টেস্টেও ধবলধোলাই, কী ভাবছেন বাংলাদেশ কোচ?

টানা সাফল্য পাচ্ছেন, স্টিভ রোডসের মুখে হাসি তো থাকবেই। ছবি: রানা আব্বাস, সিলেট থেকে
টানা সাফল্য পাচ্ছেন, স্টিভ রোডসের মুখে হাসি তো থাকবেই। ছবি: রানা আব্বাস, সিলেট থেকে
বাংলাদেশের কোচ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর শুরুটা ছিল ভয়াবহ! গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাজেভাবে টেস্ট সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। এরপরই ঠিক উল্টো ছবি, সাফল্যের ভেলায় ভেসে এগিয়ে চলেছেন স্টিভ রোডস। ইংলিশ কোচের অধীনে বাংলাদেশ পাচ্ছে একের পর এক সাফল্য। সবশেষ জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই করেছে বাংলাদেশ। এবার টেস্ট সিরিজে ছন্দটা ধরে রাখার লক্ষ্য। গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুশীলন শেষে প্রথম আলোর সঙ্গে রোডসের আলাপচারিতায় উঠে এল বেশ কিছু প্রসঙ্গই।


* ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই করেছে বাংলাদেশ। এই সিরিজে যা করতে চেয়েছিলেন, পেরেছেন? পুরোপুরি তৃপ্ত?

স্টিভ রোডস: হ্যাঁ, অনেক তৃপ্ত। ৩-০ ব্যবধানে জেতা সব সময়ই কঠিন। জিম্বাবুয়ে ভালো খেলেছে। আমি একটু চিন্তায় ছিলাম, দক্ষিণ আফ্রিকা ওদের বাজেভাবে হারিয়েছে। ভেবেছিলাম আমাদের বিপক্ষে ওরা দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। ওরা খেলেছেও ভালো। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা ওদের চেয়ে ভালো খেলেছি।

* জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ ভালো করবে, এটাই প্রত্যাশিত। অনেকে তাই এ সাফল্যকে খুব একটা বড় করে দেখতে চান না। আপনি কীভাবে দেখছেন বিষয়টা?

রোডস: সিরিজটা মোটেও সহজ ছিল না। প্রথমত, আপনাকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে জিততে হয়েছে। প্রতিপক্ষ কতটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে, সেটি নিয়ে ভাবতে হয়েছে। ছেলেদের নিয়ে গর্ব করব, তারা ওদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। কখনো আত্মতুষ্টিতে ভোগেনি। অসাধারণ কিছু পারফরম্যান্স দেখেছি। ইমরুল দুর্দান্ত খেলেছে। লিটন আর সবশেষ ম্যাচে সৌম্য অসাধারণ খেলেছে। বোলিংয়ে সবাই যার যার জায়গা থেকে অবদান রেখেছে। সাইফউদ্দিন দারুণভাবে ফিরে এসেছে।

* টপ অর্ডারে পাঁচ ব্যাটসম্যানই দুর্দান্ত ছন্দে আছেন। চোটে পড়া তামিম ইকবাল তো আছেনই। লিটন, ইমরুল, সৌম্য সরকার ছন্দে ফিরেছেন। আবার তিনে সাকিব আল হাসান আছেন। ব্যাটসম্যানদের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আপনাকে কতটা মধুর সমস্যায় ফেলেছে?

রোডস: এটা শুধু আমার নয়, বাংলাদেশের জন্যই ভালো হয়েছে। এ প্রতিদ্বন্দ্বিতার অর্থ, আপনার হাতে অনেক বিকল্প খেলোয়াড় আছে। কাকে রেখে কাকে খেলাব, এটা আমার জন্য মোটেও চিন্তার কিছু নয়, বরং ভালো। দলের সঠিক সমন্বয় পাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।


* ব্যাটসম্যানরা অসাধারণ খেললেও ওয়ানডে সিরিজে পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে কি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পেরেছেন?

রোডস: আমি এটা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই। আমরা ভালো পেস আক্রমণ নিয়েই খেলেছি। ফিজ (মোস্তাফিজুর রহমান) এই মুহূর্তে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার। ম্যাশ (মাশরাফি বিন মর্তুজা) পরীক্ষিত বোলার, রেকর্ডই তার পক্ষে কথা বলবে। একটি ম্যাচেও রুবেল হোসেনের মতো বোলার একাদশে সুযোগ পায়নি। সাইফউদ্দিনের ফিরে আসা, শেষ ম্যাচে রনি (আবু হায়দার) ভালো বোলিং করেছে। বোলিং আক্রমণ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই।


* এবার টেস্ট সিরিজ-প্রসঙ্গে আসি। সবশেষ টেস্ট সিরিজটা বাংলাদেশ ভালো খেলেনি। দুঃসহ স্মৃতি এত তাড়াতাড়ি নিশ্চয়ই ভোলার নয়!

রোডস: হ্যাঁ, আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজ ভালো খেলেনি। ভুল শুধরে নিয়ে এখানে ভালো শুরু করতে হবে। কীভাবে আমরা এগোচ্ছি, সেটি দেখতে খুবই আগ্রহী। ছেলেরা আশা করি আত্মবিশ্বাসী। জানি দেশের মাঠে আমরা ধারাবাহিক ভালো খেলি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট সিরিজে আমাদের ধারাবাহিকতা ছিল না। প্রথম টেস্টের প্রথম দিনটাই আমাদের খারাপ গেছে। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটাই নিশ্চিত করতে হবে যেন আমরা বেশির ভাগ সেশনে এগিয়ে থাকি। পাঁচ দিনের খেলা, সব সময়ই ভালো অবস্থায় থাকতে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে।


* সিলেটে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কেমন উইকেট প্রত্যাশা করছেন?

রোডস: ট্রিকি উইকেট হবে আশা করি। টেস্ট শুরুর আগে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করব, তখন আরও ভালো বোঝা যাবে। আশা করি সবার জন্যই কিছু না কিছু থাকবে।

* গত কয়েক বছর দেখা যাচ্ছে উপমহাদেশের বাইরের কোনো দল খেলতে এলে বাংলাদেশ স্পিন-সহায়ক উইকেটে খেলে থাকে। এবারও কি সেটিই হতে যাচ্ছে?

রোডস: কখনো কখনো উইকেট স্পিনারদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে। নতুন বলে যদি কিছু মুভমেন্ট থাকে, খুব ভালো হবে। আমরা আসলে সবকিছু সমান চাচ্ছি। ভালো ব্যাটিং করা যাবে, স্পিনারদের জন্য কিছু থাকবে, আবার পেসাররাও হতাশ হবে না।

* বাংলাদেশ টেস্ট দলে চমক হয়ে এসেছেন খালেদ আহমেদ। শুনেছি আপনি বেশ মুগ্ধ তাঁর বোলিংয়ে। তাঁর কোন বৈশিষ্ট্য আপনাকে বেশি মুগ্ধ করেছে?

রোডস: সবশেষ জাতীয় লিগে সে ১০ উইকেট পাওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। ভালো উচ্চতা আছে। উইকেট টু উইকেট বোলিং করতে পারে। উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। সে খেলবে কি খেলবে না এখনো বলতে পারছি না। তবে তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। বিসিবির হাইপারফরম্যান্স দল, বাংলাদেশ 'এ' দলে অনেক উন্নতি করেছে। টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়াটা তাঁর জন্য অনেক বড় ব্যাপার।


* ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে ফিরেই বলছিলেন টেস্টে ভালো করতে গতিময়-দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলার দরকার। খালেদের মতো বোলার উঠে আসাটা কি আপনাকে আশাবাদী করছে?

রোডস: খুব বেশি লম্বা বোলার পাইনি। তবে খালেদ, তাসকিন, শরিফুলের ভালো উচ্চতা আছে। বাংলাদেশ একসঙ্গে অনেক দীর্ঘদেহী বোলার পাওয়া কঠিন। সত্যি আমাদের কিছু দীর্ঘদেহী বোলার দরকার, যারা বল ভালো উচ্চতায় তুলতে পারবে (হিট দ্য ডেক)। আমরা কাজ করছি এটা নিয়ে।

* সাকিব আল হাসান এ সিরিজেও নেই। বলা যায় টেস্টে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের মূল ভরসা নেই। কিন্তু আপনার হাতে দুজন বাঁহাতি স্পিনার আছে, তাইজুল ইসলাম ও নাজমুল ইসলাম। সাকিব যেহেতু নেই, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুজনকেই এক সঙ্গে দেখতে পারার কতটা সম্ভাবনা আছে?

রোডস: এটা জানতে একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমরা এখনো একাদশ নিয়ে বসিনি। যারা দলে আছে, সবারই একাদশে খেলার যোগ্যতা আছে। এ মুহূর্তে সবারই সমান সম্ভাবনা আছে।

* দলের স্পিন আক্রমণ নিয়ে কতটা আশাবাদী?

রোডস: ভালো। সাকিব আল হাসানের মতো বোলার নেই, তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হবেই। দুর্দান্ত ক্রিকেটার, তাকে আমরা মিস করতে যাচ্ছি। তবে আমাদের হাতে মিরাজ, তাইজুল, অপু (নাজমুল), রিয়াদের (মাহমুদউল্লাহ) মতো চারটা ভালো স্পিনার আছে। স্পিন আক্রমণ নিয়ে আমি এখনো আশাবাদী।

* আর পেস আক্রমণ নিয়ে কী বলবেন?

রোডস: হ্যাঁ, আমাদের তিনজন পেসার আছে দলে। এই মাঠ সম্পর্কে রাহি (আবু জায়েদ) ও খালেদের খুব ভালো ধারণা আছে। ওরা সিলেট দলে খেলে। কন্ডিশন তাদের খুব ভালো চেনা। পেসারদের মধ্যে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। শফিউলের ভালো অভিজ্ঞতা আছে। সে বেশ কিছু টেস্ট খেলেছে।

* প্রথমবারের মতো সিলেটে এলেন। এখানকার সবকিছু কেমন লাগছে?

রোডস: অনেক ভালো লাগছে। স্টেডিয়ামটা দারুণ লাগল। সুযোগ-সুবিধা অসাধারণ। উন্নত ড্রেসিংরুম, সবকিছুই ভালো। এখন আমাদের পাঁচটা দিন দুর্দান্ত খেলতে হবে।

* জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছেন ৩-০ ব্যবধানে। টেস্টে সিরিজেও ধবলধোলাই করতে কতটা আশাবাদী?

রোডস: কোনো অনুমান করতে চাই না। কোচ হিসেবে সেটি করাও ঠিক নয়। আমরা আমাদের সেরা খেলাটা খেলে জিততে চাই। আমার ভাবনায় শুধু সিরিজ জেতা। যদি ১-০ ব্যবধানে জিততে পারি, অনেক ভালো হবে। ২-০ ব্যবধানে যদি জিতি সেটিও অনেক ভালো। কত ব্যবধানে জিতলাম, সেটির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ভালো খেলে জিততে পারছি কি না।