মাশরাফি ভাই বলেছেন, যুদ্ধে নামলে পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই

মুশফিকুর রহিম। ছবি: এএফপি
মুশফিকুর রহিম। ছবি: এএফপি
>সাকিব-তামিমকে ছাড়াই পাকিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা–মরার ম্যাচটা জিতে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম জানালেন, মাঠে নামার আগে সতীর্থদের কানে লড়াইয়ের মন্ত্রণা দিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। কী সেই মন্ত্রণা?

হারলেই বাদ। ম্যাচটা তাই হয়ে ওঠে বাঁচা–মরার লড়াই। এমন লড়াইয়ে নেই সাকিব-তামিম। যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েক খেলোয়াড়ের চোট। লড়াইয়ের জন্য মানসিক শক্তির জায়গায় তাই দলের স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে থাকার কথা। কিন্তু মাঠে নামার আগে সতীর্থদের মনের মধ্যে লড়াইয়ের মন্ত্রণা প্রোথিত করে দিয়েছিলেন দলনেতা। মাশরাফি বলেছিলেন, ‘যুদ্ধে নামলে পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। গা বাঁচিয়ে চলা যায় না। হয় মারবি, নয় মরবি।’

খেলার সঙ্গে ‘যুদ্ধ’ শব্দটা ঠিক যায় না। কিন্তু দেশের হয়ে খেলতে নামলে অনেক সময়ই খেলোয়াড়দের কাছে ব্যাপারটা যুদ্ধে রূপ নেয়। আর এশিয়া কাপ তো এক অর্থে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের যুদ্ধই। সেখানে ময়দানি লড়াইয়ে নামার আগেই গুরুত্বপূর্ণ লোকবল হারালে মনটা খাটো হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের পর থেকেই নেই তামিম ইকবাল। আঙুলের চোট নিয়েই এরপর টানা তিন ম্যাচ খেলেছেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা–মরার লড়াইয়ে এসে আর পারেননি। আঙুলের যন্ত্রণা তাঁকে ছিটকে ফেলে এই ম্যাচ থেকে। মুশফিক পাঁজরের চোটের জন্য প্রথম ম্যাচে ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে খেলেছিলেন। কাল খেলেছেন পাঁজরের ব্যথা নিয়েই। আবুধাবির অসহ্য গরমে মোস্তাফিজের পায়ে মাংসপেশিতে টান ধরার হুমকিও নতুন কিছু নয়। এ ছাড়া দু-একজনের ছোটখাটো আরও চোট তো ছিলই। ময়দানি লড়াইয়ের আগে এই চোটজর্জর শিবিরকে মাশরাফি কীভাবে উদ্দীপ্ত করেছিলেন মুশফিকুর রহিম, সে কথাই জানালেন ম্যাচ–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে, ‘মাশরাফি ভাই সবাইকে একটা কথাই বলেছেন, আমরা যখন যুদ্ধে নেমে যাই, তখন পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। যুদ্ধে নেমে গা বাঁচিয়ে চলা যায় না। হয় মারবেন, না হয় মরবেন, যেকোনো একটা। এটা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা ফলাফল নিয়ে ভাবিনি। শতভাগ দেওয়া নিয়ে ভেবেছি। সবাই সবার শতভাগ দিতে পারলে দিন শেষে আমরাই জয় পাব।’

ঘটেছেও ঠিক তা–ই। ব্যাটিং দিয়ে শুরু করা যায়। হুড়মুড় করে ৩ উইকেট পড়ার পর মুশফিক-মিঠুনের ১৪৪ রানের সেই জুটি লড়াইয়ের রসদ জোগানোর ‘নিউক্লিয়াস’। আর বোলিংয়ে? শুধু একটা উদাহরণেই বিষয়টি পরিষ্কার—সাকিবের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞ একজন বোলার কম নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে ‘পঞ্চম বোলার’-এর দায়িত্বটা বুঝতে পেরেছিলেন দলের সবাই। মাহমুদউল্লাহ আর সৌম্য সরকার মিলে ‘পার্ট টাইম’ বোলার থেকে পুরোদস্তুর ‘বিশেষজ্ঞ’ বোলার হয়ে দায়িত্বটা কী দারুণভাবেই–না পালন করেছেন!

মাহমুদউল্লাহ ১০ ওভারে ৩৮ রান খরচায় নিয়েছেন ১ উইকেট। সৌম্য ৫ ওভারে ১ উইকেট নিয়েছেন ১৯ রান খরচায়। ফিল্ডিংয়ে কাল ভীষণ উদ্দীপ্ত ছিল দলের সবাই। পাঁজরে চোট নিয়েও সরফরাজ আহমেদের কী অসাধারণ ক্যাচটাই–না ধরেছেন মুশফিক। আর মাশরাফি বিন মুর্তজা? অধিনায়ক মাঠে নামার আগে শুধু সতীর্থদের উদ্দীপনাই জোগাননি মাঠের মধ্যে দলের জন্য নিজেকে নিবেদনের উদাহরণও সৃষ্টি করেছেন। শোয়েব মালিকের ক্যাচটা! চৌত্রিশে পৌঁছে সাতবার অস্ত্রোপচার করা দুটো পায়ে ভর করেও অমন ‘সুপারম্যান’সুলভ ক্যাচ ধরা যায়!

এই এশিয়া কাপে শোয়েব মালিক বরাবরই প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্য হুমকি। তাঁর ক্যাচটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল সে কথাই বেশ রসিকতার সুরে জানালেন মুশফিক, ‘তাঁকে আউট করাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর ক্যাচটা তো অবশ্যই দুর্দান্ত ছিল। আল্লাহর রহমতে আমরা বুড়ো বয়সেও দু-একটা ভালো ক্যাচ ধরতে পারছি। সেদিক থেকে অনেক খুশি, মাশরাফি ভাইও খুশি, আমিও।’

খুশি তো সবাই। কিন্তু আসল কাজটা যে এখনো বাকি? রাত পোহালেই দামামা বেজে উঠবে এশিয়া কাপ ফাইনালের। প্রতিপক্ষ সেই ভারত—যাদের বিপক্ষে স্বপ্নভঙ্গের খাতাটা দিন দিন ভারী হচ্ছে। কিন্তু মুশফিক শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী, ‘সম্ভব তো অবশ্যই। মানুষ আশায় বাঁচে। লক্ষ্য ছিল এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলব। তারপর চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে আমরা আমদের বেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারলে যেকোনো কিছু হতে পারে। আমাদের সামনে খুব ভালো সুযোগ আছে। আর ভারতের মতো দলকে হারানো অসম্ভব কিছু না। আমরা এর আগেও ওদের হারিয়েছি। এটা ঠিক, আমরা ধারাবাহিকভাবে তাদের সঙ্গে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারিনি। আর এটাও ভুললে চলবে না, তাঁরা কিন্তু ওয়ানডের সেরা দুই দলের একটি। আমরা যদি আমাদের বেসিকটা ঠিক রেখে পারফর্ম করতে পারি, তাহলে তাদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব।’

চোট যত গুরুতরই হোক না কেন, মুশফিকের এই আশা, কাল মাঠে ফলানোর পালা। কারণ, যুদ্ধে নামলে যে গা বাঁচিয়ে চলার সুযোগ নেই, হয় মারবি, নয় মরবি!