শিখর-ঝড়েও তিন শ হলো না ভারতের

সেঞ্চুরি করে আউট হওয়া শিখরের সঙ্গে হাত মেলাতে এগিয়ে এলেন হংকংয়ের খেলোয়াড়েরা। ছবি: এএফপি
সেঞ্চুরি করে আউট হওয়া শিখরের সঙ্গে হাত মেলাতে এগিয়ে এলেন হংকংয়ের খেলোয়াড়েরা। ছবি: এএফপি
>হংকংয়ের বিপক্ষে আজ এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে ২৮৫ রান তুলেছে ভারত। সেঞ্চুরি তুলে নেন শিখর ধাওয়ান

রাত পোহালেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখোমুখি হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। তার আগে হংকংয়ের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের ‘ড্রেস রিহার্সেল’ ভালোই সেরে নিল ভারত। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ২৮৫ রান তুলেছে রোহিত শর্মার দল।

শক্তিতে দুই দলের আকাশ-পাতাল ফারাক। ভারত ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় আর হংকং এ বছরই ওয়ানডে মর্যাদা হারিয়েছে। ক্রিকেটের পথচলায় দুই মেরুতে অবস্থান করা এ দুটি দলের লড়াইটা যে একপেশে হবে, তা বলাই বাহুল্য। টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে হংকং অধিনায়ক অংশুমান রাঠ সেই লড়াই একপেশে করে দিলেন কি না, সে প্রশ্ন থাকবে।

এশিয়া কাপে এর আগে দুটি ম্যাচে পরে ব্যাটিংয়ে নামা দল জেতা দূরে থাক, দুই শ রানও পার করতে পারেনি। তুলনামূলক দুর্বল বোলিংয়ের বিপক্ষে ভারতের তারকাখচিত ব্যাটসম্যানদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠালে কী ঘটতে পারে, সেটাই দেখা গেল আজ দুবাই স্টেডিয়ামে। দলীয় সংগ্রহ পঞ্চাশ ছোঁয়ার আগেই অধিনায়ক রোহিত শর্মা ফিরে গেলেও ভারতের বড় স্কোর দাঁড় করাতে সমস্যা হয়নি। ১২০ বলে ১২৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন ধাওয়ান। ৬০ রান এসেছে অম্বতি রাইড়ুর ব্যাট থেকে।

টানা দুই দিনে দুটি ম্যাচ খেলতে হচ্ছে ভারতকে। হংকংয়ের বিপক্ষে তাই গুঞ্জন উঠেছিল, ভারতের কজন তারকা ব্যাটসম্যান বিশ্রাম পেতে পারেন। কিন্তু সেটি হয়নি। রোহিত, ধাওয়ান, রাইড়ু, ধোনি ও দীনেশ কার্তিকদের নিয়ে শক্তিশালি দলই গঠন করেছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। হংকং ‘ছায়া পাকিস্তান’ দল হওয়ায় সম্ভবত সিনিয়রদের খেলিয়ে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার মহড়াটা ভালোভাবে সারতে চেয়েছে তাঁরা। আজকের হংকং একাদশে সাত খেলোয়াড়ই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত।

ভারতের এই দলটার দুবাইয়ে এর আগে খেলার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। এদিক বিচারে দুবাই স্টেডিয়ামে ভারতের ব্যাটসম্যানদের অভিষেকটা দারুণই হলো। যদিও রোহিতের দুঃখ থাকবে ইনিংস বড় করতে না পারার জন্য। ভারতীয় ওপেনার হিসেবে আজ ছিল তাঁর শততম ম্যাচ। এমন ম্যাচে হংকংয়ের স্পিনার এহসান খানকে অযথা উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন রোহিত (২৩)। এশিয়া কাপে আজসহ সর্বশেষ মোট পাঁচ ম্যাচে ০, ১৫, ৩৯, ১, ২৩।

কিন্তু ধাওয়ানকে কেউ থামাতে পারেনি। ৫৭ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার পর মোট ১০৫ বলে সেঞ্চুরির দেখা পান ভারতের এই ওপেনার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ ইনিংস পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন ধাওয়ান। সেটিও আবার তাঁর ক্যারিয়ারের ১৪তম সেঞ্চুরি। ১৫ চার ও ২ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি।

৪০ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ২৩৭। এখান থেকে তিন শ টপকে যাওয়া কোনো ব্যাপারই ছিল না। কিন্তু ৪১তম ওভারে ধাওয়ানকে হংকং স্পিনার কিঞ্চিত শাহ তুলে নেওয়ার পর ভারতের রানের চাকা সেভাবে ঘোরেনি। শেষ ৬০ বলে ভারতের সংগ্রহ মাত্র ৪৮! অথচ প্রথম ১০ ওভারে ছিল ৫৬/১, ২০ ওভার শেষে ১০৯/১ আর ৩০ ওভার শেষে ১৬৩/২। দলীয় স্কোর সাড়ে তিন শ ছোঁয়ার দুর্দান্ত ভিত্তি পেয়েও শেষটা ভালোভাবে ‘ফিনিশ’ করতে পারেননি ধোনি-কার্তিকরা।

সে জন্য পুরো কৃতিত্বই হংকংয়ের বোলারদের। শেষ ১০ ওভারে দারুণ বোলিং করেছে তাঁরা। দ্বিতীয় উইকেটে রাইড়ু-ধাওয়ানের ১৩০ বলে ১১৬ রানের জুটিতে সাড় তিন শ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছিল ভারত। রাইড়ু ফিরে যাওয়ার পর কার্তিকের সঙ্গে আরও ৭৯ রানের জুটি গড়েছেন ধাওয়ান। কিন্তু ধাওয়ান ফিরে যাওয়ার পর ছোট্ট একটা মড়ক লেগেছিল ভারতের ব্যাটিং অর্ডারে।

ম্যাচের আগে ভারতের অধিনায়ক রোহিত দলের মিডল অর্ডার নিয়ে দুর্ভাবনার কথা বলেছিলেন। হংকংয়ের মতো দলের বিপক্ষেও সত্যি হয়েছে রোহিতের দুশ্চিন্তা। মহেন্দ্র সিং ধোনি ফিরেছেন কোনো রান না করেই। কার্তিকও (৩৩) তাঁর ইনিংসকে লম্বা করতে পারেননি। কেদার যাদব ২৭ বলে ২৮ রান করে অপরাজিত থাকলেও অন্য প্রান্তে ভুবনেশ্বর কুমার (৯) ও শার্দুল ঠাকুর (০) আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। হংকং মোট সাত বোলার ব্যবহার করলেও ৯ ওভারে ৩৯ রানে ৩ উইকেট নেওয়া কিঞ্চিত শাহ সতীর্থদের ছাপিয়ে গেছেন। ২ উইকেট নেন এহসান খান।