শেষ যে ক্লাসিকোয় মেসি-রোনালদো ছিলেন না...

মেসি-রোনালদো ছাড়া শেষ ক্লাসিকোর কথা মনে আছে তো? (ছবি - গোল ডটকম)
মেসি-রোনালদো ছাড়া শেষ ক্লাসিকোর কথা মনে আছে তো? (ছবি - গোল ডটকম)
>রিয়াল মাদ্রিদের সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে এই মৌসুমে জুভেন্টাসে পাড়ি জমিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আর এদিকে বার্সেলোনার মহাতারকা লিওনেল মেসি পড়েছেন হাতের চোটে। ফলে তিন দিন পরে হতে যাওয়া রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার ‘এল ক্লাসিকো’ তে থাকছেন না এই দুজনের কেউই। শেষ কবে এমনটা হয়েছিল?

মেসি-রোনালদোবিহীন ‘এল ক্লাসিকো’ শেষ কবে দেখেছিলেন মনে পড়ে? এই দুই মহারথীকে ছাড়া যে এল ক্লাসিকো হতে পারে, সেটিই তো অনেকে ভুলে যেতে বসেছিলেন! যারা ব্যাপারটা ভুলে গেছেন, তারা জেনে নিতে পারেন, বছরের হিসেবে প্রায় ১১ বছর আর দিনের হিসেবে ৩ হাজার ৯৬২ দিন পর ‘এল ক্লাসিকো’ অর্থাৎ, বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের দ্বৈরথে নেই লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কেউই।

২০০৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ বারের মতো মেসি-রোনালদোবিহীন এল ক্লাসিকো দেখেছিল ফুটবল দুনিয়া। এরপর আগামী রোববার দুনিয়া দেখবে আরও একটি ক্লাসিকো—রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে যাওয়ায় রোনালদো আর চোটে পড়ায় নেই মেসি। এ যেন লবণ ছাড়া তরকারি খাওয়ার মতো ব্যাপার। তিন হাজারেরও বেশি দিন আগে মেসি-রোনালদোবিহীন সেই এল ক্লাসিকোতে কারা কারা খেলেছিলেন, পাঠকদের তা জানতে নিশ্চয়ই আগ্রহ হচ্ছে!

রিয়াল মাদ্রিদ সে ম্যাচটা খেলেছিল ৪-৩-৩ ছকে। গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী দলনেতা ইকার ক্যাসিয়াসের সামনে পর্তুগিজ সেন্টারব্যাক পেপে আর বিশ্বকাপজয়ী ইতালিয়ান সেন্টারব্যাক ফাবিও ক্যানাভারো জুটি বেঁধেছিলেন, রক্ষণের দুই দিকে ছিলেন স্প্যানিশ রাইটব্যাক সার্জিও রামোস আর আর্জেন্টাইন লেফটব্যাক গ্যাব্রিয়েল হেইঞ্জ। তিনজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে মূল একাদশে নেওয়া হয়েছিল ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার হুলিও ব্যাপতিস্তা, মালির মিডফিল্ডার মামুদু দিয়ারা ও ডাচ মিডফিল্ডার ওয়েসলি স্নাইডারকে। আক্রমণভাগ গঠিত হয়েছিল ডাচ স্ট্রাইকার রুদ ফন নিস্তেলরুই, রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড রাউল গঞ্জালেস আর ব্রাজিলিয়ান তারকা রবিনহোর সমন্বয়ে।

ওদিকে ৪-৩-৩ ছকে আস্থা রেখেছিলেন বার্সার ডাচ কোচ ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডও। রাইকার্ডের তখন চরম দুঃসময়, চাকরি যায় যায় অবস্থা। লিগের ১৬ ম্যাচ শেষে রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে চার পয়েন্ট পিছিয়ে তাঁর দল, দলের রসায়নও তেমন ভালো নয়। গোলবারে ভিক্টর ভালদেসকে রেখে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে জুটি বেঁধেছিলেন আর্জেন্টাইন সেন্টারব্যাক গ্যাব্রিয়েল মিলিতো ও মেক্সিকান ডিফেন্ডার রাফায়েল মার্কেজ। রক্ষণের দুইদিকে ছিলেন দলনেতা কার্লেস পুয়োল আর ফরাসি লেফটব্যাক এরিক আবিদাল। মাঝমাঠের তিনজন মিডফিল্ডার হিসেবে মূল একাদশে ছিলেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার জাভি হার্নান্দেজ, পর্তুগিজ তারকা ডেকো ও আইভরি কোস্টের তখনকার তরুণ প্রতিভা ইয়ায়া তোরে। আক্রমণভাগ সাজানো হয়েছিল ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি রোনালদিনহো, ক্যামেরুনের স্ট্রাইকার স্যামুয়েল ইতো আর স্প্যানিশ তারকা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে নিয়ে। হুলিও ব্যাপতিস্তার একমাত্র গোলে সেবার বার্সেলোনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে রাইকার্ডের চাকরিটা আরেকটু অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল বার্নড সুস্টারের রিয়াল মাদ্রিদ। মৌসুম শেষে হেসেখেলে লিগ জেতে সেবার রিয়াল মাদ্রিদ, ওদিকে বার্সেলোনার অবস্থান ছিল দ্বিতীয় স্থানের ভিয়ারিয়ালের চেয়েও দশ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে।

তবে বহু দিক থেকেই মেসি-রোনালদোবিহীন সেই ক্লাসিকোটা ভবিষ্যৎ বার্সেলোনার নবজাগরণের জন্য উল্লেখযোগ্য ছিল। সেই মৌসুমের পরেই ছাঁটাই হন রাইকার্ড, তাঁর জায়গায় আসেন পেপ গার্দিওলা, প্রথম মৌসুমেই ট্রেবল জেতেন তিনি, শুরু হয় আধুনিক যুগের অন্যতম সফল এক দলের অগ্রযাত্রা।