'মৃত্যুকূপ'-এ সালাহ, নেইমার, মেসি আর রোনালদোও !

ড্র অনুষ্ঠানে কাকার হাতে বার্সেলোনার নাম। বেশ কঠিন গ্রুপে পড়েছে কাতালান ক্লাবটি। ছবি: এএফপি
ড্র অনুষ্ঠানে কাকার হাতে বার্সেলোনার নাম। বেশ কঠিন গ্রুপে পড়েছে কাতালান ক্লাবটি। ছবি: এএফপি
>মোনাকোয় কাল অনুষ্ঠিত হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ নতুন মৌসুমের গ্রুপ পর্বের ড্র। বিশ্লেষকদের মতে, এবার ‘মৃত্যুকূপ’ একটির বেশি।

গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষ দলগুলো নিশ্চিত হওয়ার পরই হুংকার ছেড়েছেন ইয়ুর্গেন ক্লপ, ‘এটি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বাকি দলগুলোর জন্য আমাদের মুখোমুখি হওয়াও বড় চ্যালেঞ্জ।’ ময়দানি লড়াই শুরুর আগেই ক্লপের এই হুংকার ছাড়ার কারণ চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপ পর্বে এবার লিভারপুলের তিন প্রতিপক্ষই ভীষণ শক্ত। নামগুলো একবার দেখুন—পিএসজি, নাপোলি ও রেড স্টার বেলগ্রেড।

শেষ দলটির নাম একটু অচেনা ঠেকতে পারে। সার্বিয়ার এই দলটি যুগোস্লাভিয়া থাকতে ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাবের মর্যাদা পেয়েছিল। ১৯৯১ সালে তাঁরা জিতেছিল ইউরোপসেরার মুকুটও। চ্যাম্পিয়নস লিগ সংস্করণ চালুর পর এবারই প্রথমবারের মতো গ্রুপ পর্বে উঠে এসেছে রেড স্টার। তাই বলে দলটিকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। তারুণ্যদীপ্ত রেড স্টার যে বাকি তিন প্রতিপক্ষেরই কঠিন পরীক্ষা নেবে, তা বলাই বাহুল্য। গ্রুপ পর্বে সেয়ানে সেয়ানে লড়াইয়ে আভাস পেয়েই ক্লপ বোধ হয় হুমকি দিয়ে রাখলেন আগেই। বাকিটা মাঠে ফলানোর চ্যালেঞ্জ মো সালাহদের।

চ্যাম্পিয়নস লিগে এবার অনেকের কাছেই ‘সি’ গ্রুপটা ‘মৃত্যুকূপ’। এক গ্রুপেই তিন প্রতিষ্ঠিত শক্তির (লিভারপুল, নাপোলি ও পিএসজি) সঙ্গে ‘ডার্ক হর্স’ রেড স্টার। তবে এবার মোট আটটি গ্রুপের মধ্যে শুধু ‘সি’ গ্রুপকেই ‘মৃত্যুকূপ’ ভাবলে ভুল হবে। মজাটা ঠিক এখানেই। বিশ্লেষকদের মতে, চ্যাম্পিয়নস লিগে এবার মৃত্যুকূপ একটা নয়। দুটি কিংবা তিনটি!

গ্রুপপর্বের দলগুলো ভালোমতো দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। প্রতিটি বড় টুর্নামেন্টেই অন্তত একটি করে ‘গ্রুপ অব ডেথ’ খুঁজে বের করা হয়। এবার ইউরোপসেরার এই টুর্নামেন্টে সে কষ্টটুকু করতে হচ্ছে না। কারণ, আটটি গ্রুপ দেখলেই তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। ‘বি’ গ্রুপের কথাই ধরুন—বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, টটেনহাম ও পিএসভি। কোনো গ্রুপে সাধারণ দুটি বড় দল থাকলেই তাঁকে ‘মৃত্যুকূপ’ বলে ধরে নেওয়া হয় সেখানে ‘সি’ এ ‘বি’ গ্রুপে বড় দল তিনটি করে।

‘সি’ গ্রুপের নাপোলি ও ‘বি’ গ্রুপের টটেনহামকে ছোট ভাবাটা বোকামি। ইউরোপের অনেক বাঘা বাঘা দলকেই তাঁরা ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে। এদিকে ‘বি’ পিএসভিকে ভুলে গেলে চলবে না। তাঁরা কিন্তু ডাচ লিগের চ্যাম্পিয়ন। লিওনেল মেসি-লুই সুয়ারেজদের যে এবার গ্রুপপর্বেই কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে সে কথা বলাই বাহুল্য।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-পল পগবাদের গ্রুপটাও মোটেও সহজ নয়। ‘এইচ’ গ্রুপ থেকে রোনালদোর জুভেন্টাসের মুখোমুখি হবে পগবার ইউনাইটেড। এই গ্রুপের সমীকরণ কিন্তু রোনালদোর ‘পুনর্মিলনী’র সুযোগ করে দিয়েছে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে থাকতেই তারকাখ্যাতির রাস্তা খুঁজে পেয়েছিলেন রোনালদো। এবার ইউনাইটেডের সেই মাঠে রোনালদোকে নামতে হবে তাঁর সাবেক ক্লাবকে হারানোর পণ করে।

‘এইচ’ গ্রুপের বাকি দুই দল ছয় বারের লা লিগা চ্যাম্পিয়ন ভ্যালেন্সিয়া ও সুইজারল্যান্ডের অন্যতম সফল ক্লাব ইয়াং বয়েজ। শেষ দলটি অতটা শক্তিশালী না হলেও তাঁদের কিন্তু ইউরোপসেরার মঞ্চে সেমিফাইনাল খেলার অতীত রয়েছে। কে জানে, পচা শামুকে পা কাটতেও পারে! চ্যাম্পিয়নস লিগ মানেই তো চমকের পর চমক আর গ্রুপপর্বে তার দেখা যায় সবচেয়ে বেশি।

বার্সেলোনার চেয়ে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাটলেটিকো। ‘জি’ গ্রুপে রিয়ালের তিন প্রতিপক্ষ এএস রোমা, সিএসকেএ মস্কো ও ভিক্টোরিয়া প্লাজেন। ‘লস ব্লাঙ্কোস’ সমর্থকেরা এখনই শেষ ষোলো দেখতে পেলে সেটি কিন্তু মোটেও বাড়াবাড়ি হবে না। তাঁদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকোর প্রতিপক্ষ তুলনামূলক শক্ত। ‘এ’ গ্রুপে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, মোনাকো ও ক্লাব ব্রুগের মুখোমুখি হতে হবে ডিয়েগো সিমিওনের দলকে। এই তিন ক্লাবের মধ্যে ডর্টমুন্ড ও মোনাকো যে কোনো ক্লাবের পরীক্ষা নিতে পারে তা ফুটবলপ্রেমীরা মাত্রই জানেন। তবে বার্সার তিন প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকোর গ্রুপের তুলনায় কঠিন।

‘ই’ গ্রুপ থেকে শেষ ষোলোয় উঠতে বায়ার্ন মিউনিখেরও তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বেনফিকা, আয়াক্স ও গ্রিসের দল এইকে এথেন্সের মুখোমুখি হতে হবে বুন্দেসলিগা জয়ীদের। তবে এবার দু-তিনটি গ্রুপে একসঙ্গে তিনটি করে বড় দল পড়ায় মজাটা বেড়ে যাবে। কারণ প্রতিটি গ্রুপ থেকে শেষ ষোলোয় উঠবে দুটি করে দল। অর্থাৎ গ্রুপপর্বেই বড় দলগুলোর পতন দেখা যাবে। ইউরোপসেরার এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখতে তাহলে প্রস্তুত হয়ে যান। চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের টুর্নামেন্ট শুরু হবে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে।