ঢাকা টেস্ট ঢাকা পড়েছে মাশরাফি-সাকিবের নির্বাচনী খবরে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাকিব আল হাসান। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাকিব আল হাসান। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
>কাল থেকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাঁচা-মরার টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ঠিক আগের দিন অর্থাৎ আজ টেস্ট ক্রিকেটে পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের ১৮ বছর। এ দুটিই আজ আলোচনার বিষয় হওয়ার কথা। অথচ সবকিছু ঢাকা পড়েছে মাশরাফি-সাকিবের মনোনয়ন ফরম কেনার খবরে।

কাল রাত থেকেই গুঞ্জনটা শোনা যাচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিতে পারেন বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আজ যখন জানা গেল, আগামীকাল মাশরাফি-সাকিব মনোনয়ন ফরম নিতে পারেন, এ খবরে ঢাকা পড়ে গেছে ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া টেস্টই!

সিরিজ বাঁচানোর মিরপুর টেস্টের আগে বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ কী বলছেন, কিংবা টেস্ট আঙিনায় পা রাখার ১৮ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়ে, সেটির চেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মাশরাফি-সাকিবের সংসদ নির্বাচন-প্রসঙ্গ। মাশরাফি-সাকিবের মনোনয়ন ফরম কেনার খবরে বাংলাদেশ দলের কোনো কোনো খেলোয়াড় কিংবা বিসিবির কর্তাব্যক্তিরা রসিকতা করে এও বলছেন, 'আমিও ফরম কিনতে চাই। ৩০ হাজার টাকা না হয় যাবে, তবুও কিনতে চাই!' জাতীয় দলের স্কোয়াডের বাইরে থাকা এক ক্রিকেটার তো ফেসবুকে এ নিয়ে পোস্টও দিয়েছেন।

টেস্টে বাংলাদেশের ১৮ বছর পূর্তিতে দুপুরে প্রথম আলোর ফেসবুক লাইভে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আকরাম খান। মূল বিষয় যা-ই হোক না কেন, দর্শকদের মূল জিজ্ঞাসা ছিল মাশরাফি-সাকিবের নির্বাচন-প্রসঙ্গে। শুধু দর্শকদের প্রশ্ন? আকরাম খানের মুঠোফোনে নানা জায়গা থেকে ফোন আসছিল বারবার। সবার জিজ্ঞাসা, সত্যি দেশের দুই তারকা ক্রিকেটার মনোনয়ন ফরম কিনছেন?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম বেশ হকচকিয়ে গেছেন এ খবরে। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করছেন। কোথায় কাল থেকে শুরু সিরিজ বাঁচানোর টেস্ট নিয়ে ভাববেন, সেখানে তাঁকে পরিচিতজনের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে সাকিব-মাশরাফির মনোনয়ন ফরম কেনা প্রসঙ্গে।
দুপুরেই একদল সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে আকরাম তাই শুরুতেই শর্ত দিলেন, 'ক্রিকেটীয় বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। কিন্তু মাশরাফি-সাকিববের নির্বাচন প্রসঙ্গে কিছু জানতে চাইবেন না প্লিজ। এটা নিয়ে বলার দায়িত্ব আমার নয়। তা ছাড়া আপনাদের মতো আমিও শুনছি। শ্রোতামাত্র।'

দর্শক, খেলোয়াড়, বিসিবি পরিচালক কিংবা বিসিবির কর্তা, সবার মুখে মুখে আজ মাশরাফি-সাকিবের মনোনয়ন ফরম কেনার প্রসঙ্গটি ঘুরেফিরে আসছে। সত্যি তাঁরা নির্বাচন করবেন? নির্বাচন করলে খেলার কী হবে? ধরা গেল, মাশরাফি বিশ্বকাপ খেলেই অবসরে যাবেন, সাকিবের তো এখনো ক্যারিয়ারের অনেকটা পথ বাকি। এখনই কেন তিনি রাজনীতি করতে আসছেন? মাশরাফি যদি নড়াইল থেকে নির্বাচন করেন, সাকিব কোন আসন থেকে দাঁড়াবেন? যদিও-বা সাকিব প্রথম আলোকে জানিয়েছেন মাগুরা-১ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। 

মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ কেমন করবে, এটির চেয়ে সবার কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর। জানা গেল, মাশরাফি-সাকিবের মনোনয়ন ফরম কেনার প্রসঙ্গটি বিস্তারিত জানতে সহকর্মীদের ফোন দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও।
মাশরাফি-সাকিব, দুজনই যদি রাজনীতিতে আসেন ক্রিকেটে তাঁদের পূর্ণ মনোযোগ থাকবে কি না, কিংবা এতে বাংলাদেশ দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না, সেটিও ভাবাচ্ছে অনেককে। তবে এ প্রসঙ্গে বরাবরের মতো এবারও মুখে তালা দিয়ে রেখেছেন দুই তারকাই। যদিও আগামীকাল দুজনই মনোনয়ন ফরম কিনবেন কিংবা তাঁদের পক্ষ থেকে কেনা হবে বলে খবর ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।
বিসিবির কেউ তো বটেই, সাবেক ক্রিকেটারদেরও অনেকে এ নিয়ে পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করতে চাইলেন না। ক্রিকেট মাঠে সক্রিয় থেকে রাজনীতি মাঠে নেমে পড়া তাঁদের ক্যারিয়ার এবং দেশের ক্রিকেট কতটা প্রভাবিত করতে পারে, এ নিয়ে তাই বিজ্ঞজনের ধারণা পাওয়া গেল না।