কোন পথে ভারতের ক্রিকেট? গাঙ্গুলির 'পত্রবোমা'

ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। ছবি: টুইটার
ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। ছবি: টুইটার
>বিসিসিআইয়ের প্রশাসক মহল ভারতীয় ক্রিকেটকে যে পথে চালাচ্ছেন তা নিয়ে ভীষণ শঙ্কিত সৌরভ গাঙ্গুলি। এ নিয়ে বিসিসিআইকে মেইলের মাধ্যমে একটি চিঠিও দিয়েছেন ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক

ভারতীয় ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত সৌরভ গাঙ্গুলী। ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক বর্তমানে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) সভাপতি। বিসিসিআইয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে সৌরভ নিজের শঙ্কার কথাই জানিয়েছেন, ভারতে ক্রিকেট যেভাবে চলছে তা নিয়ে তিনি ‘গভীরভাবে ভীত ও শঙ্কিত।’ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিসিআই) এখনকার প্রশাসকদের কারণে খেলাটি জনপ্রিয়তা ‘হুমকির মুখে’ বলেও মনে করছেন সিএবি সভাপতি।

বোর্ডের কাছে লেখা সৌরভের চিঠিটি পেয়েছে ক্রিকইনফো। তারা জানিয়েছে, রবি শাস্ত্রী যেভাবে ভারতীয় দলের কোচ হয়েছেন তা ‘আতঙ্কজনক’ বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। #মিটু বিতর্কে বিসিসিআই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাহুল জোহরির জড়িয়ে পড়ার সমালোচনাও করেছেন সাবেক এই অধিনায়ক। এ ছাড়াও ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে মৌসুমের মাঝপথে খেলার নিয়ম পাল্টে ফেলারও তীব্র সমালোচনা করেছেন গাঙ্গুলি।

সৌরভ যে তিনটি ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তার মধ্যে দুটি বিষয়ে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন। বিসিসিআইতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসক দল কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটরসের (সিওএ) সম্মতি ছিল তাতে। অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় অনিল কুম্বলের জায়গায় রবি শাস্ত্রীকে কোচ হিসেবে বাছাই করার কমিটিতে ছিলেন সৌরভ। শাস্ত্রী যেন কোচ পদে আবেদন করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়েছিল। কোচ নিয়োগের সাক্ষাৎকার শেষে সৌরভ বলেছিলেন, কোহলিকে তাঁর চাহিদার ব্যাপারে ভাবতে আরেকটু সময় দিতে চান। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তখন জানিয়েছিল, কুম্বলের জায়গায় কোচ হিসেবে শাস্ত্রীকে চেয়েছিলেন কোহলি।

কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। সৌরভ যেদিন কোহলিকে সময় দেওয়ার কথা বলেছিলেন সেদিন সন্ধ্যাতেই কোহলিদের কোচ হিসেবে শাস্ত্রীর নাম ঘোষণা করে বিসিসিআই ও সিওএ। যদিও সেদিন প্রথম সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ব্যাটিং কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড় আর বোলিং কোচ হিসেবে জহির খান যোগ দেবেন জাতীয় দলের সঙ্গে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট দলের এই দুই সাবেক তারকা জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাননি।

গাঙ্গুলি তাঁর চিঠিতে এ নিয়ে লিখেছেন, ‘কোচ নিয়োগের ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা ছিল আতঙ্কজনক। এ নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভালো।’

ভারতের সাবেক এই ওপেনার বিসিসিআই টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এই কমিটি সাধারণত ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মকানুন তৈরি, পরিচালনা এবং খেলার আইন নিয়ে কাজ করে থাকে। কিন্তু রঞ্জি ট্রফিতে এই কমিটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে বললেও তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সৌরভ লিখেছেন, ‘মৌসুমের মাঝপথে খেলার নিয়ম পাল্টানো হলো। কখনো এমন কিছু শুনিনি। কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রতি পুরোপুরি অশ্রদ্ধা জানিয়ে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।’

বিসিসিআই টেকনিক্যাল কমিটি আরেকটি সুপারিশ করেছিল। সেটি ছিল দিবা-রাত্রির টেস্ট ক্রিকেটের পক্ষে। বিসিসিআই প্রধান নির্বাহী রাহুল জোহরি জানিয়েছিলেন, টিম ম্যানেজমেন্ট এই পরিকল্পনার বিপক্ষে। #মিটু কাণ্ডে বোর্ডের জড়িয়ে পড়া এবং ব্যাপারটা সিওএ যেভাবে সামলাচ্ছে—তার সমালোচনাও করেছেন সৌরভ। বিসিসিআই সিইও জোহরি আগে যেখানে কর্মরত ছিলেন সেখানকার এক নারী তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তুলেছেন। এই অভিযোগে জোহরি এখন কাঠগড়ায়। টুইটারে ব্যাপারটি ঝড় তোলার পর এ নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটরসদের (সিওএ) সদস্যদের মধ্যে। খোদ বিসিসিআইয়ের ভেতরেই জোহরির বিপক্ষে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সিওএ বিষয়টি যেমন স্বীকার করেনি তেমনি অস্বীকারও করেনি।

গাঙ্গুলি তাঁর চিঠিতে সোজাসাপটাই লিখেছেন, ‘আমি জানি না, ঘটনা কতটুকু সত্যি। এসব নিগ্রহের প্রতিবেদনের কারণে বোর্ডের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তার চেয়েও বেশি হচ্ছে যেভাবে পুরো ব্যাপারটা সামলানো হচ্ছে তার জন্য। সিওএ আগে চার সদস্যের ছিল। এখন তা দুই সদস্যের। দুজনের মধ্যে এখনো মতবিরোধ রয়েছে।’

ভারতের সাবেক সাবেক এই অধিনায়ক তাঁর এই চিঠিতে বেশ শক্ত ভাষায়ই বলেছেন, ‘ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসক মহল কোন পথে যাচ্ছে তা নিয়ে আমি গভীর শঙ্কায় থাকায় আপনাদের কাছে এই মেইল করছি। খেলাটির সঙ্গে অনেক দিন আমাদের জীবন জড়িত ছিল যেখানে জয়-পরাজয় আর ভারতীয় ক্রিকেটের ভাবমূর্তি সবার আগে প্রাধান্য পেয়েছে। কিন্তু এখন আমাদের ক্রিকেট কোন পথে যাচ্ছে। বিনয়ের সঙ্গেই জানাচ্ছি যে, গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসকদের প্রতি ভক্তদের বিশ্বাস ও ভালোবাসা পড়তির দিকে।’