আইসক্রিম বিক্রেতা থেকে 'দামী' ফুটবলার রিচার্লিসন

রিচার্লিসন, সালভাদরের বিপক্ষে গোল করার পর। ছবি: রয়টার্স
রিচার্লিসন, সালভাদরের বিপক্ষে গোল করার পর। ছবি: রয়টার্স
>

এল সালভাদরের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিলের প্রথম একাদশে অভিষিক্ত হন রিচার্লিসন। এভারটনের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি এই ফরোয়ার্ড জানালেন তাঁর ফেলে আসা জীবনের দিনগুলোর গল্প।

খেলোয়াড় কিনতে ক্লাবের খরচের ইতিহাস নতুন করে লিখিয়ে রিচার্লিসনকে কিনেছিল এভারটন। দলটির ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়টি তিন ম্যাচে তিন গোল করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দারুণ শুরু করেছেন। জাতীয় দলের হয়েও শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। প্রথম একাদশের হয়ে অভিষেকেই জোড়া গোল। এভারটন হয়তো বুঝে গেছে, রিচার্লিসনের জন্য খরচ করা ৪৫ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি জলে যায়নি।

মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ব্রাজিলের দ্বিতীয় বিভাগ থেকে ইংল্যান্ডের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন রিচার্লিসন। ২১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড কাল এল সালভাদরের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে অভিষিক্ত হন ব্রাজিলের প্রথম একাদশে। সেই ম্যাচে জোড়া গোল করে আলোচনায় উঠে এসেছেন রিচার্লিসন। অথচ তাঁর উঠে আসার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। অনেক চড়াই-উতরাই গেছে জীবনের ওপর দিয়ে। রিচার্লিসনের ভাষায়, ‘কতগুলো ক্লাব আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে তা গুণে বলতে পারব না। কারণ আমার হাতে অত আঙুল নেই। একপর্যায়ে ফুটবল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম।’

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের ফেলে আসা পথ নিয়ে এমন খোলামেলা কথাই বলেছেন রিচার্লিসন। খেলা ছাড়া না ছাড়ার দ্বিধায় ভোগার মধ্যেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বেলো হরিজেন্তে যাবেন, শেষবারের মতো ট্রায়াল দিতে। পকেটে শুধু যাওয়ার ভাড়াটা নিয়ে বেলো হরিজেন্তে গিয়ে আমেরিকা ফুটবল ক্লাবে (এমজি) গিয়ে ট্রায়াল দিয়ে টিকে যান রিচার্লিসন। সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তাঁর উপলব্ধি, ‘ট্রায়ালে না টিকলে বাসায় ফিরতে পারতাম না। সেখান থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে ছিল আমার বাসা। এখন ভাবি তখন হাল ছেড়ে দিলে আজ এখানে আসতে পারতাম না।’

ব্রাজিলের আর দশজন ফুটবলার মতোই দারিদ্র্যর সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে উঠেছেন রিচার্লিসন। বাসা থেকে অনুশীলনস্থল দূরে ছিল তাই থাকতে হয়েছে চাচার বাসায়। অনুশীলনে যাওয়ার বাস ভাড়া ছিল না। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খারাপ হয়ে উঠেছিল। খেলার খরচ আর পরিবারকে সাহায্য করতে রিচার্লিসনকে তাই ফেরিওয়ালাও হতে হয়েছে। তাঁর মুখেই শুনুন, ‘অনুশীলন করার জায়গা দূরে হওয়ায় চাচার বাসায় থেকেছি। অনুশীলনে যাওয়ার বাস ভাড়া থাকত না। পারিবারিক অবস্থাও ভালো ছিল না। তাই রাস্তায় মিষ্টান্ন দ্রব্য আর আইসক্রিম ফেরি করেছি পরিবারকে সাহায্য করতে। এসব করতেই হতো। কারণ পরিবারের জন্য সবাই যে কোনো কিছুই করতে পারে।’

ফুটবলে রিচার্লিসনের শৈশবের নায়ক তাঁর বাবা ও চাচা। দুজনেই ব্রাজিলের স্থানীয় ফুটবলে খেলেছেন। তবে পেশাদার ফুটবলে তাঁর আদর্শ ‘ও ফেনোমেনো’। রোনালদো। কিংবদন্তি এই খেলোয়াড়কে রিচার্লিসন বলতে গেলে অনুকরণই করার চেষ্টা করেন, ‘মাঠে নামার আগে সবারই কিছু সংস্কার থাকে। আমি যেমন ম্যাচ খেলতে যাওয়ার পথে ট্যাবলেটে তাঁর (রোনালদো) গোলের ভিডিও দেখি। এটা আমাকে প্রেরণা জোগায়।’