বগুড়া-খুলনার মতো হবে না তো সিলেট?

সিলেট স্টেডিয়ামেই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টেস্ট ম্যাচ । ছবি: প্রথম আলো
সিলেট স্টেডিয়ামেই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টেস্ট ম্যাচ । ছবি: প্রথম আলো
>সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম দেখে মুগ্ধ হতেই হবে। মুগ্ধতা ছড়ানো এ মাঠেই প্রথমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে টেস্ট ম্যাচ। এই টেস্ট ঘিরে যে আগ্রহ, যে উচ্ছ্বাস, ভবিষ্যতেও থাকবে তো? বগুড়া-খুলনার মতো অলস পড়ে থাকবে না তো দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়ামটি?


গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এসে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সবুজের বুকে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য—মনকাড়া এ মাঠটা দেখে শ্রীলঙ্কা কোচ এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন, বলেছিলেন, ‘সাড়ে তিন বছর বাংলাদেশে কাটিয়ে গেলাম অথচ এত সুন্দর মাঠে আগে আসা হয়নি!’

একদিকে টিলা, আরেক দিকে চা–বাগান, মাঝে স্টেডিয়াম—চোখজুড়ানো এ মাঠে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে টেস্ট। ৩ নভেম্বর বাংলাদেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু হবে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের। এই টেস্ট ঘিরে আয়োজকদের উচ্ছ্বাসের যেমন কমতি নেই, তেমনি বিপুল আগ্রহ দর্শক ও সংবাদমাধ্যমের। উপলক্ষটা স্মরণীয় করে রাখতে অনেক আয়োজনই করছেন আয়োজকেরা। বিশাল ঘড়ি স্থাপন, টস করতে বিশেষ কয়েন, ম্যাচ রেফারিকে দিয়ে বেল বাজিয়ে টেস্ট শুরু, বিশেষ স্মরণিকা প্রকাশ তো আছেই, দেশের হয়ে টেস্ট খেলেছেন সিলেটের এমন সাবেক ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা জানানো হবে এতে।

সিলেটকে নিয়ে এখন যে উচ্ছ্বাসটা হচ্ছে, এমনটা দেখা গিয়েছিল বগুড়ার শহীদ চান্দু কিংবা খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের শুরুর কালেও। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ কিংবা টেস্ট আয়োজনের সময় সেখানেও আগ্রহের কমতি ছিল না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সংগঠকদের ব্যর্থতা কিংবা বিসিবির অবহেলা, অনাগ্রহ অথবা অব্যবস্থাপনায় বগুড়া-খুলনা স্টেডিয়াম চলে গেছে পেছনের সারিতে। এখন বছরের পর বছর স্টেডিয়ামগুলো পড়ে থাকে অলস। জাতীয় লিগ কিংবা বিসিএলের ম্যাচ ছাড়া সেখানে অন্য কোনো ম্যাচ নেই। ড্রেসিংরুমে নেই উন্নত সুযোগ-সুবিধা। মিডিয়া সেন্টার, গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের অবস্থা যাচ্ছেতাই। সাধারণ গ্যালারির কী অবস্থা একবার ভাবুন!

ঘুরেফিরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুধু ঢাকা আর চট্টগ্রামেই। মাঝেমধ্যে শিকে ছেড়ে ফতুল্লার ভাগ্যে। এখন যেভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে সিলেটে টেস্ট আয়োজন করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে কি ধারাটা বজায় থাকবে? বিসিবি পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী আশাবাদী, সিলেট অন্তত বগুড়া-খুলনার পথে হাঁটবে না, ‘আবাসন ও যোগাযোগব্যবস্থা একটা ভেন্যুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে বিবেচনায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট খুব ভালো জায়গায় আছে। সিলেট ভেন্যুর ব্যাপারে বোর্ডের যে আন্তরিকতা রয়েছে, সাধারণ মানুষ ও সংবাদমাধ্যমের যে আগ্রহ দেখি, মনে করি না সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম অলস বসে থাকবে। প্রতিটা সিরিজেই আমরা হয়তো এখানে কোনো না কোনো ম্যাচ পাব। যত বেশি ম্যাচ পাব, ততই ভেন্যু সচল থাকবে। শুধু ঢাকা, সিলেট বা চট্টগ্রাম নয়, অন্যান্য ভেন্যুতেও নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ না হলেও মাঝেমধ্যে বিদেশি দল এলে খেলার আয়োজন করা যেতে পারে। এতে অঞ্চলের খেলোয়াড়দের ওপর একটা প্রভাব পড়ে। স্টেডিয়াম কিছুটা হলেও সংস্কার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যায়।’

শফিউল জানালেন, শিগগিরই সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ‘আউটার’ নির্মাণের কাজও শুরু হবে। সিলেটের প্রতি এখন ক্রিকেট বোর্ডের যে আন্তরিকতা বা আগ্রহ, স্টেডিয়ামটা হয়তো দ্রুতই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যুতে পরিণত হবে। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। রাজনীতির বলি হয়ে এই আন্তরিকতা অনেক সময় উধাও হয়ে যায়, যেটি হয়েছে বগুড়ায়।