উইন্ডিজকে দুই লজ্জায় ডোবাল ভারত

ভারতের বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ছবি: এএফপি
ভারতের বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ছবি: এএফপি
>
  • শেষ ওয়ানডেতে ২১১ বল হাতে রেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে ভারত
  • ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতল ভারত

এ যেন ডেইরি মিল্কের সে বিজ্ঞাপন। এক লাড্ডু পেয়ে সন্তুষ্টি নেই, তাই আরেক লাড্ডু হাজির। ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সবচেয়ে কম রানে অলআউট করার রেকর্ড গড়ে সন্তুষ্ট হয়নি ভারত। তাদের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়টাও তুলে নিয়েছে স্বাগতিকেরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০৪ রানে অলআউট করে ৯ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে। ম্যাচের বাকি তখনো ২১১ বল!

হারলে সিরিজ চলে যাবে প্রতিপক্ষের হাতে। জিতলে অন্তত সিরিজ ড্র করে সম্মানটুকু থাকবে। এই সমীকরণ নিয়ে আজ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডেতে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ওই মুখোমুখি হওয়া পর্যন্তই, লড়াই দূরে থাক আব্রুটুকুও রক্ষা হয়নি! না, ভ্রুকুটি নয় কিংবা যা ভাবছেন তেমন কিছুও নয়। জ্যাসন হোল্ডারের দলের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভাবলে তাঁরা স্রেফ নাম লিখিয়েছে পরিসংখ্যানে। কিন্তু এই ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই অতীত কিংবদন্তিদের জায়গা থেকে ভাবলে, ব্যাপারটা ওই আব্রু না থাকার মতোই।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফেরার বোধ হয় তাড়া ছিল, তাই টি-টোয়েন্টির প্রায় এক ইনিংস বাকি থাকতেই ভারতকে সিরিজ জেতার সুযোগ করে দিয়েছে সফরকারী দল। তা নয় তো কী? ৩১.৫ ওভার পর্যন্ত টিকেছে ক্যারিবীয়দের ইনিংস। বাকি ১৮.১ ওভার তো টি-টোয়েন্টির প্রায় এক ইনিংসের সমানই! স্কোরবোর্ডে রান উঠেছে ১০৪। কিছু মনে পড়ল কি?

২১ বছর আগে পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে ১২১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উপমহাদেশের দলটির বিপক্ষে সেটি ছিল ওয়ানডেতে ক্যারিবীয়দের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। ছিল—কেন বলা হলো সে তো বোঝাই যাচ্ছে। হোল্ডারের দল ১৯৯৭ সালের সেই রেকর্ড আজ লিখিয়েছে নতুন করে। ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে এটাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বনিম্ন দলীয় ইনিংস। তাহলে আব্রু আর থাকে কীভাবে?

থাকবে যে না, সেটি বোঝা গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের শুরুতেই। দ্বিতীয় ওভারের মধ্যে রানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পড়েছে উইকেট। ২ রানে ২ উইকেট! এখান থেকে ৬৬ রানে ৬ উইকেট। বাকিটা শুরুর মতোই। শুধু তৃতীয় উইকেটে মারলন স্যামুয়েলস-রোভম্যান পাওয়েল ৩৪ রানের জুটি গড়ে এই আসা-যাওয়ার মিছিল ঠেকানোর মিছে চেষ্টা করেছিলেন। মিছে চেষ্টা বলার কারণ—স্যামুয়েলস ২৪ রানের বেশি করতে পারেননি। সর্বোচ্চ ২৫ রান এসেছে হোল্ডারের ব্যাট থেকে। ৩৪ রানে ৪ উইকেট নেন রবীন্দ্র জাদেজা।

ক্যারিবীয়দের এই পতনের মিছিল দেখে সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার কথা ভারতীয় সমর্থকদের। কিন্তু তাঁরাও মন খারাপ করতে পারেন। প্রতিপক্ষ দল ১০৪ রানে গুটিয়ে গেলে বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি করবেন কীভাবে! এই সিরিজে টানা তিনটি তিন অঙ্কের ইনিংস খেলা ভারতীয় অধিনায়ক সেঞ্চুরি করাকে রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করেছেন। প্রতিপক্ষের ১০৪ রান তাড়া করতে নেমে একাই সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না তিনে নামা কোহলির।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাঁদের ইনিংসে যে কয় ওভার হাতে রেখে অলআউট হয়েছে, ভারত ওই কয় ওভারের মধ্যে জিততে পারবে কি না? ধাওয়ান আউট হয়েছেন দ্বিতীয় ওভারে দলীয় ৬ রানে। কিন্তু ভারতের এতে কিছু যায় আসেনি। রোহিত (৬৩*) ও কোহলির (৩৩*) অপরাজিত ৯৯ রানের জুটিতে ভারত ৯ উইকেট হাতে রেখে সেই কাজ সেরেছে ১৪.৫ ওভারেই। অর্থাৎ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে বাকি থাকা ১৮.১ ওভারের চেয়েও ৩.২ ওভার কম! আর ভারতের ইনিংসে গোটা ৫০ ওভার হিসেবে আনলে তাঁদের জয়ের ব্যবধান ভিভ-লয়েডদের রীতিমতো লজ্জায় ফেলে দেওয়ার মতো—২১১ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটের জয়! এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রান তাড়া করতে নেমে বল দরকার না হওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ছিল ১০৭ বলের।

রোববার কলকাতায় গড়াবে এ দুই দলের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ।