মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং গড় যখন ৭.২৫!

অধিনায়কের নিজের ব্যাটিং ফর্ম ভাবাচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
অধিনায়কের নিজের ব্যাটিং ফর্ম ভাবাচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
>মাহমুদউল্লাহ সর্বশেষ ৮ ইনিংসের কোনোটাইতেই ২০ রানও পেরোতে পারেননি। সর্বোচ্চ ১৭। ৮ ইনিংস মিলিয়ে করেছেন ৫৮ রান! এর মধ্যে তিন ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছেন। এই ৮ ইনিংসে তাঁর ব্যাটিং গড় ৭.২৫!

টেস্ট অধিনায়কত্ব পেয়ে মাহমুদউল্লাহ কি আবার জ্বলে উঠবেন? এই প্রত্যাশার পেছনে আশা জোগাচ্ছিল মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচটা। এ বছর শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নেতৃত্বভার ছিল তাঁর কাঁধে। দুই ইনিংসেই অপরাজিত মাহমুদউল্লাহ দলের প্রথম ইনিংসে খেলেছিলেন ৮৩ রানের ইনিংস।

সেই চট্টগ্রাম টেস্টের পর ৮ ইনিংসের কোনোটাইতেই ২০ রানও পেরোতে পারেননি। সর্বোচ্চ ১৭। ৮ ইনিংস মিলিয়ে করেছেন ৫৮ রান! এর মধ্যে তিন ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছেন। এই ৮ ইনিংসে তাঁর ব্যাটিং গড় ৭.২৫!

৪০ টেস্টের ক্যারিয়ারে মাত্র একটাই সেঞ্চুরি। মাহমুদউল্লাহ আসলেই টেস্টের জন্য কি না, এ নিয়েও প্রশ্ন আছে অনেকের। ক্যারিয়ারের শুরুতে মূলত আটে ব্যাটিং করলেও এখন নিয়মিত চার-পাঁচে ব্যাটিং করেন। এই ব্যাটিং পজিশনের একজনের ক্যারিয়ার গড় ত্রিশের নিচে হলে তাঁর সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। সর্বশেষ ২৭ ইনিংসেই ফিফটি মাত্র তিনটি। এই সময়ে ব্যাটিং গড় অবশ্য খুব বেশি হেরফের হয়নি। ক্যারিয়ার গড় ২৯.১৬, গত ২৭ ইনিংসে সেটি ২৫.১৬। অর্থাৎ এই বাস্তবতা মানতে হবে, এটাই মাহমুদউল্লাহর টেস্ট-সামর্থ্য।

২০১৬-র জানুয়ারি থেকে এই তিন বছরে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেনই মাত্র দুটি ম্যাচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততা, ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ, বিশ্রাম...এর ফাঁকে মাহমুদউল্লাহ নিজে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে পারেননি নাকি চাননি, তাও অজানা। বাংলাদেশের শীর্ষ তারকাদের অবশ্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ততটা খেলা হয় না, এখানে শুধু মাহমুদউল্লাহকে চিহ্নিত করা অন্যায়। তাহলে চার-পাঁচে ব্যাটিং করেন এমন একজন ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে ত্রিশ গড়ের চেয়ে বেশি প্রত্যাশা করার উপায়টা কী?

বাংলাদেশে টেস্টে খারাপ করছে নিয়মিতভাবেই। এ নিয়ে টানা ৮ ইনিংসে বাংলাদেশ দশ ২০০ রানের স্কোর করতে পারল না। তবে কি টেস্ট ক্রিকেটটাই যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না বাংলাদেশ? এমন প্রশ্নও উঠল আজ সংবাদ সম্মেলনে। এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ভাবনায় আগামী বিশ্বকাপ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কি না, জানতে চাওয়া হলো। মাহমুদউল্লাহ বললেন, ‘উই ডু কেয়ার অ্যাবাউট টেস্ট ক্রিকেট। আমরা হয়তো পাঁচ-ছয়টা (আট ইনিংস) ইনিংসে রান করতে পারিনি। তবে বোলাররা যথেষ্ট ভালো বোলিং করেছে। প্রতিপক্ষকে অল্প রানে আটকে ফেলছে। ব্যাটসম্যানরা ভালো করছে না। ওয়ানডে ফরম্যাটে ভালো ছন্দে আছে। কিন্তু ওই খেলাটা হয়তো আমরা টেস্ট ক্রিকেটে নিতে পারছি না। অবশ্যই এটা চিন্তার বিষয়। আমাদের এটা খুব ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে।’

নিজের সমস্যাটাও মাহমুদউল্লাহ ভালো করেই জানেন, ‘আমরা অনেকগুলো বলে খুব বাজেভাবে আউট হয়েছি, খুব বাজে বলে আউট হয়েছি। আউটগুলো দৃষ্টিকটু। টেস্ট ক্রিকেটে এভাবে আউট হওয়া ঠিক নয়। এখানে শৃঙ্খলা, মনোযোগ ধরে রাখার ব্যাপার আছে। আমাদের প্রতিটা খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে, তারা কী চিন্তা করছিল ভাবতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে যদি বলি, আমি আজ বেশ ইতিবাচক ছিলাম। ভেবেছিলাম আমি হয়তোবা ভালো খেলে বড় জুটি গড়লে তাদের লক্ষ্যের কাছাকাছি যেতে পারব, আমরা ওই বড় জুটিই করতে পারিনি। আপনি বড় জুটি না গড়তে পারলে ম্যাচ জিতবেন না।’

ম্যাচ জেতা তো পরে, আগে সম্মান বাঁচানোই বড়। ওয়ানডেতে দুর্দান্ত খেলা তো মানুষ ভুলে যাচ্ছে টেস্টের এমন হতশ্রী দশা দেখে। মাহমুদউল্লাহ নিজেই নিজেদের এই কড়া বার্তা দিলেন, ‘এভাবে ব্যাট করতে থাকলে মনে হয় না আমরা টেস্ট ক্রিকেটে কোনো অবস্থানে থাকব। এটা আমাদের ভাবমূর্তির বিষয়। আমাদের অবশ্যই শক্তভাবে ফিরে আসতে হবে। না হলে, এভাবে টেস্ট খেলার কোনো মানে হয় না।’

শেষ বাক্যটা হয়তো ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহর জন্যও প্রযোজ্য!