১৭ বছর পর জিম্বাবুয়েকে এই স্বাদ দিল বাংলাদেশ

এই উচ্ছ্বাসই বলে দেয় জিম্বাবুয়ের জন্য এই জয় কত বড় কিছু! ছবি: শামসুল হক
এই উচ্ছ্বাসই বলে দেয় জিম্বাবুয়ের জন্য এই জয় কত বড় কিছু! ছবি: শামসুল হক
>তিন ধরনের ক্রিকেটে টানা ১৯ ম্যাচ হারার পর অবশেষে এল জয়! নিজেদের ওপর থেকেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছিল জিম্বাবুয়ে। এ বছর সর্বশেষ ১৩ ওয়াডেতে তারা জেতেনি, আর টেস্টে তো জেতেনি গত ৫ বছর ধরেই। অবশেষে...

ব্রেন্ডন মাভুতার বয়স তখন মাত্র মাত্র ৪ বছর। জিম্বাবুয়ে দলের হয়ে আসা এই স্পিনারের মনে থাকার প্রশ্নই আসে না। এই দলের বেশির ভাগই তখন কিশোর। তবে সেই টেস্টটা বেশ ভালো মনে থাকার কথা মাশরাফি বিন মুর্তজার। আগের টেস্টে অভিষিক্ত মাশরাফি চট্টগ্রামে দুই ওভারের একটা ঝড় তুলেছিলেন। দুই ওভার তুলে নিয়েছিলেন দুই উইকেট। এর বেশি আর বল করার সৌভাগ্য হয়নি। ফলোঅন করেও প্রতিপক্ষকে ১১ রানের লক্ষ্য দিতে পারাটাই তখন বাংলাদেশের জন্য ছিল বিরাট সাফল্য। আর মাশরাফির ওই ঝড়ের পরও তিন ওভারে ম্যাচ জিতে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে।

২০০১ সালে চট্টগ্রাম টেস্টের ১৭ বছর পর এবার সিলেটে এসে টেস্ট জিতল জিম্বাবুয়ে। মাঝখানে বিদেশে জেতা হয়নি আর কোনো টেস্ট। জিম্বাবুয়ে বিদেশের মাটিতে জিতেছেই আসলে তিনটি টেস্ট। দুটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে, তা তো না বলে দিলেও চলছে। তবে টেস্ট ক্রিকেটে আবির্ভাবেই বিশ্বকে চমকে দেওয়া জিম্বাবুয়ের প্রথম বিদেশ জয়টার কথা আলাদা করে বলা যায়। ১৯৯৮ সালে পেশোয়ারে পাকিস্তানকে ৭ উইকেট হারিয়েছিল তখনকার সোনালি প্রজন্মের খেলোয়াড়দের জিম্বাবুয়ে।

সেই সুদিন হারিয়ে জিম্বাবুয়ের কক্ষচ্যুতির গল্প নতুন করে না বলাই ভালো। টানা ৫ বছর কোনো টেস্টেই তারা জেতেনি, নিজেদের মাটিতেও না। ওয়ানডেতেও সুখবর নেই। তিন ধরনের ক্রিকেটে টানা ১৯ ম্যাচ হারার পর অবশেষে এল জয়! সেটাও বিদেশের মাটিতে টেস্টে! জিম্বাবুয়ের উচ্ছ্বাস ধরা পড়ছিল বাংলাদেশের প্রতিটা উইকেট পতনের উদ্‌যাপনে। এ যেন বুক থেকে পাথর নেমে যাওয়া!

জিম্বাবুয়ের প্রতিনিধি হিসেবে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এলেন লালচাঁদ রাজপুত। সাবেক এই ভারতীয় ক্রিকেটারের জন্য আজকের দিনটা এমনিতেই ছিল উৎসবের। ভারতজুড়ে চলছে দীপাবলি উৎসব। রাজপুত খুশি, দলের কাছ থেকে এত বড় একটা উপহার পাওয়ায়, ‘সবাই জানেন ভারতে দীপাবলি কত বড় একটা উৎসব। আমিও ছেলেদের বলেছিলাম যেহেতু আজ দীপাবলি, আমার জন্য সেরা উপহার হতে পারে এই টেস্টে জয়। তারা দারুণভাবে তা করে দেখাল। বছরের পর বছর ধরে জিম্বাবুয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করছিল না। তাদের নিজেদেরও সমস্যা ছিল। কিন্তু একবার জিতে গেলেই সব সমস্যা একপাশে সরিয়ে রাখা যায়। এই জয়টা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে ড্রেসিংরুমের আবহই বদলে যায়। আমি নিশ্চিত খেলোয়াড়দের, দলের আত্মবিশ্বাসও এখন তুঙ্গে থাকবে। আমরা এখন এখান থেকে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’

বার্তা পরিষ্কার, সিরিজ হারার যেহেতু আর শঙ্কা নেই, জিম্বাবুয়ে এখন সিরিজ জিততেই চায়! রাজপুত নিজে এখান থেকে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের পুনর্জাগরণ দেখছেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতাটাও অনেক বড় ব্যাপার। এখানে অনেক বড় বড় টেস্ট খেলুড়ে দেশকেও ভুগতে হয়েছে। বাংলাদেশকে হারাতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে। আমাদের জন্য এটা অনেক বড় জয়। মানসিকভাবে তো অবশ্যই। এটা অবশ্যই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটকে জাগিয়ে তুলবে। আমাদের মনে এই ভয় ঢুকে গিয়েছিল, দেশেই যেখানে জিততে পারি না, বিদেশের মাটিতে কী করে জিতব। এটা ছিল আমাদের প্রথম পদক্ষেপ সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার, এখান থেকেই ছুটতে হবে।’
কোনো সন্দেহ নেই, ১১ নভেম্বর মিরপুর টেস্ট শুরু হতে যাচ্ছে, রাজপুতেরই ভাষায়, ইন্টারেস্টিং!