কলিন্দ্রেস বোঝালেন বিশ্বকাপ খেলা তারকার মূল্য

জোড়া গোল করেছেন ভিনিসিয়ুস, তবে ম্যাচের নায়ক কলিন্দ্রেসই। ছবি: প্রথম আলো
জোড়া গোল করেছেন ভিনিসিয়ুস, তবে ম্যাচের নায়ক কলিন্দ্রেসই। ছবি: প্রথম আলো
>মোহামেডানের বিপক্ষে দুইবার পিছিয়ে পড়েও ৫-২ গোলের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে নবাগত বসুন্ধরা কিংস

একটি ফুটবল ম্যাচে এর চেয়ে বেশি নাটকীয়তা বুঝি আর হতে পারত না!

গোল-পাল্টা গোল, লাল কার্ড, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের ফ্রি কিক পোস্ট লেগে ফেরা, বিশ্বকাপ খেলা তারকার ম্যাচেই দুর্দান্ত পারফরমেন্স। এই সব নাটকীয়তা ও রোমাঞ্চের শেষ হয়েছে মোহামেডানের বিপক্ষে নবাগত বসুন্ধরা কিংসের ৫-২ গোলের জয়ে।

প্রথমার্ধে ১-১ গোলে সমতা। স্কোর বোর্ডের মতো ম্যাচেও ছিল না কোনো দলের একক আধিপত্য। তবে ম্যাচের নাটাই কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করছিল মোহামেডানের গাম্বিয়ান মিডফিল্ডার ল্যান্ডিং ডার্বো। মোহামেডানকে দুইবার এগিয়েও নিয়েছিলেন। কিন্তু তখনো মনে হয়নি শেষের দিকে অপেক্ষা করছে নাটকীয়তা ও রোমাঞ্চকর ফুটবলের রেসিপি। যোগ্য দল হয়েই ম্যাচ জিতে মাঠ ছেড়েছে বসুন্ধরা। কিন্তু ৭৭ মিনিটে তকলিস আহমেদ লাল কার্ড দেখে মাঠ না ছাড়লে ফলাফলটা অন্য রকমও তো হতে পারত। ২-২ গোলে সমতা থাকা অবস্থাতে মোহামেডান ১০ জনের দল হয়ে পড়ে বাকি সময়ে গোল হজম করল তিনটি।

ম্যাচের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল কোস্টারিকার হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস। তিনি যে বিশ্বকাপের তারকা, তাঁর প্রতিটি বলের ছোঁয়াতেই ফুটে উঠেছে তা। স্পটকিক থেকে নিজে একটি গোল করেছেন, আর করিয়েছেন তিনটি। তাঁর কল্যাণেই শেষ মুহূর্তে জোড়া গোল করতে পেরেছেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার মার্কোস ভিনিসিয়ুস। ব্রাজিলিয়ান এই স্ট্রাইকারের জোড়া গোলের পেছনে কলিন্দ্রেসের অবদান এত বেশি যে, এই কোস্টারিকান একটু স্বার্থপরতা দেখালেই ম্যাচের ভিলেন হতে পারতেন মার্কোস। গোলের অনেক সুযোগ হাতছাড়া করা এই ব্রাজিলিয়ানকে সমালোচনার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন কলিন্দ্রেস। স্প্যানিশ জর্জ গোটরের গোলেও অবদান আছে এই কোস্টারিকানের। বসুন্ধরাকে প্রথমবারের মতো এগিয়ে দেওয়া মতিন মিয়ার গোলটি অবশ্য একক প্রচেষ্টার।

ম্যাচের শুরুতেই চমক দেখিয়েছেন বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। তাঁর একাদশে প্রথাগত ডিফেন্ডার মাত্র একজন। গোলরক্ষক ছাড়া বাকি নয়জনই মিডফিল্ডার ও ফরোয়ার্ড। উদ্দেশ্য পরিষ্কার বলের দখল রেখে আক্রমণ, আক্রমণ, আর আক্রমণ।

স্প্যানিশ ডিফেন্ডার গোটরের সঙ্গে সেন্টারব্যাক খেলেছেন কিরগিজস্তানের মিডফিল্ডার বখতিয়ার দুশোবেখভ। রাইট ব্যাকে জাতীয় দলের স্ট্রাইকার মাহবুবুর রহমান সুফিল, লেফটব্যাকে উইঙ্গার মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ফলে দুই ফুলব্যাক থেকে পাওয়া গেছে প্রত্যাশিত আক্রমণ। কিন্তু বসুন্ধরার রক্ষণভাগও ঝাঁকুনি খেয়েছে বারবার। ম্যাচে মোহামেডান দুই দুইবার এগিয়ে গেছে এ সুযোগেই।

১৮ মিনিটে ল্যান্ডিংয়ের গোলে মোহামেডানের এগিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা তো খুবই হাস্যকর। কিংসলে বাম প্রান্ত দিয়ে কোনাকুনি ঢুকে নিরীহ শট নিলে গোটরের পায়ে লেগে বলের দিক আলতো পরিবর্তন হয়। ফলোআপে থাকা আনমার্কড ল্যান্ডিং দূরের পোস্টে শুধু টোকা দিয়ে জালে রেখেছেন। ২৮ মিনিটে বসুন্ধরা সমতায় ফেরে পেনাল্টি থেকে করা কলিন্দ্রেসের গোলে। বক্সের মধ্যে ইব্রাহিমকে ফাউল করেছিলেন মোহামেডান অধিনায়ক মিন্টু শেখ। স্পটকিক থেকে গোল করতে কোনো ভুল করেননি কলিন্দ্রেস।

৩৮ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত বসুন্ধরা। কিন্তু সুফিলের ক্রসে দূরের পোস্টে আনমার্কড থাকা অবস্থায়ও বল জালে জড়াতে পারেননি ভিনিসিয়ুস। এর পরেই দুজনকে কাটিয়ে ব্যক্তিগত কারিশমায় এই ব্রাজিলিয়ানকে রক্ষণচেরা পাস দিয়ে গোলমুখ খুলে দিয়েছেন কলিন্দ্রেস। কিন্তু তাঁর শট গোলপোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসে রক্ষা করে মোহামেডানের গোলরক্ষক আহসান হাবিব বিপু। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যথা পেয়ে এই গোলরক্ষককে যেতে হয়েছে হাসপাতালে।

দ্বিতীয়ার্ধের ৬৬ মিনিটে স্পটকিক থেকে গোল করে মোহামেডানকে আবারও এগিয়ে নিয়েছেন ল্যান্ডিং। কিন্তু মোহামেডান সমর্থকদের হাসি স্থায়ী হলো মাত্র পাঁচ মিনিট। কলিন্দ্রেসের ফ্রি কিক থেকে ২-২ করেছেন জর্জ গোটর।

একটু পরেই তকলিস আহমেদ দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে দশ জনের দলে পরিণত হয় মোহামেডান। খেই হারিয়ে ফেলে দলটি হজম করে আরও তিন গোল। ৭৯ থেকে ৯৫ মিনিটেই তিন গোল করে বসুন্ধরা। ৭৯ মিনিটে ইব্রাহিমের পাস থেকে বক্সে ঢুকে জোরালো শটে বসুন্ধরাকে এগিয়ে নেন বদলি মতিন মিয়া।

যোগ করা সময়ে এসেছে আরও দুই গোল। সতীর্থ গোটরের লম্বা বাড়ানো বল পান অফ সাইড ট্র্যাপকে ফাঁকি দেওয়া কলিন্দ্রেস। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলরক্ষককে একা পেয়েও নিজে শট না নিয়ে ভিনিসিয়ুসকে দিয়ে করান কলিন্দ্রেস। শেষ গোলটিও সতীর্থকে দিয়েই করিয়েছেন কোস্টারিকার হয়ে বিশ্বকাপে খেলা এই তারকা। ম্যাচের প্রতিটা মুহূর্তে বুঝিয়ে গেলেন, বিশ্বকাপ খেলা তারকার দামটা একটু বেশিই।