জিম্বাবুয়ে আশায় ছিল, বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা শট খেলবে

জিম্বাবুয়ে কোচ লালচাঁদ রাজপুত।
জিম্বাবুয়ে কোচ লালচাঁদ রাজপুত।
>সিলেট টেস্টে বাংলাদেশকে ১৫১ রানে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। জয়ের পর জিম্বাবুয়ে কোচ লালচাঁদ রাজপুত জানালেন, টেস্ট খেলার মানসিকতাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে দুই দলের। তাঁরা নাকি জানতেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা শট খেলবেনই।

দিনক্ষণের হিসাব আগেই কষে রেখেছিলেন জিম্বাবুয়ের কোচ লালচাঁদ রাজপুত। সিলেট টেস্টে চতুর্থ দিনে ভারতে উদ্‌যাপন করা হবে দীপাবলি উৎসব। এদিন শিষ্যরা তাঁকে জয় উপহার দিতে পারলে বিদেশ-বিভুঁইয়ের জীবনে সেটাই হবে তাঁর জন্য সেরা উপহার। সিকান্দার রাজা-ব্রায়ান মাভুতাদের কানে এই মন্ত্রটা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের এই সাবেক ক্রিকেটার। ফলটা তিনি পেয়েছেন হাতেনাতে। বাংলাদেশকে তাদেরই ঘরের মাঠে টেস্টে ১৫১ রানের ব্যবধানে হারিয়েছেন তাঁর শিষ্যরা। জিম্বাবুয়ে কোচের জন্য এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে!

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্রিকেটবিশ্বে প্রচলিত বিশ্বাস, বাংলাদেশকে তাঁদের ঘরের মাঠে হারানো খুব কঠিন। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো দলও খাবি খেয়েছে এই কন্ডিশনে। সেখানে জিম্বাবুয়ের মতো টেস্টে একেবারে তলানির দল নিয়ে দাপুটে জয়—চতুর্থ দিনেই ম্যাচের নিষ্পত্তি হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে তাই প্রশ্ন উঠেছিল, দুই দলের পার্থক্যটা আসলে কোথায়? জবাবে লালচাঁদ মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের সেই পুরোনো রোগটার কথা, মানসিকভাবেই পিছিয়ে ছিল স্বাগতিকেরা।

প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ২৮২ রানের জবাবে ১৪৩ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। টপঅর্ডার রান পায়নি, আউটগুলোও ছিল দৃষ্টিকটু। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ে ৩২১ রানের টার্গেট ছুড়ে দেওয়ার পরও পাল্টায়নি এই চিত্র। টপঅর্ডার এ দফায়ও ব্যর্থ। হাতে দুই দিন রেখে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ খেলেছে মাত্র ৬৩.১ ওভার। অর্থাৎ টেস্ট খেলার জন্য যে মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি আর ধৈর্য লাগে, সেখানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে জিম্বাবুয়ে কোচ ঠিক এ ব্যাপারটাই তুলে ধরলেন, ‘মানসিকতা পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। প্রথম দুই দিনে আমরা যেভাবে ব্যাট করেছি, তাতে খেলোয়াড়দের কঠিন মানসিকতা দারুণভাবে বোঝা গেছে। প্রথম দিন থেকেই উইকেটে বাঁক ছিল। খেলোয়াড়েরা ভেবেছিল, টেস্ট চতুর্থ কিংবা পঞ্চম দিনে গড়াবে তো! আমি বলেছি, শান্ত থেকে নিজেদের ডিফেন্সের প্রতি আস্থা রাখ। টেম্পারামেন্ট আর চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখানোর দরকার ছিল। আমাদের খেলোয়াড়েরা সেটি দারুণভাবেই দেখিয়েছে।’

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটভক্তদের কাছে এখনো আক্ষেপের নাম। কুড়ি বছর আগেও তাঁদের কী দলটাই না ছিল! সেই পথে ফিরতে এই জয় দারুণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করেন লালচাঁদ রাজপুত, ‘জয়টা আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এতে খেলোয়াড়দের মানসিকতা পাল্টে যায়। আমি নিশ্চিত, জিম্বাবুয়েতে সবাই এই জয় নিয়ে গর্বিত। আমরা বিশ্বাস করি শুধু ঘরে না, বিদেশের মাটিতেও জিততে পারি। সেই পথে এটা আমাদের প্রথম পদক্ষেপ।’

কোনো ইনিংসেই ন্যূনতম ২০০ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে দলটির এমন ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষ দলের কোচের কিছুটা চমকে যাওয়ার কথা। লালচাঁদ কিন্তু মোটেও চমকাননি। কারণ বাংলাদেশের দলের ব্যাটিংয়ের বৈশিষ্ট্যটা তাঁর জানা। জিম্বাবুয়ে কোচ জানতেন, চতুর্থ দিনে ৩২০ রান তাড়া করা মোটেও সহজ কাজ না, বিশেষ করে এমন উইকেটে। আর প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের এই উইকেটে তাঁদের মতো বেশিক্ষণ টিকে থাকার ধৈর্য থাকবে না। শট তাঁরা খেলবেনই। আর তাতে সুযোগের দ্বারও খুলবে। এই ছিল জিম্বাবুয়ের কৌশল।

সংবাদ সম্মেলনে লালচাঁদ সেই কৌশল জানিয়ে দিলেন, ‘চতুর্থ দিনের উইকেটে ৩২০ রান তাড়া করা মোটেও সহজ না। খুব বেশি দল তা করতে পারেনি। আমরা আশায় ছিলাম, ওরা শট খেলবে। আমাদের মতো টিকে থাকতে চাইবে না। তবে শট খেলার জন্য উইকেট ছিল ভীষণ কঠিন। আর শট খেললে সুযোগ আসবেই। আমরা এই সুযোগগুলোই নিয়েছি।’