অবৈধ অর্থে এসেছে পিএসজি-সিটির সাফল্য?

সিটির এসব সাফল্যের পেছনে রয়েছে এক কালো অধ্যায়! ফাইল ছবি
সিটির এসব সাফল্যের পেছনে রয়েছে এক কালো অধ্যায়! ফাইল ছবি
>

‘ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’ কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আর উয়েফার চোখ ফাঁকি দিয়েই নিজেদের ক্লাবে টাকা ঢেলে যাচ্ছে পিএসজি ও ম্যানচেস্টার সিটি। ফুটবল লিকসের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্যই বেরিয়ে এসেছে। জানা গেছে, এ কাজে পিএসজি আর সিটির আরব মালিকদের সহায়তা করেছেন বর্তমানে ফিফার সভাপতি, এক সময়ের উয়েফা প্রধান জিয়ান্নি ইনফান্তিনো!

রোমান আব্রামোভিচ যখন চেলসি কিনে নিলেন, তখন থেকেই শুরু হয়েছিল সংস্কৃতিটা। এখন ফুটবল ক্লাব কেনা তো ধনকুবেরদের রীতিমতো ‘ফ্যাশনে’ পরিণত হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে আরব ধনকুবেররাও এসেছে এই লাইনে। কাতারি ও সৌদি শেখদের দখলে চলে যায় পিএসজি আর ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাব। ব্যাপারটায় চিন্তিত হয়ে পড়েছিল ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফাও।
ফুটবলে টাকার কুমিরদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সে সময় উয়েফা সভাপতি মিশেল প্লাতিনি চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তিনি চালু করেছিলেন ‘ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’ নামের আইন। যে আইন নিশ্চিত করে একটা ফুটবল ক্লাব শুধুমাত্র তাঁর আয় করা অর্থ থেকেই ব্যয় করতে পারবে, মালিকের সম্পত্তি থেকে বাধাহীনভাবে খরচ করতে পারবে না।
তবে, বড় ক্লাবগুলো যে নিয়মিতই এই আইনের ফাঁক গলে বেপরোয়া ভাবে খরচ করে যাচ্ছে, এটা মোটামুটি কমবেশি সবাই অনুমান করত। অবশেষে এই সত্যটাই আবার নতুন করে সবার সামনে প্রমাণসহ হাজির করেছে ফুটবল লিকস, ফুটবলের বিভিন্ন গোমড় ফাঁস করে দিতে সিদ্ধহস্ত যারা।
ফুটবল লিকস তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বহু বছর ধরেই ম্যানচেস্টার সিটি আর পিএসজি তাদের মালিক ও পৃষ্ঠপোষকদের টাকা যেমন খুশি ব্যয় করে। ম্যানচেস্টার সিটির মালিক খালদুন আল মোবারক আর শেখ মনসুর আল নাহিয়ান গত সাত বছর ধরে ক্লাবে অবৈধভাবে ২.৭ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছেন। ওদিকে পিএসজির মালিক নাসের আল খেলাইফি নিজের ক্লাবে বিনিয়োগ করেছেন ১.৮ বিলিয়ন ইউরো। এই অর্থের সিংহভাগই অবৈধভাবে অর্জিত পৃষ্ঠপোষকদের চুক্তি ও নিজেদের সম্পত্তি থেকে এসেছে। ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ম্যানচেস্টার সিটি একাই লোকসান করেছে ২৩৩ মিলিয়ন ইউরোর মতো। যা উয়েফার ‘ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’র সম্পূর্ণ বিরোধী। নিয়ম অনুযায়ী পিএসজি ও সিটির বড় শাস্তি হওয়ার কথা, বিরাট অঙ্কের অর্থ জরিমানা হওয়ার কথায়। কেবল তা-ই নয়, তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকেও নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। কিন্তু এই শাস্তি যেন তারা না পায় সে জন্য সিটি ও পিএসজিকে সহায়তা করে গেছেন খোদ উয়েফা-প্রধান জিয়ান্নি ইনফান্তিনো! তিনি এখন ফিফার প্রধান। এ যেন সর্ষের ভেতরেই ভূত!
উয়েফার আইনজীবীদের কাছে পিএসজি ও সিটি যেন ধরা না পড়ে, এ জন্য নিয়মিত এই দুই ক্লাবের মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন ইনফান্তিনো, আইনজীবীদের কাছ থেকে বাঁচার উপায় বাতলে দিতেন। পরে মাত্র ৩০ মিলিয়ন পাউন্ডে রফা হয় ম্যানচেস্টার সিটির শাস্তির পরিমাণ। পিএসজিও মোটামুটি একই অঙ্কের জরিমানা দিয়ে বেঁচে যায়।
ফরাসি ঘরোয়া ফুটবলে এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে গত কয়েক বছরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে পিএসজি। এ সময়ে তারা দলে নিয়ে এসেছে নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পে, এডিনসন কাভানি, মার্কো ভেরাত্তি, থিয়াগো সিলভা, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, জুলিয়ান ড্রাক্সলার, মার্কুইনহোসের মতো অনেক বৈশ্বিক তারকাকে। একই কথা খাটে ম্যানচেস্টার সিটির বেলাতেও। গত দশ বছরে দলটায় এসে খেলে গেছেন সার্জিও আগুয়েরো, ইয়ায়া তোরে, ডেভিড সিলভা, রবিনহো, কার্লোস তেভেজ, রাহিম স্টার্লিং, নিকোলাস ওটামেন্ডি, ইকায় গুন্দোগানের মত বিশ্ব ফুটবলের তারকারা। এই সময়ে এই দুই ক্লাব জিতেছে অনেক শিরোপা। ফুটবল লিকসের এই প্রতিবেদনে দুই ক্লাবের অর্জনে একটু কালির দাগ পড়ল, এটা নিশ্চিত!