আবু জায়েদকে আউট করতে না পারায় নেট বোলারদের 'শাস্তি'!

সদা হাস্যোজ্জ্বল বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক। ছবি: রানা আব্বাস
সদা হাস্যোজ্জ্বল বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক। ছবি: রানা আব্বাস
>কাল দিনভর বৃষ্টির পর আজ সকাল থেকে রোদের দেখা মিলেছে সিলেটে। অবশ্য মাঝেমধ্যে সূর্যকে হটিয়ে আকাশ দখলে নিয়েছে মেঘদের দল। তবুও স্বস্তি, অন্তত বৃষ্টি ঝরেনি। বাংলাদেশ দল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই মাঠে অনুশীলন করেছে।

রায়ান কুক স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলে নিশ্চিত শিক্ষার্থীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হতেন। কঠিন কোনো বিদ্যা কতটা আনন্দের সঙ্গে শেখানো যায়, কুককে না দেখলে বোঝা যেত না। গত জুলাই থেকে কুক বাংলাদেশ দলে কাজ করছেন ফিল্ডিং কোচ হিসেবে। সিলেট টেস্টের আগে তাঁর ভূমিকা কিছুটা বদলেছে। শুধু ফিল্ডিং নন, ব্যাটিং কোচের কাজটাই এই মুহূর্তে করছেন তিনি।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পরই ছুটিতে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি। সাবেক প্রোটিয়া ওপেনারের চাকরিটা শুধু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ। লাল বলে ম্যাকেঞ্জির কাজটা সামলে নিচ্ছেন ফিল্ডিং কোচ কুক। গত দুই দিনে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খুব কাছ থেকেই দেখা হলো কুকের কাজ। ক্রিকেটারদের কঠিন বিষয়গুলো এমনভাবে শেখান, যেন এর চেয়ে আনন্দের কাজ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। লেজের দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কাজ করাটা কোচদের জন্য সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। ব্যাটিংয়ের অনেক মৌলিক বিষয়ও অনেক সময় শেখাতে হয় তাঁদের। সেই কঠিন কাজটা তিনি কত আনন্দের সঙ্গেই না করে যাচ্ছেন!

পেসার আবু জায়েদকে যেমন বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন কোন লেংথের বল কীভাবে খেলতে হবে, ব্যাটের ‘ফেস’ কতটা ‘ওপেন’ রাখতে হবে। মাঝেমধ্যে ভুল করে ফেলছেন আবু জায়েদ। তবুও আশাহত হচ্ছেন না কুক। বারবার আবু জায়েদকে উৎসাহিত করছেন, ‘রাহি হবে, তুমি শিখছ, ভাবছ। এটাই দরকার। হবে তোমাকে দিয়ে।’ ব্যাটিং অনুশীলনের শেষ দিকে আবু জায়েদের একটা পরীক্ষা নিলেন কুক। ধরুন, টেস্ট ম্যাচের শেষ দিনের শেষ ওভার। এই ওভারটা কাটিয়ে দিতে পারলেই ম্যাচ ড্র। আবু জায়েদের কাঁধে পড়েছে সেই এক ওভার সামলানোর দায়িত্ব। কুক নেট বোলারদের নির্দেশ দিলেন, দুর্দান্ত একটা ওভার করতে। যদি এই সময়ে আবু জায়েদকে তাঁরা আউট না করতে পারেন, শাস্তি পেতে হবে!

আবু জায়েদ ছয়টি বলই ঠেকিয়ে দিলেন। কুক তো বেজায় খুশি। আনন্দে তাঁর ব্যাটসম্যানের সঙ্গে ‘হাই-ফাইভ’ করলেন। আর নেট বোলারদের শাস্তি দিলেন ২০টা পুশ-আপ! হেরে গিয়ে, শাস্তি ভোগের পরও যে কেউ এত খুশি হতে পারেন, নেট বোলার সাব্বির, অভি, তানভীরদের না দেখলে বোঝা যেত না! তাঁরা সবাই খেলে সিলেট প্রথম বিভাগে। বাংলাদেশ দলের নেটে এসেছে বোলিং করতে। ‘আমাদের রাহি ভাই তো অলরাউন্ডার! ওনাকে আউট করা যাইত না’—মাঠ থেকে ফেরার সময় হাসিমুখে বলছিলেন নেট বোলার তানভীর।

কাল দিনভর বৃষ্টির পর আজ সকাল থেকে রোদের দেখা মিলেছে সিলেটে। অবশ্য মাঝেমধ্যে সূর্যকে হটিয়ে আকাশ দখলে নিয়েছে মেঘদের দল। তবুও স্বস্তি, অন্তত বৃষ্টি ঝরেনি। বাংলাদেশ দল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই মাঠে অনুশীলন করেছে। কাল ইনডোরে অনুশীলন করে তৃপ্ত হওয়ার কথা নয় মুশফিকুর রহিমের। আজ তিনি মন ভরে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। তিন দফায় প্রায় চার ঘণ্টা ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। বারবার নেটে সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের দেখিয়েছেন, কীভাবে ভালো বল ছাড়তে হবে। মেহেদী হাসান মিরাজদের মতো তরুণ ব্যাটসম্যানদের মুশফিকের পরামর্শ, ‘টেস্টে ভালো বল ছাড়তে হবে। ছাড়লে আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে যাবে।’

বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস এখন এমনিতে উঁচুতে। সেটি আরও ওপরে নেওয়ার প্রত্যয়ে এবার নামবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে।