১৫ মিনিটেই হ্যাটট্রিক বিশ্বকাপ তারকার!

কলিন্দ্রেসের সঙ্গে একই ফ্রেমে থাকার চেষ্টা বসুন্ধরার সবার। সৌজন্য ছবি
কলিন্দ্রেসের সঙ্গে একই ফ্রেমে থাকার চেষ্টা বসুন্ধরার সবার। সৌজন্য ছবি
কলিন্দ্রেসের হ্যাটট্রিকে বিজেএমসিকে ৫-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে বসুন্ধরা কিংস।


বিশ্বকাপ তারকাদের গোল করার ক্ষমতা তো এমনই হয়। 

বল পায়ে দুর্দান্ত গতিতে ছুটে যাচ্ছেন। পেছন পেছন দৌড়াচ্ছেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা, গোলরক্ষক পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসে ছোট করে দিয়েছেন গোলমুখ। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে ঠিকই বলটি জড়িয়ে দিলেন জালে। কোস্টারিকার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা তারকা ডেনিয়েল কলিন্দ্রেসের সৌজন্যে আজ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এমন দৃশ্য দেখা গেল দুইবার। আর হ্যাটট্রিকের প্রথম গোলটি করেছেন গোলমুখ থেকে টোকা দিয়ে। ১৫ মিনিটের মধ্যে কলিন্দ্রেসের হ্যাটট্রিক হয়ে গেল। সে সুবাদেই বিজেএমসিকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে উঠেছে বসুন্ধরা কিংস।

ঢাকায় পা রাখার পর থেকেই কলিন্দ্রেস জ্বরে ভুগছিল দেশের ফুটবল প্রেমীরা। বঙ্গবন্ধুতে অভিষেকটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। মোহামেডানের বিপক্ষে ৫-২ গোলে জয়ের ম্যাচে নিজে করেছিলেন এক গোল, করিয়েছিলেন তিন গোল। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে শেখ জামাল ও নোফেল স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে ছায়া হয়েই ছিলেন বিশ্বকাপ তারকা। আজ যেন সব সুদে আসলে শোধ করার পণ নিয়েই নেমেছিলেন। না হলে কি আর হ্যাটট্রিক করতে সময় নেন মাত্র ১৫ মিনিট! জয়ীদের বাকি দুটি গোল করেছেন বদলি স্ট্রাইকার তৌহিদুল আলম সবুজ ও মতিন মিয়া।

কলিন্দ্রেস গোলের খাতা খুলেছেন দুই মিনিটেই। বাম প্রান্ত থেকে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ক্রস বিজেএমসি গোলরক্ষক আবুল কাশেম মিলন পাঞ্চ করলে ফিরতি বলে টোকা দিয়ে জালে জড়িয়েছেন। ৮ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি গতি, বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও ঠান্ডা মাথার রসায়নে। বিজেএমসির দুই সেন্টারব্যাক ক্যামেরুনের বায়েবেক ও উজবেকিস্তানের ফুরকাত জনের ওপর দিয়ে এরিয়াল থ্রু দিয়েছিলেন সতীর্থ গোটর, পেছন থেকে দৌড়ে গিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে আসা গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে জালে। ১৫ মিনিটের গোলটিও দুর্দান্ত। মাসুক মিয়া জনির সঙ্গে এরিয়ালে ওয়ান টু ওয়ান করে গোলমুখ খুলে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ৩-০।

১৫ মিনিটের মধ্যেই ৩-০, ম্যাচটা তো ওখানেই শেষ। তবে আর গোল হজম করা যাবে না, এই লক্ষ্যে এক ফরোয়ার্ড তুলে সেন্টারব্যাক জহিরুল আলমকে নামিয়ে রক্ষণভাগে বাড়তি পাহারা বসিয়েছিলেন বিজেএমসি কোচ। প্রথমার্ধের বাকি সময়টা পাহারা দিয়ে রাখা গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে আর বাধ মানল না। মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সৌজন্যে বদলি নেমে একটি করে গোল করে মাঠ ছাড়লেন সবুজ ও মতিন।

হ্যাটট্রিক করে ম্যাচের নায়ক কলিন্দ্রেস। তিনটি গোল করিয়ে পার্শ্ব নায়ক উইঙ্গার ইব্রাহিম। দলে ইব্রাহিম ও মাহবুবুর রহমান সুফিলের মতো দ্রুত গতি ও স্ট্যামিনা সম্পন্ন ফরোয়ার্ড থাকায় আজ ৩-৫-২ ফরমেশনে দলকে খেলালেন অস্কার ব্রুজোন। দুই প্রান্ত দিয়ে ফর্মুলা ওয়ানের গতিতে আক্রমণে উঠেছেন ও ট্র্যাক ব্যাক করেছেন ইব্রাহিম ও সুফিল। বাড়তি প্রশংসা বরাদ্দ রাখতে হবে বাম প্রান্তে খেলা ইব্রাহিমের জন্য। কলিন্দ্রেসের প্রথম গোলটি ছাড়াও সবুজ ও মতিনকে দিয়ে করিয়েছেন দুটি গোল। তাঁর পা থেকে আসা ক্রসেই ৭০ মিনিটে ৪-০ করেছেন সবুজ। নয় মিনিট পরেই তাঁর দুর্দান্ত ক্রসে ফ্লাইং হেডে ৫-০ করেছেন মতিন। ক্লিন শিট রেখে বড় জয়ের পথেই এগিয়ে যাচ্ছিল নবাগত বসুন্ধরা। ৮৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান কমিয়েছেন স্যামসন ইলিয়াসু।

আজকের লড়াইটা এমন একপেশে নাও হতে পারত। যদি আগের ম্যাচে ব্রাদার্সের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা উজবেক ফরোয়ার্ড ওতাবেক মাঠে থাকতেন। দুই হলুদ কার্ডের খড়্গে পড়াই আজ মাঠে নামা হয়নি তাঁর। ফলে একাই ছড়ি ঘোরালেন কলিন্দ্রেস। আগামী ২০ নভেম্বর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে সেমিফাইনালে লড়বে তারা।