...সব সময়ই নাড়া দেয় মাহমুদউল্লাহকে

অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে কাল। ছবি: শামসুল হক
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে কাল। ছবি: শামসুল হক
>

১১ বছরের ক্যারিয়ারে কখনো নিয়মিত অধিনায়ক না হওয়া কিংবা সিলেটে দুটি বিশেষ ম্যাচেই দলকে নেতৃত্ব দেওয়া—এই বৈপরীত্য কীভাবে দেখেন মাহমুদউল্লাহ?

বিসিবি মিডিয়া ম্যানেজার আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, সকাল ১১টায় শুরু হবে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলন। ১১টা বেজে গেছে, অধিনায়ককে তো দেখা যাচ্ছে নেটে। 'ওহ'—বিরাট চিৎকার ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বলটা ঠিকঠাক টাইমিং না হওয়ায় মাহমুদউল্লাহর চিৎকার। তিনি আগে ব্যাটসম্যান, পরে অধিনায়ক, এই দৃশ্যই যেন ফুটে ওঠে মাহমুদউল্লাহর নেট অনুশীলনে।

কল্পচোখে একটা দৃশ্য
সোনালি রাঙা চকচকে ঘণ্টাটা বেজে উঠেছে। মাথায় গাঢ় সবুজ ব্যাগি গ্রিন, সাদা পোশাকের ওপর কালো ব্লেজার পরে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ও ম্যাচ রেফারির সঙ্গে মাঠে পা রাখলেন মাহমুদউল্লাহ। সিলেটে প্রথম টেস্ট। দর্শকের বিপুল হর্ষধ্বনি আর উৎসবমুখর পরিবেশে সুনীল আকাশের দিকে তাকিয়ে শূন্যে কয়েন ছুড়ে দিলেন স্বাগতিক অধিনায়ক। যেনতেন কয়েন নয়, এই টেস্ট উপলক্ষে তৈরি হয়েছে বিশেষ কয়েন। টস কে জিতল, কাল সকালেই জানতে পারবেন। কিন্তু দৃশ্য তো এটাই দেখা যাবে, না কি?

সিলেট ও মাহমুদউল্লাহ
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ অধিনায়কত্বের একটা যোগ আছে। গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে বাংলাদেশ যখন প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে এল সিলেটে, সেটিতেও অধিনায়ক ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এই যে সিলেটে দুটি 'প্রথম'-এর সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্ব জড়িয়ে, তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতেই পারেন!

মাহমুদউল্লাহ যে কয়েনটা দিয়ে টস করবেন সেটির যেমন দুটি দিক থাকবে, তেমনি তাঁর অধিনায়কত্বেরও দুটি দিক আছে। সিলেটে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি কিংবা প্রথম টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া যেমন সৌভাগ্যের, ঠিক বিপরীত অভিজ্ঞতাও আছে। প্রায় ১১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, বাংলাদেশ ক্রিকেটে পঞ্চ পান্ডবের একজন অথচ নিয়মিত অধিনায়কত্বের স্বাদ এখনো পাওয়া হয়নি। এ বছরই যে দুবার নেতৃত্বের ভার তাঁর কাঁধে উঠেছে, দুটিই আপৎকালীন, ভারপ্রাপ্ত হিসেবে। সাকিব আল হাসান ফিট থাকলে মাহমুদউল্লাহর সুযোগটা যে পাওয়াই হয় না। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য প্রায়ই বলেন, এভাবে অধিনায়কত্ব পাওয়া অপ্রত্যাশিত। সতীর্থের চোট যে কেউ প্রত্যাশা করে না।

আশ্চর্য বৈপরীত্য
১১ বছরের ক্যারিয়ারে কখনো নিয়মিত অধিনায়ক না হওয়া কিংবা সিলেটে দুটি বিশেষ ম্যাচেই দলকে নেতৃত্ব দেওয়া—এই বৈপরীত্য কীভাবে দেখেন মাহমুদউল্লাহ? ‘এখানে আসলে দুর্ভাগা বা সৌভাগ্যবান হওয়ার বিষয় নয়। দায়িত্বটা এসেছে, আমি আমার দায়িত্ব নিয়েই চিন্তা করছি। দায়িত্বটা ভালোভাবে পালন করাই মূল লক্ষ্য’—মাহমুদউল্লাহ ভুল বলেননি। কিন্তু অধিনায়কত্বের রোমাঞ্চ, জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়া অনুভূতি নিশ্চয়ই অন্যরকম? নিশ্চয়ই তাঁকে আলোড়িত করে, ভেতরে একটা নাড়া দেয়। নাড়ার কথা শুনে মাহমুদউল্লাহ দিলখোলা একটা হাসি দিয়ে বলেন, ‘অধিনায়কত্ব সব সময় আমাকে ভালো ভাবেই আমাকে নাড়া দেয়। আগেই বলেছি এই দায়িত্বটা আমি সব সময়ই উপভোগ করার চেষ্টা করি। দলের সবাই কম-বেশি সহায়তা করে। এখন ভালো খেলার অপেক্ষায় আছি।’

মাহমুদউল্লাহ প্রথমবার অধিনায়কত্ব পেয়েছেন গত ফেব্রুয়ারিতে, সাকিব আঙুলের চোট পড়লে। নিদাহাস ট্রফির শেষ দিকে বাঁহাতি অলরাউন্ডার ফিরলে আবারও নিয়মিত অধিনায়ককে দায়িত্বটা ফিরিয়ে দিতে হয় মাহমুদউল্লাহকে। সংক্ষিপ্ত সময়ে একজন অধিনায়কের দর্শন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় কিংবা করা যায় না দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা। তবুও সব অধিনায়কের নিজস্ব শৈলী বা স্টাইল তো আছেই। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ কোন স্টাইলে নেতৃত্ব দিতে পছন্দ করেন, সেটি গুছিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন, ‘সব সময়ই খেলোয়াড়দের স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা দিলে যার যার জায়গা থেকে ভালো করার সুযোগটা বেশি থাকে। অনেক সময় অধিনায়কত্ব সাহসিকতার ওপর নির্ভর করে। অনেক সময় হয়তো সাহসিকতা কাজে নাও লাগতে পারে। আবার পরিস্থিতি বুঝে অধিনায়কত্ব করার ব্যাপারও আছে।’

গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন আকস্মিকভাবে। কিন্তু এবার তো আগ থেকেই মাহমুদউল্লাহ আঁচ করতে পেরেছেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের নেতৃত্ব তাঁর কাঁধেই আসবে। আগেই বুঝতে পারছিলেন বলেন নিশ্চয়ই ভাবারও সময় পেয়েছেন। সময় পেয়েছেন বলেই নয়, মাহমুদউল্লাহর কাছে অধিনায়কত্ব সব সময়ই অন্যভাবে অনুপ্রাণিত করে, ‘এটা ঠিক যে অধিনায়কত্ব আমার খেলায় বাড়তি চ্যালেঞ্জ এনে দেয়। আমাকে প্রভাবিত করে। বাড়তি একটা দায়িত্ব এনে দেয় যে যেন নিজের সেরাটা দিতে পারি। অধিনায়কত্ব করি বা না করি, আগে খেলোয়াড় হিসেবে চিন্তা করতে হবে। এ দায়িত্বটা আসলে উপভোগ করি এবং চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে পছন্দ করি। আমার মনে হয় এটা আমাকে খেলায় সাহায্য করে।’

সবুজ সিলেটে রাঙা স্বপ্ন
অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহর অভিজ্ঞতা অম্ল-মধুর। ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে জয় সমতুল্য ড্রয়ের পর ঢাকা টেস্টে হার। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ড্র নয়, পরাজয় তো নয়ই। দেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে সিলেটের যাত্রা মাহমুদউল্লাহ স্মরণীয় করতে চান শুধুই জয় দিয়ে।