জেমির লক্ষ্য আপাতত ১৯৩ থেকে ১৫০

টানা তিনটি টুর্নামেন্ট গেল। পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে আজ ইংল্যান্ড যাচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ জেমি ডে। যাওয়ার আগে নিজের পরের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে গেলেন।
ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে আপাতত ১৫০–এ নিতে চান ইংলিশ কোচ জেমি ডে।
ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে আপাতত ১৫০–এ নিতে চান ইংলিশ কোচ জেমি ডে।

বাংলাদেশে ভালোই লাগছে জেমি ডের। কোনো অভিযোগ নেই। পাওয়া না–পাওয়ার হিসাব মেলাতে এতটুকু আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, যেটি করতেন তাঁর পূর্বসূরিরা। বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোচ হিসেবে এ পর্যন্ত যতজন এসেছেন, প্রায় সবার মুখেই থাকত ফুটবল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে নানা ক্ষোভ-হতাশা।

কিন্তু বাংলাদেশ দলের ইংলিশ কোচ জেমি ডেকে ব্যতিক্রমই লাগছে। কথাবার্তায় কোনো কিছু নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেননি। সেটির একটা কারণ হতে পারে, এখন পর্যন্ত বেতন–ভাতা নিয়ে কোনো সংকট তৈরি না হওয়া।

লোডভিক ডি ক্রুইফ কদিন পরপরই বেতন না পাওয়ার ক্ষোভ জানিয়ে চারপাশ গরম করে ফেলতেন। কিন্তু জেমি ডের কথাবার্তা এখন পর্যন্ত শান্তই, ‘এখানে আমার সময়টা ভালোই কাটছে। আমি উপভোগ করছি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ফেডারেশন চাইলে আগামী বছরের মাঝামাঝি আমার চুক্তির মেয়াদ শেষে নতুন চুক্তিও করতে পারি।’

গতকাল বিকেলে কোচ এসব কথা বলছিলেন বাফুফে ভবন চত্বরে দাঁড়িয়ে। বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী ও জাতীয় দল কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে সভা করে মাত্রই বেরিয়েছেন হাসিমুখে। ইংল্যান্ডে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে আজ ঢাকা ছাড়ছেন কোচ। ফিরবেন এ মাসের শেষ দিকে। এসেই ফেডারেশন কাপের খেলা দেখবেন। ঘরোয়া ফুটবলে নতুন খেলোয়াড় পেলে জাতীয় দলে নেবেন।

আগামী ১২-২০ নভেম্বর ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ আছে। সর্বোচ্চ দুটি ম্যাচ খেলা যাবে। তবে বাংলাদেশ চাইছে একটি ম্যাচ খেলতে। প্রতিপক্ষ ঠিক হয়নি এখনো। কদিন আগেই বাফুফেকে কয়েকটি দেশের নাম দিয়েছেন কোচ। যেমন সাফ চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ, ম্যাকাও, গুয়াম, মালয়েশিয়া। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে চূড়ান্তভাবে জানাবেন দলের নাম।

বাফুফে কোচের চাওয়া পূরণ করতে তৎপর। কারণও আছে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে স্বাগতিক দলের পারফরম্যান্সে বাফুফে খুশি। খুশি জেমি ডে নিজেও, ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শেষ দুটি ম্যাচে আমরা ভালো খেলেছি। কাগজ-কলমে অনেকটা এগিয়ে থাকা ফিলিপাইন ও ফিলিস্তিনের দলের সঙ্গে হারলেও ছেলেরা নিজেদের তুলে ধরেছে। লড়াই করেছে। দলে অনেক উন্নতিও হয়েছে।’ 

জেমি ডের সঙ্গে বাফুফের এক বছর চুক্তির চার মাস পার হয়েছে। এই সময়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠাটা বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে বড় সাফল্যই। সাফের সেমিতে ওঠা যায়নি। তবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সেমির লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। শক্তিশালী ফিলিস্তিনের কাছে হেরে ওঠা হয়নি ফাইনালে।
জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ব্যস্ত সময়ই কেটেছে জেমি ডের। টানা তিনটি টুর্নামেন্ট শেষে কোচ এবার ঠিক করেছেন দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য, ‘আমি চাই বাংলাদেশের ফিফা র‍্যাঙ্কিং ১৯৩ থেকে ১৫০-এ উঠুক।’ রাতারাতি সেটি সম্ভব নয়। তাই বলছেন, ‘ধাপে ধাপে এগোতে হবে। ১৮০, তারপর ১৭০...১৬০।’
বাংলাদেশে ফুটবলীয় সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। চাইলেও খুব বেশি দূর যাওয়া সম্ভব নয়। এত দিনে তা বুঝে গেছেন কোচ। তাই দ্রুতই সব পাল্টে যাবে সেটিও বিশ্বাস করেন না।
জাতীয় দলের বড় সমস্যা গোল না পাওয়া। এ নিয়ে অবধারিত প্রশ্ন শুনতেই হয় জেমি ডেকে। কালও প্রশ্ন হলো এবং সবকিছু সময়ের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছেন কোচ, ‘ভালো স্ট্রাইকার চাইলেও এখনই তৈরি করা যাবে না। এটি লম্বা সময়ের পরিকল্পনা। সব পজিশনের জন্যই লম্বা পরিকল্পনা নিয়ে খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে।’
এরই মধ্যে নতুন এক তরুণ দৃষ্টি কেড়েছেন। বাংলাদেশ দলের লেফট উইঙ্গার বিপলু আহমেদ পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সেরা উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কার। কোচ এতে অনুপ্রাণিত, ‘বিপলুর খেলায় আমি খুশি। ওর স্কিল ভালো। তবে ওকে আরও জিম ওয়ার্ক করতে হবে।’
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, আজ পর্যন্ত বাফুফের একটা জিম হলো না! দু–একটি ক্লাব বাদে বাকিদেরও জিম নেই। এ দেশে ফুটবল উন্নয়ন কীভাবে হবে!