ঘণ্টায় যখন বাঁধা মনটা

এই সেই আলোচিত ঘণ্টা। ছবি: রানা আব্বাস, সিলেট থেকে
এই সেই আলোচিত ঘণ্টা। ছবি: রানা আব্বাস, সিলেট থেকে
>বাংলাদেশের আগের সাত টেস্ট ভেন্যুর কোনোটিতেই ঘণ্টা বাজিয়ে টেস্ট শুরুর রেওয়াজ নেই। সিলেট টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশেও শুরু হচ্ছে ঘণ্টা বাজানোর রেওয়াজ। আলোচিত সেই ঘণ্টা স্থাপন করা হয়েছে আজ দুপুরে, যেটি নিয়ে সবার বিপুল আগ্রহ।

চলছিল বাংলাদেশ দলের অনুশীলন। হঠাৎ সবার দৃষ্টি ঘুরে গেল দুই দলের ড্রেসিংরুমের ঠিক মাঝে। সেখানে বসানো হয়েছে সোনালি রাঙা এক ঘণ্টা। তীব্র আলোকরশ্মিতে ঘণ্টাটা চকচক করছে সোনার মতো! এই সেই আলোচিত ঘণ্টা, ৩ নভেম্বর সকালে যে বাজিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে প্রথম টেস্ট। আর দেশের অষ্টম ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের।

ঘণ্টার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে মাঠ আসা সাংবাদিক, বিসিবির কর্মী, মাঠকর্মী সবার কী তুমুল আগ্রহ! দর্শকেরা যদি আজ মাঠে আসত, নিশ্চিত ঘণ্টার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যেত! আর সেটি সামলাতে গলদঘর্ম অবস্থা হতো নিরাপত্তাকর্মীদের।

আজ দল, খেলোয়াড়, মাঠ ছাপিয়ে সোনালি রাঙা ঘণ্টার প্রতি তুমুল আগ্রহের কারণ অবশ্যই আছে। বিশ্বের বড় অনেক টেস্ট ভেন্যুতেই ঘণ্টা বাজিয়ে টেস্ট শুরু করার রীতি আছে। ২০০৭ সালে লর্ডসে প্রথম শুরু হয় ঘণ্টা বাজিয়ে টেস্ট শুরুর ঐতিহ্য। ‘দ্য ফাইভ মিনিট বেল’ নামে পরিচিত এই ঘণ্টা প্রতিদিন খেলা শুরুর পাঁচ মিনিট আগে বাজানো হয়। ২০১৬ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেনেও এ ঐতিহ্য ধরে ঘণ্টা বাজিয়ে টেস্ট শুরুর উদ্যোগ নেন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলী।  বাংলাদেশের আগের সাতটি টেস্ট ভেন্যুর কোনোটিতেই এ রকম ঘণ্টা বাজিয়ে টেস্ট শুরুর রেওয়াজ নেই। অবশ্য চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আম্পায়ার্স রুমের সামনে একটি ঘণ্টা ঝোলানো থাকলেও লর্ডস ও ইডেনের মতো কখনোই সেটি ঘটা করে বাজানো হয়নি। লর্ডস ও কলকাতার পর সিলেটই হবে তৃতীয় ভেন্যু, যেখানে টেস্ট শুরু হবে ঘণ্টা বাজিয়ে। ঘণ্টা বানিয়ে আনা হয়েছে ঢাকা থেকে। আজ সকালে ঘণ্টা স্থাপন নিয়ে বেশ ব্যস্ত দেখা গেল বিসিবি পরিচালক ও সিলেটের শীর্ষ ক্রীড়াসংগঠক শফিউল ইসলামকে।

লর্ডস ও কলকাতায় সাধারণত সাবেক ক্রিকেটার বা ক্রিকেট কিংবদন্তিরা ঘণ্টা বাজালেও সিলেটে সেটি বাজানোর কথা ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মাদুগালের। হাবিবুল বাশারকে পাশে পেয়ে প্রশ্নটা করেই ফেলা হলো, ‘আপনাকে দিয়ে বাজালে আরও ভালো হতো না?’ দলের সঙ্গে সিলেটে আসা বাংলাদেশের অন্যতম সফল টেস্ট অধিনায়ক অবশ্য এ নিয়ে কিছু বললেন না।

ঘণ্টা যে-ই বাজাবেন সেটি পরে দেখা যাবে, আগে তো সেটি ভালোভাবে দেখা দরকার। অনুশীলনের পর কোচ স্টিভ রোডসের সঙ্গে কথা বলা শেষে তাই সাংবাদিকেরা এসে জড়ো হলেন ঘণ্টার সামনে। এতক্ষণ মনটা যে বাধা ছিল এ ঘণ্টায়। ঘণ্টার পাশে দাঁড়িয়ে একটি সেলফি বা ছবি তুলে ফেসবুকে না দিলে ব্যাপারটা কি জমে! এমন ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ কে হারাতে চায়! তবে ফেসবুকে দেওয়াই নয়, পেশাগত কারণেও ঘণ্টার ছবি তোলাটা জরুরি ছিল। কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি। ঘণ্টাকে পেছনে রেখে ঠিক তখনই শফিউল ইসলামের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন এক টিভি সাংবাদিক। সাক্ষাৎকার তো আর শেষ হয় না। অগত্যা বিরক্তি আর বিরস বদনে ঘণ্টার পাশে বা সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার ইচ্ছেটা মাটি চাপা দিয়ে ফিরতে হয় এক ঝাঁক ক্রীড়া সাংবাদিকের!