রিয়ালকে এত 'বাজে' শেষ কবে দেখেছেন?

মাঠে চরম বাজে সময় পার করছে রিয়াল। কাল আলাভেসের বিপক্ষে হারের পর রামোস-ক্রুসরা। ছবি: এএফপি
মাঠে চরম বাজে সময় পার করছে রিয়াল। কাল আলাভেসের বিপক্ষে হারের পর রামোস-ক্রুসরা। ছবি: এএফপি
>লা লিগায় কাল আলাভেসের মাঠে ১-০ গোলে হেরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এ নিয়ে টানা চার ম্যাচে জয়শূন্য মাদ্রিদের ক্লাবটি। এই চার ম্যাচে তাঁরা কোনো গোলও করতে পারেনি

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পরবর্তী জীবন কেমন উপভোগ করছে রিয়াল মাদ্রিদ?

উপভোগ! বরং নরক যন্ত্রণা বলাই ভালো। লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে তাকালে এক লহমায় তা বোঝা যাবে না। শেষ চার ম্যাচ রিয়ালের নরক যন্ত্রণার জ্বলন্ত উদাহরণ। হুলেন লোপেতেগির দল এই চার ম্যাচে জয়হীন। তাঁর শিষ্যরা কোনো গোল পর্যন্ত করতে পারেনি! প্রশ্নটা তাই উঠতে বাধ্য, রোনালদোর প্রস্থানের পর এই রিয়াল কি সেই রিয়াল?

লা লিগায় আলাভেসের মাঠে কাল ১-০ গোলে হেরেছে রিয়াল। এমন নয় যে দলটির বিপক্ষে অপেক্ষাকৃত দুর্বল একাদশ মাঠে নামিয়েছিলেন লোপেতেগি। করিম বেনজেমা, গ্যারেথ বেল, টনি ক্রুস, লুকা মদরিচের মতো খেলোয়াড়েরা মাঠে থেকেও রিয়ালের দুর্দশা কাটাতে পারেননি। গোটা ম্যাচে ৭০ শতাংশ বল দখলে রেখেছে রিয়াল। আলাভেসের (৮) চেয়ে বেশি শটও নিয়েছে রিয়ালই (১৩)। কিন্তু শেষ বাঁশি বাজার পর জয়ী বাস্ক প্রদেশের ক্লাবটি।

যোগ করা সময়ে হেড থেকে গার্সিয়া লোপেজের গোলে ৮৭ বছর পর রিয়ালের বিপক্ষে প্রথম জয় তুলে নেয় আলাভেস। এর আগে রিয়ালের বিপক্ষে তাঁদের সর্বশেষ জয় ১৯৩১ সালে। আলাভেসের মাঠে এর আগে রিয়াল সর্বশেষ হেরেছিল ৯০ বছর আগে। পুঁচকে দলের বিপক্ষে হারের এসব পরিসংখ্যানই বলছে, কতটা বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। গুজব উঠেছে, দলকে জয়ের পথে ফেরাতে না পারায় কোচের চাকরি হারাতে পারেন লোপেতেগি। যদিও রিয়ালের খেলোয়াড়েরা কোচের পাশেই আছেন। সার্জিও রামোস যেমন বলে দিয়েছেন, ‘লোপেতেগিকে ছাঁটাই করা হবে পাগলাটে সিদ্ধান্ত।’

কিন্তু রোগের দাওয়াই যে জরুরি হয়ে পড়েছে। এই একুশ শতকে কখনো এতটা বাজে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েনি টানা তিনবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। এই একুশ শতকে কখনোই টানা চার ম্যাচে গোলহীন ছিল না রিয়াল। সেভিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হারের পর অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র, এরপর চ্যাম্পিয়নস লিগে সিএসকেএ মস্কোর কাছে ১-০ গোলে হারের পর আলাভেসের মাঠে একই ফল—একুশ শতকে এমন রিয়াল যেন অচেনা এক দল!

ভোঁতা আক্রমণভাগ? বেনজেমা-বেলদের মতো অভিজ্ঞ ছাড়াও আছেন ভিনিসিয়ুস, মারিয়ানোদের মতো তরুণ ফরোয়ার্ড। রিয়ালের আক্রমণভাগকে তাই ভোঁতা বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। যদিও তাঁদের ধারে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ যে কাটছে না, তা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। আর তাই ৩৩ বছর আগের দুঃসহ স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে রিয়াল। মাদ্রিদের ক্লাবটি সর্বশেষ টানা চার ম্যাচে গোলশূন্য ছিল ১৯৮৫ সালে। সেবার সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ গোলশূন্য ছিল রিয়াল। আন্তর্জাতিক বিরতির পর ২০ অক্টোবর লেভান্তের বিপক্ষে মাঠে ফিরে সেই স্মৃতি খুঁড়ে বের করার (!) সুযোগ পাচ্ছে রিয়াল। লোপেতেগির শিষ্যদের যে ফর্ম তাতে রিয়াল সমর্থকেরা এ ছাড়া আর কী আশা করতে পারেন!

রামোস কিন্তু আশা জোগাচ্ছেন। ম্যাচ শেষে কোচ নিয়ে তাঁর ভাষ্য, ‘পরিবর্তন অনেক সময় ভালো, আবার অনেক সময় খারাপও হতে পারে। তবে কোচ পাল্টানোর সিদ্ধান্তটা একটু দ্রুত হয়ে যায়।’ তাহলে রিয়ালের সমস্যাটা কোথায়? এই প্রশ্নের জবাবে রামোস রোনালদোর প্রসঙ্গ তুললেন, ‘ফুটবলে ফলই সব। আমরা তা পাচ্ছি না। সেটি সম্ভবত রোনালদো চলে যাওয়ার জন্য। সবাই বলছে, সংকটের মধ্যে রয়েছে রিয়াল। কিন্তু আমরা তো রোনালদোকে নিয়েও সংকটের মধ্যে পড়েছি। নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। গোলের জন্য লড়াই করব এবং সেটা আসবেই।’