অভিষেকে কী রোমাঞ্চ দেখলেন রোনালদো!

রোনালদো নয়, সতীর্থদের এমন বুনো উল্লাসের কেন্দ্রে বার্নারদেস্কি (৩৩ নম্বর জার্সি)। ছবি: রয়টার্স
রোনালদো নয়, সতীর্থদের এমন বুনো উল্লাসের কেন্দ্রে বার্নারদেস্কি (৩৩ নম্বর জার্সি)। ছবি: রয়টার্স
>
অভিষেকে জুভেন্টাসকে ৩-২ গোলের নাটকীয় জয় পেতে দেখলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। যদিও তিন গোলের একটিতেও ভূমিকা নেই তাঁর। যোগ করা সময়ে গোল করে রোনালদোকে আড়ালে ঠেলে নায়ক হয়ে গেছেন অখ্যাত ফেদেরিকো বার্নারদেস্কি


তো আপনাদের অনুমান কী? ম্যাচ শুরুর আগে সনি টেনের ফুটবল এক্সট্রার উপস্থাপক জিজ্ঞেস করলেন দুই বিশ্লেষককে। একজন বললেন ৩-০, আরেকজন ৪-০। জুভেন্টাসের অনায়াস জয়, সঙ্গে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জোড়া গোল।

টানা সাতবারের লিগ চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে গতবার ১৩ হওয়া শিয়েভোর লড়াই। রোনালদোর জন্য মঞ্চ প্রস্তুত। জুভেন্টাস শুরুটাও করল দারুণ। ৩ মিনিটের মধ্যেই জটলার ভেতর থেকে ফিরতি বলে স্যামি খেদিরার সাইড ভলিতে ১-০। জুভেন্টাসের একের পর এক আক্রমণ চলল প্রথম ১০ মিনিটে। কিন্তু সেই ম্যাচের রং এমনভাবে বদলে গেল, জুভেন্টাসকে পিছিয়ে থেকে সমতায় ফিরতে হলো আত্মঘাতী গোলে। আর নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে এগোতে থাকা ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জুভরাই জিতল, যে গোল এল ৯৩তম মিনিটে! ম্যাচের নায়ক? রোনালদো নয়, অখ্যাত ফেদেরিকো বার্নারদেস্কি! জুভেন্টাসের তিন গোলের একটিতেও রোনালদোর ভূমিকা নেই; বরং ভিএআর-এর সিদ্ধান্তে মারিও মানজুকিচের একটি গোল বাতিলে রেখেছেন নেতিবাচক ভূমিকা।

রোনালদোর অভিষেক বলে এই ম্যাচে বিশ্বজোড়া চোখ ছিল। নিশ্চিতভাবে বলে দেওয়া যায়, নব্বইয়ের দশকের সেই শীর্ষ জনপ্রিয়তার দিনগুলো হারিয়ে ফেলা ইতালিয়ান লিগ কাল আবারও সেই সোনালি দিনের আমেজ ফিরে পেয়েছিল। টিভি দর্শকের সংখ্যা অন্তত কয়েক গুণ গিয়েছিল বেড়ে। শুধু একটি নামের কারণে। কিন্তু যাঁকে ঘিরে এত উন্মাদনা, সেই রোনালদো বুঝলেন, ইতালিয়ান লিগে মানিয়ে নেওয়াটা অত সহজ হবে না।

এটাই স্বাভাবিক। টানা নয় বছর এক ক্লাবে খেলেছেন। চোখ বেঁধে দিলেও রোনালদো রিয়ালের জার্সিতে খেলতে পারতেন। বলতে পারতেন, এখন ক্রসটা কোন দিক থেকে আসবে। বলতে পারতেন, মার্সেলো কোথায়, ক্রুস কোথায়, বেল কোথায়, বেনজেমা কোথায়। নতুন ক্লাব, নতুন লিগ আর নতুন খেলার ধরনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় তো লাগবেই। তা ছাড়া জুভেন্টাসের সতীর্থদের সঙ্গে এর আগে খেলেছেনই মাত্র একটি অগুরুত্বপূর্ণ প্রীতি ম্যাচ। বোঝাপড়া তৈরি এত সহজ তো নয়।

তবে নামটা রোনালদো বলেই আরও একটা রূপকথা অনেকে প্রত্যাশা করেছিলেন। রোনালদো নিজেও হতাশ, তা স্পষ্ট বোঝা গেছে। যদিও গল্পটা অন্যভাবে লেখা হতো, ৬৬ মিনিটে শিয়েভো গোলরক্ষক অমন প্রাচীর হয়ে না দাঁড়িয়ে গেলে।

রোনালদোর দারুণ দুটি শট ঠেকিয়েছেন সরেন্তিনো। ছবিটাই বলছে, রোনালদোকে ঠেকাতে জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলেন শিয়েভো গোলরক্ষক। এই ফাউলের কারণে জুভদের গোল বাতিলও হয়েছে। ছবি: এএফপি
রোনালদোর দারুণ দুটি শট ঠেকিয়েছেন সরেন্তিনো। ছবিটাই বলছে, রোনালদোকে ঠেকাতে জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলেন শিয়েভো গোলরক্ষক। এই ফাউলের কারণে জুভদের গোল বাতিলও হয়েছে। ছবি: এএফপি

জুভেন্টাস তখন মরিয়া হয়ে মুক্তির পথ খুঁজছে। খেদিরার সেই গোলের পর ৩৮ মিনিটে গোল হজম করে সমতায় শুধু ফেরেনি, ৫৬ মিনিটে পেনাল্টি হজম করে পিছিয়েও পড়েছে। ২-১-এ এগিয়ে থাকা শিয়েভো তখন রোনালদোকে দেখাচ্ছেন, ইতালিয়ান রক্ষণ কেন এত বিখ্যাত। কিছুতেই ভাঙা যাচ্ছে না তাদের। জুভেন্টাসকে নিজেদের রক্ষণে আক্রমণ সাজাতেই দিচ্ছে না শিয়েভো।

দলগত আক্রমণ যখন কাজে দেয় না, এমন সময় যা দরকার হয়, একক কোনো জাদুকরি মুহূর্ত, যে মুহূর্ত রোনালদো তাঁর ক্যারিয়ারে অসংখ্যবার দিয়েছেন জাতীয় দল আর ক্লাবের জার্সিতে, সে রকম একটা মুহূর্তের জন্মই হতে চলেছিল। ৬৫ মিনিটে টার্ন আর ড্রিবলে তিন ডিফেন্ডারকে ধন্দে ফেলে দিয়ে রোনালদো জোরালো শট নিলেন। কিন্তু গোলরক্ষক সরেন্তিনো সটান ডানে ঝাঁপিয়ে হাত বাড়িয়ে ঠেকিয়ে দিলেন শট।

শেষ পর্যন্ত জুভেন্টাসকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচাল ৭৫ মিনিটে মাত্তিয়া বানির আত্মঘাতী গোল। রোনালদো আবারও নায়ক হয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেন। কিন্তু এবারও, ৭৭ মিনিটে, রোনালদোর আরও একটি পাস ঠেকিয়ে দিলেন সরেন্তিনো। জয়সূচক গোলটি রোনালদোর নামে লেখা হলে কেমন উন্মাদনা হতো, কল্পনা করুন! নায়ক তো হতে দিলেনই না, বরং রোনালদোকে খলনায়কই বানিয়ে দিচ্ছিলেন সরেন্তিনো।

জয় দিয়ে টানা অষ্টম শিরোপার মিশন শুরু করতে মরিয়া জুভেন্টাস তখন হন্যে হয়ে খুঁজছে আর একটি গোল। ৮৮ মিনিটে সেই গোল পেয়েও গেল তুরিনের বুড়িরা। মারিও মানজুকিচের সৌজন্যে। রেফারি গোলের বাঁশি বাজিয়েও দিলেন। কিন্তু শিয়েভো খেলোয়াড়দের আপত্তির মুখে রেফারিকে যেতে হলো ভিএআরে। দেখা গেল, রোনালদো ফাউল করেছেন সরেন্তিনো। ভালোই লেগেছিল শিয়েভো গোলরক্ষকের। বেশ কিছুক্ষণ শুশ্রূষাও নিতে হয়েছে।

পুরো ম্যাচে খেললেও রোনালদোর নায়ক হওয়া আর হচ্ছে না! এ-ই যখন প্রায় নিশ্চিত, সেই সময় নায়কের ভূমিকায় বদলি হিসেবে নামা বার্নারদেস্কি। জুভেন্টাসের জার্সিতে নিজের ষষ্ঠ গোল করেই ছিনিয়ে আনলেন ৩ পয়েন্ট। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে বলেই নাটকটা জমল আরও বেশি।

নিজে গোল পাননি, তবে অভিষেকেই ইতালিয়ান লিগের রোমাঞ্চের স্বাদ পেলেন। গোলের স্বাদও রোনালদো পেয়ে যাবেন শিগগিরই!