বল করতে জানলে পেসাররাও উইকেট পান!

জিম্বাবুয়ের পেসারদের সামলাতেই পারছেন না ব্যাটসম্যানরা। ছবি: শামসুল হক
জিম্বাবুয়ের পেসারদের সামলাতেই পারছেন না ব্যাটসম্যানরা। ছবি: শামসুল হক

কথাটা সম্ভবত বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের ভালো লাগবে না। কিন্তু সত্য তো চেপে রাখা যায় না। চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দেবেই। বাংলাদেশের এক ক্রিকেটভক্তও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ভুলটা কোথায় হচ্ছে। ক্রিকইনফোর ধারাভাষ্য পেজে তাঁর মন্তব্য, ‘আন্তর্জাতিক কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটে পেসার কম ব্যবহারের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।’ এই কথা ক্রিকেটমহলের আলোচনায় বহু ব্যবহার হয়ে এখন ক্লিশে হওয়ার পথে। কিন্তু কথাটা না শোনায় মারটা আগের মতোই খেতে হচ্ছে!

সিলেটে যা চলছে, তাতে এ কথা বলাই যায়। খাল কেটে ‘কুমির’এনে মার খাওয়া নয় তো কী!

কাগজে-কলমে দুই দলের শক্তিমত্তায় বিস্তর ফারাক দেখেছে সবাই। জিম্বাবুয়েকে গোনায় না ধরে লক্ষ্য ছিল তাঁদের নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে সহজ জয় তুলে নেওয়া। আর সে জন্য দেশের মাটিতে সবচেয়ে কার্যকরী টোটকাই ব্যবহার করা হয়েছে। স্পিন উইকেট আর দল ভর্তি স্পিনার—যেখানে বিশেষজ্ঞ স্পিনারই তিনজন। সঙ্গে এক পেসার। ভাবনাটা সহজ, স্পিন উইকেটে পেসার আর কী করবে!

বাইশ গজের জমিন যেমনই হোক, একজন পেসার কী করতে পারে তা কিন্তু আজ বাংলাদেশের টপ অর্ডার বুঝিয়ে ছেড়েছে। প্রথম ছয় উইকেটের মধ্যে পাঁচজনই জিম্বাবুয়ে পেসারদের শিকার। আউটগুলোর ধরন দেখলে সেই ভক্তের ‘কম পেসার ব্যবহার করা’ নিয়ে খেদটা মনে ঘাই মারবেই। কাঁধ সমান উচ্চতায় উঠে আসা পেস বল কিংবা শরীরের একটু বাইরে কল্পিত ‘ফোর্থ স্ট্যাম্প’ বরাবর সুইং খেলতে অভ্যস্ত নন আমাদের ব্যাটসম্যানরা। ইমরুল কায়েসের আউটটা দেখুন—চাতারার ডেলিভারি ব্যাক অব দ্য লেংথ থেকে হুট করে উঠে এসেছিল। ইমরুল ছাড়েননি কিংবা সাবধানেও খেলার চেষ্টা করেননি। পরিণতিতে প্লেড-অন।

লিটন দাস ‘ফোর্থ স্ট্যাম্প’ বরাবর ডেলিভারি খেলতে গিয়ে ফিরেছেন। ধারাভাষ্যকারের কথায়, ‘লুজ শট’। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচার প্রবণতা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য নতুন না। লিটনের মতো নাজমুল হোসেন শান্তও সেই একই লোভ সামলাতে না পারার শিকার। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অবশ্য এসব লোভ সামলানোর সুযোগ পাননি। চাতারার সিম মুভমেন্ট বুঝতে না পেরে ফিরেছেন দ্বিতীয় বলেই। এসব আউট দেখলে একটি প্রশ্ন উঠে আসবেই—বাংলাদেশের টপ অর্ডার কী পেস বোলিংয়ে ব্যাটিং অনুশীলন করে না?

অবশ্যই করে। তা না করলে চলে? ঘরোয়া ক্রিকেটে কিংবা নেট অনুশীলনে তো হচ্ছেই। কিন্তু ঝামেলা হলো, উইকেট তো স্পিনবান্ধব। তাই বল ওঠে কম আর সিম মুভমেন্ট ‘ভিন গ্রহে’র কোনো শব্দ বলেই মনে হবে। আমাদের স্পিনবান্ধব উইকেটেও তাই বাইরের পেসারদের এসব হাত যশের জবাব দেওয়া যাচ্ছে না। আর তাই, ঘরের মাঠে স্পিনবান্ধব বাইশ গজে আমরা উইকেট দিচ্ছি পেসারদের। ব্যাপারটা তাই এখন খাল কেটে কুমির আনার মতোই।

সেটিও কেমন ‘কুমির’—টেস্টে আমাদেরও নিচের সারির দল জিম্বাবুয়ে সিলেট এ বছরের প্রথম টেস্ট খেলছে। এমন দলের বিপক্ষেও আমরা নিজেদের পেসারদের বাজিয়ে দেখার সাহসটুকু দেখাইনি। হেঁটেছি সেই অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে ঘরে ডেকে এনে যে রেসিপি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই পথেই—বানাও স্পিনবান্ধব উইকেট, খেলাও শুধু স্পিনার, এক পেসার—সেটি তো লোক দেখানো। কথাটা বলতেই হচ্ছে কারণ, দলে একজন মিডিয়াম পেসারও ছিলেন—আরিফুল হক। কাল বোলিং করেছেন মাত্র ৪ ওভার।

বল করতে জানলে পেসাররাও যে উইকেট পান সেটা তো জিম্বাবুয়ে দলই দেখিয়ে দিয়েছে। ঘূর্ণি উইকেটে পেসাররা কম প্রাধান্য পাবে, সেটি ক্রিকেটেরই কথা। কিন্তু নিজেদের ঘূর্ণি উইকেটে প্রতিপক্ষ দলের পেসাররা টপাটপ উইকেট তুলে নিচ্ছে, সে কেমন কথা!