আর্জেন্টিনা দলে মেসি নেই বলে হতাশ নেইমার

আজ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে মেসি নেই দেখে মন খারাপ ব্রাজিলীয় তারকা নেইমারের। ছবি: এএফপি
আজ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে মেসি নেই দেখে মন খারাপ ব্রাজিলীয় তারকা নেইমারের। ছবি: এএফপি
>

আজ রাতে সৌদি আরবের জেদ্দায় মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলীয় তারকা নেইমার মনে করেন আর্জেন্টিনা দলে মেসির না থাকাটা ফুটবলের জন্যই দুঃখের। আজকের ম্যাচে ব্রাজিলের অধিনায়ক নেইমার

কথাটা ব্রাজিল কোচ তিতে বলেছেন। বলেছেন, আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড মাউরো ইকার্দিও। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা যখন মুখোমুখি হয়, সেটা আর প্রীতি ম্যাচ থাকে না! বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কথাটা সত্যি। কিন্তু দু-একটা যে ব্যতিক্রম থাকে, সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১২টায় শুরু ম্যাচটিকে সেই দলে রাখতে পারেন। প্রীতি ম্যাচ অপ্রীতিকর হয়ে উঠতে গেলে যে ঝাঁজ লাগে, অনেক খুঁজেও এখানে সে রকম কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে বরং দ্বৈরথের চেয়ে বন্ধুত্বের আবহসংগীতটাই বেশি শোনা যাচ্ছে। নইলে কি আর আর্জেন্টিনা দলে লিওনেল মেসি খেলছেন না বলে হতাশা প্রকাশ করেন ব্রাজিল অধিনায়ক নেইমার!

রাশিয়া বিশ্বকাপের পরই আর্জেন্টিনা দল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্রামে গেছেন। তবে প্রতিপক্ষ ব্রাজিল বলেই মেসি খেলবেন বলে আশায় ছিলেন নেইমার। সেই আশা পূরণ হচ্ছে না বলে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড বেশ হতাশ, ‘এটা ফুটবলের জন্য দুঃখজনক। দীর্ঘ সময় ধরে মেসির পুরোটাই দেখতে চাই আমরা। ও যত বেশি খেলবে, ফুটবলপ্রেমীদের জন্য তত ভালো।’

বোঝাই যাচ্ছে, শুধু বন্ধু কিংবা সাবেক ক্লাব-সতীর্থ বলেই নয়, একজন ফুটবলপ্রেমী হিসেবেও মেসিতে মুগ্ধ নেইমার। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুললে সেই মুগ্ধতা কমে যায় না।

তবে জেদ্দার ম্যাচটি নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের একটু নিরুত্তাপ থাকার কারণ শুধুই মেসির অনুপস্থিতি নয়। এমনিতেও বিশ্বকাপের পরের কয়েকটা মাস দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো কিছুটা ঢিলেঢালা সময় কাটাচ্ছে। উয়েফা নেশনস লিগের মতো কোনো প্রতিযোগিতামূলক সূচি নেই। এখন যে প্রীতি ম্যাচগুলো চলছে তাতে ইচ্ছেমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিচ্ছেন কোচরা। এখানে জিততেই হবে, এমন মানসিকতাটা বড় হয়ে উঠছে না খুব একটা।

আরেকটি কারণ, আর্জেন্টিনা দলের মলিন ছবি। বিশ্বকাপে ব্যর্থতা, সে কারণে কোচ হোর্হে সাম্পাওলির বরখাস্ত হওয়া এবং মেসির বিশ্রাম-সবকিছু মিলিয়ে আর্জেন্টিনা একটা পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন কোচ লিওনেল স্কালোনির অধীনে বিশ্বকাপের পর এ নিয়ে তিনটি ম্যাচ খেলেছে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। গুয়াতেমালা ও ইরাকের বিপক্ষে জিতলেও ড্র করেছে কলম্বিয়ার সঙ্গে। এই তিন ম্যাচে ১৩ জনের অভিষেক হয়েছে আর্জেন্টিনা দলে, দলে ডাক পেয়ে অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন আরও দুজন। আর্জেন্টিনার সর্বশেষ বিশ্বকাপ দলের ২৩ জনের মধ্যে এই তিন ম্যাচ মিলিয়ে মাত্র আটজনকে খেলতে দেখা গেছে। বুঝতেই পারছেন, এ এক নতুন আর্জেন্টিনা।

আর্জেন্টিনা যে স্থিতিশীলতার খোঁজে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে, ব্রাজিল সেটা পেয়ে গেছে রাশিয়া বিশ্বকাপের আগেই। ব্রাজিল কোচ তিতে তাই খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকে যাচ্ছেন না। বিশ্বকাপের পর ব্রাজিল তিনটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছে যুক্তরাষ্ট্র, এল সালভাদর ও সৌদি আরবের সঙ্গে। জিতেছে তিনটিতেই। এই তিন ম্যাচ মিলিয়ে তিতে অভিষেক করিয়েছেন ছয়জনের। বিশ্বকাপ দলে থাকা ২৩ জনের মধ্যে ১৪ জনকে দেখা গেছে এই তিন ম্যাচে। এটা পরিষ্কার যে তিতের মূল দলটা প্রায় ঠিকই আছে, যারা বিশ্বকাপে শিরোপার বড় দাবিদার ছিল।
তবে দুই দলের ব্যবধানটা এত বেশি হওয়ার পরও আর্জেন্টিনাকে হালকাভাবে নিতে রাজি নন নেইমার। সেটা আর্জেন্টিনা নামটার কারণেই। মেসি ছাড়াও আর্জেন্টিনাকে যথেষ্ট শক্তিশালী মনে করেন নেইমার, ‘আমি আমার সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাদের বলেছি যে ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ আমাদের প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা। দারুণ সব খেলোয়াড় নিয়ে তারা অসাধারণ এক জাতীয় দল। এইসব দুর্দান্ত খেলোয়াড়ের মুখোমুখি হতে পেরে আমরা খুশি। এটা ফুটবলকে আরও সুন্দর করে তোলে।’

এই যে শক্তিতে এত এগিয়ে থাকার পরও আর্জেন্টিনাকে নিয়ে নেইমারের সতর্কতা, এতেই স্পষ্ট দুই দলের খেলোয়াড়েরা দ্বৈরথকে কী চোখে দেখে। এদিকে সৌদি আয়োজকেরা নাকি চাইছেন, এ ম্যাচ শেষ পর্যন্ত একটা দল জিতুক। সেই দাবি মেনেই নাকি নির্ধারিত সময় ড্র থাকলে সরাসরি টাইব্রেকার রাখা হচ্ছে এবং ম্যাচ শেষে জয়ী দলকে একটা ট্রফিও দেওয়া হবে। তিতে-ইকার্দিরা হয়তো ঠিকই বলেছেন। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা শুধুই একটি প্রীতি ম্যাচ কখনো থাকে না।