণভাগ নিয়েই চিন্তা ছিল বেশি। উয়েফা সুপার কাপ দেখিয়ে দিয়েছে, রক্ষণভাগই তাদের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার জায়গা।
রোনালদোকে ছাড়া প্রথম পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি রিয়াল। ছবি: রয়টার্স
রোনালদোকে ছাড়া প্রথম পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি রিয়াল। ছবি: রয়টার্স

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে ছাড়াও রিয়াল মাদ্রিদের জয় থামবে না—উয়েফা সুপার কাপের আগেই এ ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন সার্জিও রামোস। কথাটা মিথ্যা নয়, রিয়ালের ইতিহাসে অনেক কিংবদন্তিই এসেছেন। ডি স্টেফানো, পুসকাস, কোপাদের পর জিদান, রাউল, ক্যাসিয়াস, সর্বশেষ রোনালদো—এমন অনেকেই এসেছেন, চলে গেছেন, কিন্তু রিয়ালের জয়রথ থামেনি। কাল সুপার কাপে হারার পরও তাই শঙ্কায় পড়ার মতো কিছু হয়নি। তবে এ মৌসুমে রিয়াল কিছু জিততে পারবে না—এ শঙ্কা কাল বিশ্বাসে রূপ নিয়েছে।

রোনালদো চলে যাওয়ার পর সবার মূল প্রশ্ন ছিল রিয়ালের আক্রমণ নিয়ে। ৯ মৌসুমে ৪৫১ গোল এনে দেওয়া এক ফরোয়ার্ড হারিয়েছে রিয়াল। গত মৌসুমের প্রথমার্ধে ভুলে যাওয়ার মতো কিছু সময় পার করেছেন রোনালদো। তারপরও মৌসুমে শেষ করেছেন ৪৪ ম্যাচে ৪৪ গোল নিয়ে। প্রতি মৌসুমে ৫০ গোল এনে দেওয়া এমন এক খেলোয়াড় চলে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এবার এ গোলগুলো কে এনে দেবে?

গ্যারেথ বেল ও করিম বেনজেমার ওপর সে দায়িত্ব পড়েছে। রোনালদোর শূন্যস্থান পূরণ আর গোল করার দায়িত্ব। গতকাল সে দায়িত্ব খানিকটা হলেও পালন করেছেন দুজন। রিয়ালের প্রথম গোলটা এসেছে বেলের দারুণ এক ক্রস থেকে। সে ক্রস সত্যিকারের এক নম্বর নাইনের মতোই কাজে লাগিয়েছেন বেনজেমা। রিয়ালের দ্বিতীয় গোলটি পেনাল্টি থেকে এলেও হুয়ানফ্রানকে চাপে ফেলে সেটা আদায় করেছিলেন বেনজেমাই। পুরো মৌসুম এ দুজন এমন খেলতে পারলে রিয়ালের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও দূর হবে। কিন্তু আসল সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে?

নিজের রক্ষণভাগই ভুগিয়েছে লোপেতেগিকে। ছবি: রয়টার্স
নিজের রক্ষণভাগই ভুগিয়েছে লোপেতেগিকে। ছবি: রয়টার্স

গতকাল অ্যাটলেটিকো যে চারটি গোল করেছে, চারটিই ছিল রিয়াল রক্ষণের ভুলে। গত মৌসুমের শুরুতে পেপের বিদায়ের পর বিকল্প কোনো খেলোয়াড় আনেনি রিয়াল। লা লিগায় বার্সেলোনা থেকে ১৭ পয়েন্ট পিছিয়ে মৌসুম শেষ করে এ দায় মিটিয়েছে তারা। এবারও রিয়াল কোনো পরিপূর্ণ সেন্টারব্যাক কেনেনি। কিন্তু সার্জিও রামোস কিংবা রাফায়েল ভারানের বিকল্প যে দরকার সেটা গতকাল আবারও বোঝা গেছে। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই লম্বা এক ক্রস আসে রিয়াল ডি-বক্সের বাইরে। ডিয়েগো কস্তার সঙ্গে বল দখলে লড়াইয়ে হাস্যকরভাবে হেরে যান রামোস। বল নিয়ে বক্সের ডান কোণে ঢুকে পড়া কস্তা দুরূহ কোণ থেকেই দলকে এগিয়ে দেন।

এরপরও রিয়াল ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ৭৯ মিনিটে আরেকটি হাস্যকর ভুল করে রিয়াল। মাঠের বাঁ প্রান্ত দিয়ে একটি বল বাইরে চলে যাচ্ছিল। থ্রো ইন বাঁচাতে এগিয়ে গেলেন মার্সেলো। পেছনে প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড় আছে কি না, সেটার দিকে নজর না দিয়ে বল ফেরত পাঠালেন মাঠে। হুয়ানফ্রান সে বল পেয়ে কোরেয়াকে দিতে বাকি কাজটা সেরে নিয়েছেন কস্তা।

সলের সে দুর্দান্ত গোল, কিন্তু এতে রিয়াল রক্ষণের দায়ই বেশি। ছবি: রয়টার্স
সলের সে দুর্দান্ত গোল, কিন্তু এতে রিয়াল রক্ষণের দায়ই বেশি। ছবি: রয়টার্স

প্রথম দুটো ভুল যদি অস্বস্তির কাটা হয়ে থাকে নতুন কোচ হুয়ান লোপেতেগির কাছে, তৃতীয়টি রীতিমতো দুঃস্বপ্ন। ৯৮ মিনিটে নিজেদের বক্সের ভেতরে বল পেয়ে রামোস আয়েশ করেই বল দিয়েছেন রাফায়েল ভারানেকে। সে বল ধরতে একটু রয়েসয়েই এগোচ্ছিলেন ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার। সামনে থাকা কস্তা নিরাপদ দূরত্বে ছিলেন বলেই হয়তো। কিন্তু তাঁর পেছন থেকে টমাস পার্টে বল কেড়ে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়লেন। পার্টের পাস থেকে দুর্দান্ত এক ভলিতে সল নিগেজের গোল। অসাধারণ এক গোল সন্দেহ নেই, কিন্তু ভারানের হাস্যকর ও অবিশ্বাস্য ওই ভুল না হলে সে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় না।

রক্ষণের চারজনের মধ্যে তিনজনই ভুল করেছেন, দানি কারভাহালই-বা বাদ যাবেন কেন? ১০৪ মিনিটে ডান দিকে একটা বল দখলের চেষ্টায় কস্তার আলতো ছোঁয়াতেই পড়ে যান। ফাউল আদায়ের চেষ্টা আরকি! কিন্তু তাঁর এই নাটকে রিয়াল রক্ষণের একজন কমে যায়। বাড়তি এক খেলোয়াড়ের সুবিধা নিয়ে রামোস-ভারানেকে দর্শক বানিয়ে কোকের গোল। ওতেই নিশ্চিত হয়েছে, এবার আর অ্যাটলেটিকোকে খালি হাতে ফিরতে হবে না রিয়ালের বিপক্ষে।

দলবদলের বাজারে আর নতুন খেলোয়াড় না কেনারই ইঙ্গিত রিয়ালের। সে ক্ষেত্রে রক্ষণে এবারও কোনো বিকল্প নেই রিয়ালের। শেষ ভরসা হিসেবে নতুন আবির্ভাব গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে ভরসা মানতে চাইতে পারেন লোপেতেগি। কিন্তু গতকালের চার গোলের একটিতেও কেইলর নাভাসের করার কিছু ছিল না। রক্ষণের এমন হাস্যকর ভুলের পর গোলরক্ষকের পক্ষে বেশি কিছু করা সম্ভব নয়।

উয়েফা সুপার কাপ একটি ট্রফিই। এ ম্যাচ দিয়ে মৌসুমের বাকি কিছুরই প্রমাণ মেলে না। গতবার স্প্যানিশ ও উয়েফা সুপার কাপ জিতে মৌসুম শুরু করা রিয়াল পরে লিগ ও কোপা দেল রেতে পথ হারিয়েছে। এবারে উল্টোটাও হতে পারে। কিন্তু রিয়াল রক্ষণ কাল যা দেখিয়েছে, তাতে রোনালদোর গোল এনে দেওয়ার কাজটা কে করবে, সেটার চেয়ে প্রতিপক্ষের গোল কে আটকাবে, সে প্রশ্নটাই বড় হয়ে উঠছে।