১৮ বছরেও বাংলাদেশ 'অপ্রাপ্ত'

টেস্ট আঙিনায় বাংলাদেশ যেদিন ১৮ বছরে পা দিচ্ছে, সেদিন দলীয় অধিনায়ককে ভাবতে হচ্ছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটা কীভাবে বাঁচানো যায়। ছবি: শামসুল হক
টেস্ট আঙিনায় বাংলাদেশ যেদিন ১৮ বছরে পা দিচ্ছে, সেদিন দলীয় অধিনায়ককে ভাবতে হচ্ছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটা কীভাবে বাঁচানো যায়। ছবি: শামসুল হক
>টেস্ট আঙিনায় বাংলাদেশ ১৮ বছরে পা দিল আজ। ক্রিকেটে কুলীন সমাজে কাটিয়ে দেওয়া ১৮ বছর শেষে কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ?

আকরাম খান বিসিবির যে রুমটায় বসেন, সে রুমের শো-কেসে অনেকগুলো ট্রফি থরে থরে সাজানো। বেশির ভাগ ট্রফিই বাংলাদেশ জিতেছে হয় ওয়ানডেতে না হয় টি-টোয়েন্টিতে। টেস্ট সিরিজ জেতার ট্রফি বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনাপ্রধানের শোকেসে খুঁজে পাওয়া কঠিন।

টেস্ট সিরিজ জিতবে কি, এখনো পর্যন্ত টেস্ট ড্র করতেই তো গলদঘর্ম অবস্থা হয়ে যায় বাংলাদেশের। টেস্ট আঙিনায় বাংলাদেশ যেদিন ১৮ বছরে পা দিচ্ছে, সেদিন কিনা তাদের ভাবতে হচ্ছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটা কীভাবে বাঁচানো যায়! শুরুর দিন থেকে এখনো পর্যন্ত টেস্ট আঙিনায় বাংলাদেশের গল্পটা নিরন্তর হোঁচট খাওয়ার।

১৮ সংখ্যাটা যদি প্রাপ্ত বয়সে পদার্পণের প্রতীক হয়ে থাকে, ক্রিকেটের কুলীন সমাজে বাংলাদেশ কি প্রাপ্তবয়স্ক হতে পেরেছে? প্রথম ১৮ বছরে অন্য টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর সাফল্যের পরিসংখ্যান দেখলে বাংলাদেশ আছে সবার তলানিতে। ১০৯ টেস্টে জিতেছে মাত্র ১০টি, ১৬ ড্র আর হার ৮৩ ম্যাচে। সাফল্যের হার ১৬.৫%।

অনুজ্জ্বল পরিসংখ্যান-রেকর্ড জেনেই বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ নির্জলা সত্যটাই জানালেন আজ সংবাদ সম্মেলনে, ‘যদি ফলাফল হিসাবে করে দেখেন, তাহলে হয়তো অতটা প্রাপ্তবয়স্ক হতে পারিনি! টেস্ট ক্রিকেট আপনাকে অনেক বেশি খেলতে হবে, তবেই আপনি ফলটা পাবেন। অন্য সংস্করণে যেভাবে ভালো খেলছি, ছন্দটা ধরতে পেরেছি, টেস্টে হয়তো সেটা পারছি না। কিছু ম্যাচে আমরা ভালো করেছি, কিছু ম্যাচে আবার বাজে করেছি। এটা থেকে বের হওয়া দরকার, বের হতেই হবে। টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের তিন বিভাগেই পারফরম্যান্সে শৃঙ্খলা থাকতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে আপনাকে জুটি গড়তে হবে, ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে। তাহলে ফলাফল পক্ষে আসবে।’

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ছন্দ ধরতে পারার যে কথাটা বললেন মাহমুদউল্লাহ, টেস্টে কেন সেটি হচ্ছে না? ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শৃঙ্খলার কথাটাই আরেকবার বললেন, ‘আমার কাছে মনে হয় শৃঙ্খলার অভাবের কারণেই এমনটা হচ্ছে। যেটি আমি আগেই বললাম, টেস্ট ক্রিকেটে মনোযোগ সে রকম পর্যায়ে থাকতে হবে। তা না হলে ভালো করার সুযোগ কমে যায়। টেস্টে আরও ধৈর্য নিয়ে খেলতে হবে।’

টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে হলে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উন্নতির বিকল্প নেই। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নতি হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেটের খুব একটা দায় দেখেন না, ‘জাতীয় লীগে আমার মনে হয় ব্যাটসম্যানেরা সবাই কম-বেশি রান করছে। বোলাররাও উইকেট পাচ্ছে। জাতীয় লীগের কথা যদি বলি, আমার মনে হয় ভালো ক্রিকেটই হচ্ছে। আপনি যেকোনো জায়গায় খেলেন না কেন, যদি গলির ক্রিকেটেও সেঞ্চুরি করেন, সেটাও কঠিন। এটি এত সহজ নয়। আপনি যেখানেই সেঞ্চুরি কিংবা ডাবল সেঞ্চুরি করেন সেটা সহজ নয়। আমার মনে হয় এখানে ঘরোয়া লিগের কোনো অজুহাত দেওয়া যাবে না। টেস্ট ক্রিকেটের ধাঁচটি কখনো কখনো ধরতে পারি, তখন আমরা ভালো ছন্দে থাকি। আবার যখন এদিক-সেদিক হয় তখন আবার আমরা নিজেদের গুটিয়ে ফেলি। এই বিষয়গুলোর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। একটাই উত্তর, ধারাবাহিক হতে হবে। ধারাবাহিকভাবে আমাদের ভালো করতে হবে।’