ওটাবেকে হেরে গেল ব্রাজিলীয় সৌরভ

মৌসুমের প্রথম হ্যাটট্রিকম্যান ওটাবেকের কারণেই জয় পেয়েছে দল, তাঁকে ঘিরেই হলো সব উদ্‌যাপন। ছবি: প্রথম আলো
মৌসুমের প্রথম হ্যাটট্রিকম্যান ওটাবেকের কারণেই জয় পেয়েছে দল, তাঁকে ঘিরেই হলো সব উদ্‌যাপন। ছবি: প্রথম আলো

‘ওয়াও, কী দুর্দান্ত গোল!’

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ব্রাজিলিয়ান সৌরভ ছড়ানো গোলটি দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ না করে উপায় ছিল না। কী দুর্দান্ত ব্রাজিলিয়ান রসায়ন। ডান প্রান্ত দিয়ে আড়াআড়িভাবে উঠে বক্সের ওপর থেকে চামচে তুলে দেওয়ার মতো করে আলতো চিপ করেছিলেন স্ট্রাইকার ভিয়েরা লিমা লিওনার্দো। পেছন থেকে দৌড়ে এসে আরেক ব্রাজিলিয়ান এভারটন সান্তোসের নেওয়া ফ্লাইং হেড দূরের পোস্ট দিয়ে জালে। ব্রাজিলিয়ান জুটির সুবাদে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামও পেল জোগো বনিতোর স্বাদ। দর্শকের অভিবাদনের জবাব দিতে গিয়ে যার উদ্‌যাপন হয়েছে সমারসল্টে।

ব্রাজিলিয়ান এভারটনকে ভুলে যাওয়ার কথা নয় কারও। ২০১০-১১ মৌসুমে ব্রাদার্সের জার্সিতে দুই পায়ের জাদু দেখিয়েছিলেন। পরের মৌসুম শেখ জামালে খেলেই বিদায়। সেই এভারটন আবার ফিরেছেন গোপীবাগের কমলা-নীল জার্সিতে। পায়ে আগের সেই ধারটা নেই। কিন্তু বিজেএমসির বিপক্ষে আজকের ফ্লাইং হেডে গোলটি করে বুঝিয়ে দিলেন এখনো ছিটেফোঁটা হলেও আছে ব্রাজিলিয়ান ঝাঁজ। আজ ব্রাদার্সের হয়ে গোল পেয়েছেন আরেক ব্রাজিলিয়ান লিমা। কিন্তু আজকের সন্ধ্যাটা ছিল বিজেএমসির ওটাবেকের। এই উজবেকিস্তানের স্ট্রাইকারের হ্যাটট্রিকের কাছে হার মেনে ৩-২ ব্যবধানে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ব্রাদার্সকে।

প্রথমার্ধে ১-১ গোলে শেষ হওয়া ম্যাচটির দ্বিতীয়ার্ধে হলো তিন গোল। তিনটি গোলই চোখকে প্রশান্তি দিয়েছে। মৌসুমের প্রথম হ্যাটট্রিকম্যান ওটাবেকের শেষ দুটি গোলের একটি সরাসরি ফ্রি কিক থেকে, আরেকটি গোলরক্ষককে অসহায় বানিয়ে দেওয়া দারুণ বাঁকানো শটে। এই দুই গোলের আগে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ব্রাদার্সের খান মোহাম্মদ তারার লাল কার্ড।

এমন রোমাঞ্চকর ম্যাচের ২৫ মিনিটে এগিয়ে যায় ব্রাদার্স। ডান প্রান্ত থেকে এভারটনের ক্রসে গোলমুখ থেকে পা লাগিয়ে গোলের খাতা খোলেন লিমা। বিরতিতে যাওয়ার আগেই ওটাবেকের গোলে সমতায় ফেরে বিজেএমসি। তাঁর নেওয়া ফ্রি কিক ব্রাদার্সের মানব দেয়ালে দাঁড়ানো একজনের গায়ে লেগে জালে জড়িয়ে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের ৫১ মিনিটে হলো ব্রাজিলিয়ান সৌরভ ছড়ানো গোল সেই ডাইভিং হেডের গোল। এর দুই মিনিট পরেই বিজেএমসির অধিনায়ক ও মিডফিল্ডার স্যামসনকে ফাউল করে দ্বিতীয় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তারা। এই ফাউল থেকে পাওয়া ফ্রি কিক থেকেই শুরু হয় ‘ওটাবেক শো’ ও বিজেএমসির ঘুরে দাঁড়ানো। বক্সের বাইরে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে বাঁকানো শট ক্রসবারে লেগে জালে জড়িয়ে যায়। তবে পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য এই গোল হজমের দায় এড়াতে পারবেন না। ওটাবেকের তৃতীয় গোলও ঠেকাতে পারেননি জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক। বাম প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়া ওটাবেককে শট নিতে দেখে বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বিপ্লব। কিন্তু ওপরে উঠে তারপর বাঁক নেওয়া সে বল ঠেকানো সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে।

এইবারই প্রথম বাংলাদেশের ফুটবলে নাম লিখিয়েছেন ২৯ বছর বয়সী ওটাবেক। উজবেকিস্তান অনূর্ধ্ব ২৩ জাতীয় দলে খেলা এ ফুটবলার দ্বিতীয় ম্যাচে নেমেই হ্যাটট্রিক করলেন আজ। মজার বিষয় তাঁকে এনেছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। কিন্তু ব্যাটে বলে না হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তাঁকে দলে ভেড়ায় বিজেএমসি।

এই জয়ে এখনো কোয়ার্টার ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল বিজেএমসি। হেরেও সুযোগ আছে ব্রাদার্সের। এই গ্রুপের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হওয়া সাইফ স্পোর্টিং-ব্রাদার্স ম্যাচের ওপরেই নির্ভর করছে কোন দুটো দল যাবে শেষ আটে। বিজেএমসির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া সাইফ ন্যূনতম ড্র করলেই বিজেএমসিকে নিয়ে পৌঁছে যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে।