তুষার-রাজ্জাকে প্রেরণা মেলে মিঠুনের

টেস্টেও নিজেকে চেনাতে চান মিঠুন। ছবি: প্রথম আলো
টেস্টেও নিজেকে চেনাতে চান মিঠুন। ছবি: প্রথম আলো
>বাংলাদেশ টেস্ট দলে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন মিঠুন। অনেক দিনের একটা স্বপ্ন পূরণ হলো তাঁর। যদিও আলাদা কোনো রোমাঞ্চ কাজ করছে না তাঁর।

বাংলাদেশ দলের আজ ছুটি। অনুশীলন যখন নেই, একটু ঘুরে আসা যাক—এ ভাবনায় সকালেই নির্বাচক হাবিবুল বাশার, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক ও দলের লজিস্টিক ম্যানেজার দেবব্রত পালকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন কোচ স্টিভ রোডস। দুপুরে টিম হোটেলের লবিতে দেখা গেল নাজমুল ইসলাম ও শফিউল ইসলামকে। খানিক পরে সেখানে এলেন আবু জায়েদ ও মোহাম্মদ মিঠুন।

নাজমুল-শফিউল কোথায় যেন বেরিয়ে পড়লেন। মিঠুন-আবু জায়েদ এলেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। বাংলাদেশ টেস্ট দলে এবার প্রথমবারের মতো যে চারজন সুযোগ পেয়েছেন, মিঠুন তাঁর একজন। অথচ তাঁকে দেখলে মনে হয় না নতুন মুখ। মনে হবেই বা কেন! যাওয়া-আসা না করলে এত দিনে বাংলাদেশ দলে টানা চার বছর খেলা হয়ে যেত। এই এশিয়া কাপ থেকে মিঠুনের ভাগ্যটা বদলেছে। ভালো খেলছেন, টানা সুযোগ পাচ্ছেন একাদশে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তাঁর কাছে নতুন কিছু না হলেও টেস্ট খেলবেন, এই স্বপ্ন বুকে লালন করছেন বহুদিন। সেই স্বপ্নপূরণটা এভাবে হয়ে যাবে, মিঠুন নিজেও ভাবতে পারেননি, ‘স্বপ্ন ছিল টেস্ট ম্যাচ খেলব। এভাবে সুযোগটা আসবে আমিও আশা করিনি। পত্রিকা খুব একটা পড়া হয় না। একজন সাংবাদিকই আমাকে ফোন করে খবরটা দেন যে টেস্ট স্কোয়াডে আছি। খুব ভালো লাগছে যখন শুনলাম যে টেস্ট দলে আছি। আমার মনে হয় যে যখন টেস্ট খেলতে পারব, তখনই খেলোয়াড় হিসেবে আমার পূর্ণতা আসবে। টেস্ট ক্রিকেটে যখন সফল হব, তখনই মনে হবে ক্রিকেটের জন্য যথার্থ। আমার স্বপ্ন ছিল, যদি সুযোগ পাই, চেষ্টা করব এটি কাজে লাগানোর।’

একটা স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে, অথচ মিঠুনের কোনো রোমাঞ্চই অনুভব করছেন না! কেন করছেন না, বাংলাদেশ দলের এ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান সেটির ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘না, আসলে আমার জীবনে কখনো এমন হয়নি। হয়তো এটাই আমার স্বভাব। বাদ পড়লেও ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার চেষ্টা করি। সুযোগ পেলে সেটাও স্বাভাবিক ভাবে নিই।’

মিঠুন এমনই, আলাদা উত্তেজনা কিংবা রোমাঞ্চ খুব একটা স্পর্শ করে না। তাঁর অভিব্যক্তি, চলাফেরা—সবকিছুতেই আশ্চর্য শীতলতা। তবে দিন শেষে রক্ত–মাংসের মানুষ তো! তিনিও আবেগতাড়িত হন, অপ্রত্যাশিত চাপ তাঁকেও জেঁকে ধরে। তবে মিঠুন ঠিক করেছেন, অহেতুক চাপ নেবেন না, ‘যদি চাপ নিই, সেটা আমার কোনো উপকারে আসবে না, ক্ষতিই হবে! চাপ কিছুটা থাকে। চেষ্টা করি যতটা তা সামলানো যায়। ব্যাটিংয়ে যখন মাঠে প্রতিপক্ষ দলের ১১ জন থাকে, আমার একজন সঙ্গী থাকে। চাপ থাকবেই, সেখান থেকে সফল হওয়াই একজন ব্যাটসম্যানের কাজ।’

টেস্টে নতুন হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে মিঠুন পুরোনো মুখ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন খুলনা কিংবা দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে। এই দলেই খেলেন ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দুই সফল ক্রিকেটার তুষার ইমরান ও আবদুর রাজ্জাক। দুই এই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের কাছে থেকে অনেক কিছু শিখেছেন মিঠুন। সেটিই তিনি কাজে লাগাতে চান টেস্টে, ‘তাঁদের কাছ থেকে কটা জিনিস শিখেছি। দুজনেই আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক সফল। একজন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি, আরেকজন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতি ম্যাচেই তাঁদের ভালো করার তাগিদ থাকে। তুষার ভাই যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, যত কঠিন পরিস্থিতি থাকুক, তিনি কোনো না কোনোভাবে মানিয়ে নেন। রাজ ভাইও একই।’

মোটকথা মাঠে তুষার–রাজ্জাকের শতভাগ দেওয়ার বিষয়টিই মিঠুর অনুসরণ করেন, ‘যেদিন সাহায্য পান না (উইকেট থেকে), সেদিনও অনেক চেষ্টা করেন। একজন খেলোয়াড় হিসেবে শতভাগ চেষ্টা করার বিষয়টি হাতে আছে। তবে সব সময় যে সফল হতে পারব, সেটা হাতে নাই। একটি ভালো বলে আউট হয়ে যেতে পারি। তুষার ও রাজ ভাইয়ের মধ্যে যে চেষ্টা দেখেছি, ওটা আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করে।’

মিঠুনের কথায় আফসোস বাড়তে পারে তুষার-রাজ্জাককে। তাঁদের অভিজ্ঞতার যথার্থ মূল্যায়নই যে হলো না!