সেই টেন্ডুলকারের চেয়ে এই কোহলি কি খুব এগিয়ে?

শচীন টেন্ডুলকার। এএফপি ফাইল ছবি
শচীন টেন্ডুলকার। এএফপি ফাইল ছবি
>

ওয়ানডেতে শচীন টেন্ডুলকারের গড়া দ্রুততম ১০ হাজার রানের রেকর্ডটা পেরিয়ে গেলেন বিরাট কোহলি। এই দুই ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কে এগিয়ে? ২০০১ সাল পর্যন্ত টেন্ডুলকারের পারফরম্যান্স বিবেচনায় এনে তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে

বিরাট-মুকুটে আরেকটি নতুন পালক। ওয়ানডেতে দ্রুততম দশ হাজার রান সংগ্রাহক। শচীন টেন্ডুলকারকে পেছনে ফেলে রেকর্ডটি গড়েছেন বিরাট কোহলি। উত্তরসূরির এই কীর্তিতে টেন্ডুলকার অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি। ভারতীয় ব্যাটিং কিংবদন্তির টুইট, ‘যে তীব্রতা ও ধারাবাহিকতা নিয়ে তুমি ব্যাট করো, তা অসাধারণ। তোমাকে অভিনন্দন। রানের ধারা বজায় রেখো।’

২০০৮ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর রান করার ধারাবাহিকতায় কখনোই ছেদ পড়েনি কোহলির। সে কারণেই তিনি এই মুহূর্তে দুনিয়ার সেরা একজন ব্যাটসম্যান। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিশাখাপতনমে ১০ হাজারি ক্লাবে নাম লেখানোর পর প্রশ্নটা তাই আবারও উঠেছে—এই কোহলি আর সেই সময়ের টেন্ডুলকারের মধ্যে কে এগিয়ে?

কাকতালীয় ব্যাপার, ওয়ানডেতে ১০ হাজারি ক্লাবে নাম লেখানো ১৩ ব্যাটসম্যানের মধ্যে শুধু টেন্ডুলকার আর কোহলিই সেঞ্চুরি দিয়ে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন। ২০০১ সালে ইন্দোরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩৯ রানের ইনিংস দিয়ে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই মাইলফলক গড়েছিলেন টেন্ডুলকার। ১৭ বছর পর কাল কোহলি অপরাজিত ১৫৭ রানের ইনিংস দিয়ে সর্বশেষ কিন্তু দ্রুততম সময়ে নাম লিখিয়েছেন এই অভিজাত ক্লাবে। তো, ২০০১ সালের সেই টেন্ডুলকার আর এখনকার কোহলির মধ্যে পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যানগত পার্থক্য তুলে ধরেছে ক্রিকইনফো।

পরিসংখ্যানে টেন্ডুলকারের তুলনায় কোহলিই এগিয়ে। ২৫৯তম ইনিংসে এসে ১০ হাজারের দেখা পেয়েছিলেন টেন্ডুলকার। কোহলি দেখা পেলেন ২০৫ ইনিংসে। ইনিংসসংখ্যা বিচারে টেন্ডুলকারের চেয়ে ২১ শতাংশ এগিয়ে কোহলি। ব্যাটিং গড় এবং ইনিংস প্রতি সেঞ্চুরি গড়েও টেন্ডুলকারের চেয়ে ৪০ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে বর্তমান ভারতীয় অধিনায়ক। ২৫৯তম ইনিংস শেষে টেন্ডুলকারের গড় ছিল ৪২.৬৩। আর কাল ২০৫তম ইনিংস শেষে কোহলির গড় ৫৯.৬২। ইন্দোরে সেটি ছিল টেন্ডুলকারের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৮তম সেঞ্চুরি। কাল কোহলি তুলেছেন নিজের ক্যারিয়ারের ৩৭তম সেঞ্চুরি।

বিরাট কোহলি। কাল অপরাজিত সেঞ্চুরির পর। ছবি: এএফপি
বিরাট কোহলি। কাল অপরাজিত সেঞ্চুরির পর। ছবি: এএফপি

আপাতদৃষ্টিতে পরিসংখ্যানে কোহলিই এগিয়ে। তবে টেন্ডুলকারের সময়টা বিবেচনায় নিলে ব্যাপারটা কিংবদন্তির প্রতি বেশ অবিচারই হয়ে যায়। কারণ এখন প্রচুর হাই-স্কোরিং ম্যাচ হচ্ছে সেই সময়ের তুলনায়। স্ট্রাইক রেটের ক্ষেত্রে যা দুজনের পরিসংখ্যানেই প্রভাব ফেলেছে। ক্যারিয়ারের ২৬৬তম ম্যাচে এসে টেন্ডুলকার ১০ হাজার রানের মাইলফলক গড়ার সময় বাকি ব্যাটসম্যানদের গড় স্ট্রাইক রেট ছিল ৭১.৫১। আর কাল কোহলি সেই একই মাইলফলক ছোঁয়ার সময় এখনকার বাকি ব্যাটসম্যানদের গড় স্ট্রাইক রেট ৮৫.৯৯।

ব্যাটিং গড়ের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। ইন্দোরে টেন্ডুলকার সেই ইনিংস খেলার পর বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং গড় ছিল ২৭.৯০—কোহলির সময়ে যা ৩১.৭৩। অর্থাৎ স্ট্রাইক রেট ও ব্যাটিং গড়ে টেন্ডুলকার ও কোহলি দুজনেই তাঁদের সমসাময়িক ব্যাটসম্যানদের চেয়ে এগিয়ে। তখন টেন্ডুলকারের স্ট্রাইক রেট ছিল ৮৬.৫২। আর কোহলির এখন ৯২.৫১। সেঞ্চুরি করাকে কোহলি এই সময়ে রীতিমতো ছেলেখেলা বানিয়ে ছেড়েছেন। সেঞ্চুরি নিয়ে তাঁর ছেলেখেলা দেখে মনে হতেই পারে, টেন্ডুলকার ইনিংস প্রতি গড় সেঞ্চুরির হারে বুঝি কোহলির চেয়ে পিছিয়ে!

জবাবটা অন্য ভাবে দেওয়া যায়। ১৯৯৪ সালে প্রথম ওপেন করেন টেন্ডুলকার। এরপর থেকে শীর্ষ চারে যতবার ব্যাট করেছেন প্রতি ৬.৮৬ ইনিংস পর একটি করে সেঞ্চুরি করেছেন। শীর্ষ চারে তাঁর সমসাময়িক অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা গড়ে ২৪.৭ ইনিংস পর একটি করে সেঞ্চুরি পেয়েছেন। অর্থাৎ সেই সময়ে টেন্ডুলকার ব্যাটিং অর্ডারের শীর্ষ চারে অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের তুলনায় সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার গড়ে ৩.৬ গুণ ভালো করেছেন। কোহলির ক্ষেত্রে যা ৩.১১ গুণ। ভারতীয় অধিনায়ক গড়ে ৫.৩২ ইনিংস প্রতি একটি করে সেঞ্চুরি করলেও এই সময়ে শীর্ষ চারের অন্যান্য ব্যাটসম্যানেরা ১৬.৫৫ ইনিংস প্রতি একটি করে সেঞ্চুরি করেছেন। অর্থাৎ টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারে (২০০১) প্রথমার্ধের তুলনায় এখন সেঞ্চুরি করাটা বেশ সহজ।

রান তাড়ায় কোহলি স্রেফ অবিশ্বাস্য। তবে ১৯৯৪ থেকে ২০০১ পর্যন্ত রান তাড়ায় টেন্ডুলকারও দারুণ পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। রান তাড়ায় তখন টেন্ডুলকারের গড় ছিল ৫০.২৮ আর স্ট্রাইক রেট ৯৪.৬৫। কোহলির গড় ৬৮.৫৪ আর স্ট্রাইক রেট ৯৪.৫১। তবে কোহলির শক্তি অন্য জায়গায়। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি অনেকবারই বড় স্কোর গড়ার সঙ্গে অপরাজিত থেকেছেন।