'আশা ছাড়া তো কেউ বাঁচে না'

>
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের হাসপাতালে সাকিব আল হাসান। সৌজন্য ছবি
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের হাসপাতালে সাকিব আল হাসান। সৌজন্য ছবি

আঙুলের চিকিৎসা করাতে সাকিব আল হাসান এখন অস্ট্রেলিয়ায়। মেলবোর্নের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গ্রেগ হয় তাঁকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা সাকিবের দৃষ্টি এখন ভবিষ্যতে।

কিছু সংখ্যা? নাকি একেকটি ‘আয়ুষ্কাল’! ৪৮ ঘণ্টা, ৭২ ঘণ্টা, ৭ দিন, ৩ মাস, ৬ মাস, ১২ মাস...। সাকিব আল হাসান যেন ক্রিকেটার নন, ভবিষ্যৎ বলতে পারা জ্যোতিষী! হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আঙুলের রেখায় হিসাব করছেন গ্রহ-নক্ষত্রের ফের। ভবিষ্যতের আয়নায় দেখছেন নিজের অদৃষ্ট। সেখানে ২০১৯ বিশ্বকাপটাও মাঝেমধ্যে হয়ে উঠছে অস্পষ্ট।
মেলবোর্নের হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গ্রেগ হয়ের তত্ত্বাবধানে চলছে সাকিবের হাতের চিকিৎসা, কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল আসবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। সাকিব চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকবেন ৭২ ঘণ্টা। সেটি শেষ হয়ে গেলেও চলবে সংক্রমণের চিকিৎসা। ৭ দিন ধরে শিরায় প্রবেশ করবে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন।
কাল হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মুঠোফোনে এই ‘টাইম লাইন’ নিজেই জানাচ্ছিলেন সাকিব। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল ও গ্রেগ হয়ের পর্যবেক্ষণের পর চূড়ান্ত হবে চিকিৎসার গতিপথ। তবে একটি বিষয় এরই মধ্যে চিকিৎসক তাঁকে নিশ্চিত করে দিয়েছেন। বাঁ হাতের কড়ে আঙুলের গোড়ায় যে অস্ত্রোপচার নিয়ে এত কিছু, সংক্রমণের কারণে আগামী অন্তত ছয় মাসের মধ্যে সেই অস্ত্রোপচার করা যাবে না। বাকিটা সাকিবের মুখেই শুনুন-
‘এখানে ডাক্তার বলেছেন কমপক্ষে ৬ মাস, এমনকি ১২ মাসও লেগে যেতে পারে অস্ত্রোপচার করাতে। যে ভাইরাসের কারণে এই ইনফেকশন, সেটি খুব আনকমন ভাইরাস। আমার হাতে এই ভাইরাস আর ১ পার্সেন্টও নেই, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই অপারেশন সম্ভব। নইলে জটিল সমস্যা হতে পারে।’
তবে মেলবোর্নে গিয়ে যে আশার কথাটি সাকিব শুনেছেন, সেটি হলো, সংক্রমণ ভালো হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার না করিয়েও হয়তো তিন মাস পর তিনি খেলা শুরু করতে পারবেন। সাকিব বলছিলেন, ‘ইনফেকশন দূর করার জন্য আমাকে ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। ওষুধ খেয়ে বুঝতে হবে কী অবস্থা। সব ঠিক থাকলে এরপর খেলা শুরু। এই দুটি স্টেজেও যদি ব্যথা না বাড়ে, তখন হয়তো অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হবে। আবার এমনও হতে পারে, খেলা শুরুর পর দেখলাম ব্যথা একেবারেই উধাও হয়ে গেছে। তখন অপারেশন না-ও লাগতে পারে। অলৌকিক কত কিছুই তো
ঘটে! তবে ব্যথা হলে অপারেশন লাগবেই। অপারেশন করে আঙুলটাকে ব্যাট ধরার মতো অবস্থায় আনতে হবে।’
সাকিবের মুখে ঘুরেফিরে কয়েকবারই শোনা গেল কথাগুলো, ‘অলৌকিক’, ‘কপালে থাকলে’, ‘মানুষের দোয়া’, ‘আল্লাহ চাহে তো...’। তার নিজের হাতে তো নয়ই, যেন চিকিৎসকদের হাতেও এখন আর কিছু নেই! হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মঙ্গল-অমঙ্গল দুই রকম চিন্তাই আসে মনে। কখনো মনে হয়, সবার দোয়ায় হয়তো অলৌকিক কিছুই ঘটবে। আবার এমনও শঙ্কা উঁকি দেয়, হাতের মধ্যে যে ভাইরাসটি ঘাপটি মেরে আছে, সেটি যদি আরও গভীরে ঢুকে যায়! পৃথিবীর কোনো ওষুধ-মহৌষধেই তো কাজ হবে না তখন! সাকিবের কথা, ‘আমার যে হাড়টাতে সমস্যা, সেখানে ইনফেকশন হয়ে গেলে অ্যান্টিবায়োটিকেও কাজ না-ও হতে পারে। তখন বিশ্বকাপে খেলাও অনিশ্চিত হয়ে যাবে। ধরুন ভাইরাসটা হাড়ের ভেতর ঢুকে বসে আছে। এখন হাড়ের ভেতর তো আর অ্যান্টিবায়োটিক ঢুকবে না! ভাইরাসটাকে কোনোভাবে বের হয়ে আসতে হবে। বলতে পারেন, ভাইরাসের সঙ্গে আমার চোর-পুলিশ খেলার মতো অবস্থা হবে।’
একনিশ্বাসে কথাগুলো বলে সাকিব হাসেন। মুঠোফোনেও বোঝা যায়, শুকনো হাসি এবং এই হাসির সূত্র ধরেই প্রশ্ন, ‘হাসপাতালে সময় কেমন কাটছে? কোনো কাজ নেই। মনের মধ্যে নিশ্চয়ই অনেকরকম চিন্তা আসছে...।’ সাকিব এবার একটু গম্ভীর।
‘ভালো সময় তো নিশ্চয়ই কাটছে না এখানে। হতাশজনক একটা অবস্থা। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না। সবার দোয়ায় যদি ঠিক হয়ে যাই, এই আশা নিয়ে আছি। আশা ছাড়া তো কেউ বাঁচে না। আমি পজিটিভ মানুষ। তাই পজিটিভ চিন্তাই করি সব সময়।’
মাঠে হারার আগে কখনো হারেন না সাকিব। মাঠের বাইরেই বা কেন হারবেন!