আমরা কেউ বীর-পালোয়ান ছিলাম না

আজ দুবাইয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে সাকিব আল হাসান। ছবি: বিসিবি
আজ দুবাইয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে সাকিব আল হাসান। ছবি: বিসিবি
>গত দুই বছরে বাংলাদেশের অধিকাংশ সাফল্য এসেছে সিনিয়র পাঁচ খেলোয়াড়ের হাত ধরে। এ পাঁচজন ভালো না করলেই দলের চেহারাটা হয়ে যায় মলিন। তরুণেরা কেন ভালো করতে পারছেন না, প্রশ্নটা আজও শুনতে হলো সাকিবকে।

তরুণদের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। গত দুই বছরে বাংলাদেশের অধিকাংশ সাফল্য এসেছে পঞ্চপাণ্ডবের হাত ধরে। ব্যাটিংয়ে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসান। বোলিংয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গী সাকিব। এ পাঁচজন ভালো না করলেই দলের চেহারাটা হয়ে যায় মলিন, আটকে পড়ে হারের বৃত্তে। এশিয়া কাপে গত দুই ম্যাচে যেটি হয়েছে। সিনিয়রদের সঙ্গে তরুণেরা যদি সমান জ্বলে উঠতেন, ম্যাচের ফল অন্য রকম হতে পারত—প্রসঙ্গটা আজও উঠল সাকিব আল হাসানের সংবাদ সম্মেলনে।

সাকিবের সংবাদ সম্মেলনে কথাটা উঠেছে হঠাৎ সৌম্য সরকার-ইমরুল কায়েসের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে। রান পাচ্ছেন না লিটন দাস, প্রথমবারের ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়ে হতাশ করেছেন নাজমুল হোসেনও। এতেই হঠাৎ উড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে দুই ওপেনার সৌম্য-ইমরুলকে। দলে নতুন করে দুই ওপেনারের অন্তর্ভুক্তি কীভাবে দেখছেন সাকিব? বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের সহ-অধিনায়ক একটু ভাবলেন। বললেন, ‘একটু অস্বাভাবিক। এমন সাধারণত হয় না। তবে দলের প্রয়োজনে বা যেকোনো পরিস্থিতি নেওয়া যেতে পারে।’

যাঁরা দলে যোগ হচ্ছেন, তাঁদের নেওয়াই হচ্ছে দুই তরুণ ওপেনার ব্যর্থ হওয়ায়। এই কথাটা শুনতে শুনতে দলের খেলোয়াড়দের কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়। তবুও শুনতে হচ্ছে। শুনতে হবে যত দিন তরুণেরা ধারাবাহিক ভালো না খেলছেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ভালোই খেলেছিল সিনিয়রদের সঙ্গে তরুণেরা সমান তালে ভালো খেলছিলেন বলে। গত দুই বছরে তাঁদের কী হলো যে ধারাবাহিক ভালো করতে পারছেন না? দলের অন্য সিনিয়র খেলোয়াড়দের মতো সাকিবও আগলে রাখছেন জুনিয়রদের, ‘আমরা ওদের ওপর অল্প সময়ে এত চাপ দিয়ে ফেলি যে ভালো করার সম্ভাবনা কমে যায়। যাদের কথা বলছেন অর্থাৎ আমরা চার-পাঁচজন (মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমদুউল্লাহ), আমরা কিন্তু কেউ বীর-পালোয়ান ছিলাম না! গত দুই-তিন-চার বছরের পারফরম্যান্স দেখছেন। এর আগে ছয়-সাত-আট বছর আমরাই-বা কত ভালো ক্রিকেট খেলেছি? একটা পরিস্থিতিতে পড়তে পড়তে যখন শিখবে, তখন তারা ভালো করবে। আমরা হয়তো তাদের ওই সুযোগটা দিতে পারছি না। এতে ওদের ভালো করা কঠিন।’

এটা ঠিক সাকিব-তামিম-মুশফিক এসেই যে দুর্দান্ত খেলোয়াড় হয়ে গিয়েছিলেন, তা নয়। তবে সময়ের সঙ্গে দ্রুত নিজেদের দলের অপরিহার্য সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশের ক্রিকেট আজ যে পর্যায়ে এসেছে, তাতে সাকিবদের বড় অবদান। গত তিন-চার বছরে যাঁরা দলে এসেছেন, তাঁদের নিশ্চয়ই সাকিব-তামিমদের মতো কঠিন পরিস্থিততে খেলতে হয়নি। দলকে আরও ভালো পর্যায়ে নিয়ে যেতে তরুণদের দরকার ছিল শুধু সিনিয়রদের সমর্থন করা। সেটি কি তাঁরা করতে পেরেছেন? সাকিব মানছেন, তরুণেরা আরেকটু ভালো করলে আরও ভালো অবস্থানে থাকত দল। তাইতো এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, ‘হয়তো ওরা আরেকটু বেশি করলে ভালো হতো। তারা যখন ভালো করেছে, দল তখন বেশি ভালো করেছে। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা বা পাকিস্তানের বিপক্ষে যখন সিরিজ (ওয়ানডে) জিতেছি (২০১৫ সালে), তখন তরুণ খেলোয়াড়দের অবদান অনেক বেশি ছিল। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আরও ভালো হতো। সেটা হয়নি। এখান থেকে উতরে যাওয়ার জায়গা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’