ইটস নট ওয়ান ব্যাড ডে অ্যাট অফিস

এমন দিন বারবারই আসছে টেস্ট ক্রিকেটে । ছবি: শামসুল হক
এমন দিন বারবারই আসছে টেস্ট ক্রিকেটে । ছবি: শামসুল হক
>টেস্টে ব্যাটিং বিপর্যয় হচ্ছে বারবারই। রীতমতো যাচ্ছেতাই ব্যাটিং। কিন্তু এটিকে নিছক ‘বাজে একটা দিন’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন বাজে দিন যে বারবারই আসছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।

খেলাধুলার অভিধানে কিছু সুন্দর বাক্য আছে, প্রবচনের মতো। কোনো ম্যাচ খারাপ গেলে যেমন বলে, ওয়ান ব্যাড ডে অ্যাট অফিস। একটা দিন খারাপ যেতেই পারে। তার মানে তো এমন নয়, পুরো দলটাই খারাপ! বাংলাদেশ দল এমনটাই ভাবতে চাইছে।

না, এই দলটাকে খারাপ কী করে বলবেন। কদিন আগেই জিম্বাবুয়েকে এই দলটা ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করল। এর আগে দুর্দান্ত খেলে এশিয়া কাপ ওয়ানডের ফাইনালে উঠেছে। তারও কদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদেরই মাটিতে ওয়ানডেতে একটুর জন্য ধবলধোলাই করতে পারেনি...। আফসোস, এর সবই ওয়ানডেতে। কিন্তু টেস্টে?

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে প্রশ্নটা নতুন নয়। সেই প্রশ্ন সামর্থ্যের ইরেজার দিয়ে মুছতে না মুছতেই আবার হাজির হয়। বাংলাদেশ দলই তা করে। টেস্টে একটা দল ১৫০ রান করতে পারবে না, ৫০ ওভার ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য নেই; মানবেন কী করে!

দিনের সেরা পারফরমার হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এলেন তাইজুল ইসলাম। তিনিও সেই ওয়ান ব্যাড ডের তত্ত্বই বলে গেলেন, 'আমাদের ব্যাটসম্যানরা যে এর আগে ভালো করেনি, এমন তো নয়। হয়তো হঠাৎ করেই এমনটা হচ্ছে। ক্রিকেটে এমন দিন আসে। আমরা চেষ্টা করব সামনে ভালো করার।'

তাইজুল উদাহরণ হিসেবে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর কথাও বললেন। কিন্তু এরপর?

অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর এই সিরিজের আগে বাংলাদেশ টেস্টে যে ১২ ইনিংসে ব্যাট করেছে, এর ৯ বারই ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি। আজ করেছে ৫১ ওভার ব্যাটিং। তবু ১৫০ পেরোতে পারেনি দল। এ নিয়ে টেস্টে টানা সাত ইনিংসের ছয়টিতে বাংলাদেশ ১৫০ করতে পারল না। টানা ১২ ইনিংসে ২০০ পেরিয়েছে মাত্র দুবার!

সমস্যা কোথায়? এর জন্য বিশাল গবেষণার দরকার হয় না। সমস্যা শট নির্বাচনে। সমস্যা ওয়ানডে থেকে টেস্টের সংস্করণে আসার মানসিকতায় খাপ খাইয়ে নেওয়ায়। ৫১ ওভারে বাংলাদেশ আজ ২২০টি বলে রান নেয়নি। মাত্র ১৬টি চার। এখান থেকে মনে হতে পারে, বাংলাদেশ সতর্ক হয়েই খেলেছে। কিন্তু সতর্কতার ফল কাজে আসেনি। যখন যে শটটা খেলা উচিত হয়নি, সেটাই খেলেছে বাংলাদেশ।

আর এই সমস্যা শুধু আজকের নয়। সবচেয়ে বড় কথা, একের পর এক ইনিংসে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে বলে টেস্টের মেজাজ নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। প্রশ্ন তোলা যায়, ওয়ানডের সাফল্যও একটা নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে কি না অতি আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে। নাকি টেস্টের এই ধারাবাহিক ব্যাটিং ব্যর্থতা আত্মবিশ্বাস শব্দটাকেই তলানিতে নিয়ে গেছে?

তাইজুল দুই তত্ত্বই মানতে চাইলেন না, 'ব্যাটসম্যান-বোলারদের কথা যদি বলেন, এখানে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টের ব্যর্থতার আগেও আমরা বড় বড় দলকে হারিয়েছি। আর দুই–একটা সিরিজ এমন হতেই পারে। আর ম্যাচ যে শেষ হয়ে গেছে, তা–ও কিন্তু না। এখনো আরও অনেক সময় আছে এই ম্যাচে। অতি আত্মবিশ্বাসের মতো কিছু ছিল না। ক্রিকেটে এমন হয়, কিছুদিন আসে যে দিনটা আমাদের পক্ষে যাবে না।'

কিন্তু এমন দিন যে বারবার আসছে। এটাকে কী করে ওয়ান ব্যাড ডে অ্যাট অফিস বলে সান্ত্বনা খোঁজা যায়!