রিয়ালের সেই 'তারকার হাট' এখন...

খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে মোট পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ রিয়াল মাদ্রিদকে উপহার দিয়েছেন জিদান। ছবি: টুইটার
খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে মোট পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ রিয়াল মাদ্রিদকে উপহার দিয়েছেন জিদান। ছবি: টুইটার
>বিশ্ব ফুটবলে অন্যতম চিত্তাকর্ষক একটি দল ছিল ‘গ্যালাকটিকোস’। রিয়াল মাদ্রিদের গড়ে তোলা সেই গ্যালাকটিকোস থেকে ইকার ক্যাসিয়াস আর সার্জিও রামোস বাদে কাউকেই ফুটবল মাঠে দেখা যায় না। অনেকেই অবশ্য ডাগ-আউটে রাজত্ব করছেন। তাদের নিয়েই আজকের লেখা।

এই শতাব্দীর শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি পদে দাঁড়ালেন একজন। নির্বাচিত হওয়ার আগেই বড় বড় কথা, জিততে পারলে লুই ফিগোকে নিয়ে আসব। সেরা সব খেলোয়াড়ের আড্ডাখানা হবে রিয়াল মাদ্রিদ। নির্বাচিত হওয়ার পর দেখা গেল তাঁকে—ফ্লোরেন্তিনো এদুয়ার্দো পেরেজ রদ্রিগেজ, রিয়াল মাদ্রিদের এই সভাপতি গড়ে তুললেন তারকার হাট। যে দলে প্রতিবছরই একজন করে নতুন তারকার আগমন ঘটে। ফিগোর পর জিদান, রোনালদো, বেকহাম, ওয়েন। নতুন এই দলের নাম ‘গ্যালাকটিকোস’। সেই গ্যালাকটিকোস আর এখন নেই। তাঁদের অনেকেই দাঁড়িয়ে ডাগ–আউটে। জিদান তো রিয়াল মাদ্রিদের টাচলাইনে দাঁড়িয়েও ইউরোপজয় করেছেন! ভিসেন্তে দেল বস্কের পথ মাড়িয়ে কারা কারা কোচিংয়ের পথে এগিয়েছেন, তাঁদের নিয়েই আজকের এই লেখা:

জিনেদিন জিদান:
চেনা জানা দিয়েই শুরু করি। সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সেরা সই ছিলেন জিনেদিন জিদান। তাঁকে নিয়ে এসে নবম চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়েছেন ভলি করে। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে যে জায়গা থেকে বিদায় নিয়েছেন, ঠিক সেখান থেকেই শুরু করেছেন জিদান। ২০০৬ সালে এই রিয়াল মাদ্রিদ থেকে অবসর নেওয়া জিদান ডাগ-আউটে ফিরেছিলেন কার্লো আনচেলত্তির সঙ্গে। সেখান থেকে কাস্তিয়ার কোচ, সবশেষে রিয়াল মাদ্রিদ মূল দলের কোচ। আড়াই মৌসুমে ৩ চ্যাম্পিয়নস লিগ, ২ ক্লাব বিশ্বকাপ, ১ লিগ নিয়ে ৮ টি শিরোপা। সর্বজয়ী হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদে নিজের কোচিং ক্যারিয়ার শেষ করেছেন জিদান।

কার্লো আনচেলত্তির সঙ্গে ফার্নান্দো হিয়েরো। ছবি: টুইটার
কার্লো আনচেলত্তির সঙ্গে ফার্নান্দো হিয়েরো। ছবি: টুইটার

ফার্নান্দো হিয়েরো:
রিয়াল মাদ্রিদের তৈরি গ্যালাক্টিকোসের অধিনায়ক ছিলেন ফার্নান্দো হিয়েরো। ২০০২ সাল পর্যন্ত খেলা হিয়েরো রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়েন ভিসেন্তে দেল বস্কের সঙ্গেই। রিয়াল মাদ্রিদের সহকারী কোচ হিসেবে প্রথম কার্লো আনচেলত্তির সঙ্গে ডাগ-আউটে বসার অভিজ্ঞতা হয় ২০১৪-১৫ মৌসুমে। কিন্তু সে মৌসুমে কোনো শিরোপা না জেতায় আনচেলত্তির সঙ্গে সঙ্গে হিয়েরোরও ভাগ্য পুড়েছিল। ২০১৬-১৭ সেগুন্দা ডিভিশন এ-র দল রিয়াল ওভেইদোর কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। সে মৌসুমে দলকে নিজেদের সেরা ৮ম অবস্থানে রেখে কোচিং ছাড়েন হিয়েরো। এরপর বিশ্বকাপের জন্য স্পেনের কোচ নিয়োগ পান হিয়েরো। সেখানে তেমন সুবিধে করতে পারেননি অবশ্য।

রিয়ালের বর্তমান কোচ সোলারি। ছবি: এএফপি
রিয়ালের বর্তমান কোচ সোলারি। ছবি: এএফপি

সান্তিয়াগো সোলারি:
বর্তমানে কোচদের মাঝে তাঁর নাম আসবে তারই। রিয়াল মাদ্রিদের ডাগ-আউটেই অভিষেক হয়েছে সোলারির। তবে এই আর্জেন্টাইনের কোচিং ক্যারিয়ার শুরু ২০১৩ সাল থেকেই। সোলারি রিয়াল মাদ্রিদ যুব দলের কোচ হিসেবে আছেন সে সময় থেকেই। সর্বশেষ লোপেতেগি বরখাস্ত হওয়ার পর তাঁর ওপরে আস্থা রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ।

খেলোয়াড়ি জীবনের দুই বন্ধু রাউল-গুতি এখন কোচ। ছবি: টুইটার
খেলোয়াড়ি জীবনের দুই বন্ধু রাউল-গুতি এখন কোচ। ছবি: টুইটার

রাউল গঞ্জালেজ:
গ্যালাক্টিকোস বলতে যাঁদের নাম একবাক্যে চলে আসে, তাদের একজন হলেন রাউল। নিউইয়র্কে লা লিগার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর থাকার পর নিজ ক্লাবে ফিরেছেন কোচ হয়ে। বর্তমানে রিয়াল মাদ্রিদ ক্যাডেট ‘বি’ দলের কোচ হিসেবে আছেন রাউল।

গুতি:
রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হওয়ার লড়াইয়ে তাঁর নাম ছিল সামনের দিকেই। রিয়াল মাদ্রিদ অনূর্ধ্ব ১৯ দলকে প্রথমবারের মতো ‘ট্রেবল’-এর স্বাদ এনে দিয়েছেন, যা কিনা কোনো রিয়াল মাদ্রিদ কোচ (বয়সভিত্তিক বা মূল দল) করতে পারেননি। জিদানের বিদায়ের পর গুতি বলেই ফেলেছিলেন, এই দলের কোচ হতে চান তিনি। কিন্তু ভাগ্যে শিকে ছেড়েনি। এখন বেসিকতাসে সেনোল গোমেজের সহকারী হিসেবে আছেন।

কার্লো আনচেলত্তির সঙ্গে ক্লদ ম্যাকেলেলে। ছবি: টুইটার
কার্লো আনচেলত্তির সঙ্গে ক্লদ ম্যাকেলেলে। ছবি: টুইটার

ক্লদ ম্যাকেলেলে:
ক্লদ ম্যাকেলেলেকে বলা হয় গ্যালাকটিকোস ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুল। রিয়াল মাদ্রিদে তাঁর বিদায়ের পরে গ্যালাকটিকোস কোনো শিরোপার দেখা পায়নি। কোচ হিসেবে নাম লিখিয়েছেন তিনিও। কার্লো আনচেলত্তির সহকারী হিসেবে তিনি ছিলেন দুই বছর পিএসজিতে। এরপর কোচ হিসেবে ব্যাস্তিয়াতে গেলেও এক মৌসুমের মাথায় বরখাস্ত হতে হয় তাঁকে। বর্তমানে ইউপেন নামক বেলজিয়ান এক ক্লাবের কোচ হিসেবে আছেন তিনি।

আইতর কারাঙ্কার কোচ হিসেবে সাফল্য অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই। ছবি: টুইটার
আইতর কারাঙ্কার কোচ হিসেবে সাফল্য অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই। ছবি: টুইটার

আইতর কারাঙ্কা:
আইতর কারাঙ্কা নামটি রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের জন্য অপরিচিতই ঠেকতে পারে। ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ দলে খেলেছেন কারাঙ্কা। বাস্ক অঞ্চলের এই খেলোয়াড় কোচ হিসেবে প্রথম নাম লেখান ৩৫ বছর বয়সে। স্পেন অনূর্ধ্ব ১৬ দলের কোচ হিসেবে যোগ দেন কারাঙ্কা। রিয়াল মাদ্রিদে হোসে মরিনহোর থাকাকালীন পুরোটা সময় ছিলেন সহকারী কোচ। সেখান থেকে টানা চার মৌসুম মিডলসব্রোর কোচ ছিলেন কারাঙ্কা। দলটিকে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ করেছেন তিনি। বর্তমানে দ্বিতীয় বিভাগের দল নটিংহাম ফরেস্টের কোচ হিসেবে আছেন কারাঙ্কা।

সকলেই কোচ হওয়ার পেছনে ছুটছেন তা কিন্তু নয়, গ্যালাকটিকোসের দুই বড় তারকা রোনালদো নাজারিও ডি লিমা ও ডেভিড বেকহাম আছেন অন্য পথে। রোনালদো কিনেছেন ক্লাব, রিয়াল ভায়োদিয়াদের একাংশের মালিক এই ব্রাজিলিয়ান। অন্যদিকে ডেভিড বেকহাম নতুন ক্লাব খোলার চিন্তায়। ইন্টার মায়ামি নামে মেজর লিগ সকারে নতুন ক্লাব খুলছেন বেকহাম। ক্লাব সামলানো নয়, ক্লাবের প্রধান হয়ে থাকাটাই তাঁদের কাছে স্বাচ্ছন্দ্যের।

অনেকের শৈশবের এই তারকারা ফুটবল ছেড়েছেন বেশ আগেই। তাঁদের আবার নতুন করে ডাগ আউটে দেখাটা অনেকের কাছেই বিশেষ কিছু। তেমনই রিয়াল মাদ্রিদের গ্যালাকটিকোস—ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের হাতে গড়া দলটির তারকারা ঘুরে ফিরে পেরেজের অধীনেই এসেছেন কোচ হয়ে।